সারাদেশ

দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে গৃহবধূর অবস্থান

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় স্ত্রীর দাবি নিয়ে তিনদিন ধরে সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান করছেন ফাতেমা বেগম (৩৩) নামে এক গৃহবধূ।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্বামীর বাড়িতে গেলে স্বামী আবুল কাশেম বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায়।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১২ বছর আগে উপজেলার তুরুক বাড়িয়া গ্রামের মৃত শুক্কুর আলীর ছেলে আবুল কাশেমের সঙ্গে নওগাঁ সদর উপজেলার পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের সোলায়মান সরদারের মেয়ে ফাতেমা বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল তাদের সংসার। এর মধ্যে দুই সন্তানের মা হন ফাতেমা বেগম। এরপর জীবিকার তাগিতে প্রায় ১০বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমান আবুল কাশেম।

বিদেশে থাকাকালীন সময়ে সাংসারিক খচর নিয়মিত দিতেন আবুল কাশেম। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে কোনো খরচ দেন না। এক পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। যে কারণে সন্তানদের নিয়ে ফাতেমা বেগম বাবার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন।

কয়েকদিন আগে বিদেশ থেকে আবুল কাশেম বাড়িতে ফিরলে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আসলে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যান স্বামী আবুল কাশেম। এরপর থেকে স্ত্রীর অধিকার ফিরে পেতে দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে অবস্থান শুরু করেন ফাতেমা বেগম।

স্থানীয় প্রতিবেশী মোর্শেদা বেগম বলেন, ফাতেমা তার দুই সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ির সামনে বসে থাকেন কখন স্বামী আসবে কিন্তু তার স্বামী আবুল কাশেম বাড়িতে তালা মেরে চলে গেছে কোথায় গেছেন কেউ জানে না। আমি কয়েকবার বলেছি, এমন আচারণ কেন করছিস সন্তানদের নিয়ে সংসার কর কিন্তু কোনো উত্তরই দেয় না। মেয়েটা দুই সন্তানকে অনেক অসহায় হয়ে পড়েছে।

ফাতেমা বেগমের মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মরিয়ম আক্তার বলেন, আব্বু এমন করছেন কেন। বিদেশ থেকে আসার পর আমরা বাসায় এসেছি তবুও আব্বু একটু কথা না বলে বাসায় তালা দিয়ে চলে গেছে। আমরা এখন কি করব। আমরা আব্বুর সঙ্গে থাকতে চাই।

ফাতেমা বেগম বলেন, স্বামীর বাড়িতে আসলে আমার স্বামী তালা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। সে বলে, বিদেশ থাকতে না কি আমাকে তালাক দিয়েছে। কিন্তু আমি তার কোনো কাগজ আমি আজও হাতে পাইনি। তাহলে তালাক হলো কিভাবে। শ্বশুর শাশুড়ি বেঁচে নেই। আমার স্বামীর এক ছোট ভাই আছে সেও মানুষিক ভারসম্যহীন কখন কই থাকে আমরা জানি না। এ অবস্থায় আমি কার কাছে সাহায্য চাইব?

তিনি বলেন, আমি আমার স্বামীর অধিকার চাই। আমার স্বামীকে ডিভোর্স দেইনি, তাই আমার অধিকার আছে। আমার স্বামীকে ফিরে পেতে চাই। কেন সে এমন করছে কিছুই জানি না। সমাধান না পেলে দুই সন্তান নিয়ে আত্মহত্যা করব।

এ বিষয়ে কথা হলে ফাতেমা বেগমের স্বামী আবুল কাশেম জানান, ফাতেমার চরিত্র ভালো নয়, আমার অনেক টাকা-পয়সা সে নষ্ট করেছে। তার সঙ্গে আর ঘর সংসার করার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই। বিদেশে থাকাকালীন সময়ে কাজীর সঙ্গে পরামর্শ করে দুই বছর আগেই তালাক দিয়েছি। তবে তালাকের কাগজ হয়তো ফাতেমা গ্রহণ করেনি। সে জন্য অস্বীকার করছে। এখন কাবিননামার বিষয়ে সময় নিয়ে বসে ফয়সালা করা হবে।

কাশেম বলেন, অনেকদিন ধরে আমার বাসায় না থাকার কারণে ঘরটি সংস্কারের প্রয়োজন। তাছাড়া আমি যেহেতু আবার বিদেশে চলে যাব তাই আমার বাসায় না থেকে অন্যখানে আপাতত থাকছি।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন জানান, ফাতেমা থানায় এসেছিল। তারপর বিষয়টি নিয়ে ফাতেমার স্বামীকে ফোন দিয়েছিলাম। তখন তিনি বলেন, আমার বাসায় উঠলে উঠুক আমি তো বাধা দিইনি। তবে আমি তাকে তালাক দিয়েছি। তারপর ফাতেমাকে আদালতে গিয়ে উকিলের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিই।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button