মিসরে দ্বিতীয় দিনের বিক্ষোভেও সংঘর্ষ
মিসরে শনিবার রাতে দ্বিতীয় দিনের মতো দেশটির স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। প্রায় দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী বন্দরনগরী সুয়েজে সিসির পদত্যাগ দাবিতে রাজপথে গর্জে ওঠেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী।
এর আগে শুক্রবারের বিক্ষোভ দমনেও কোথাও কোথাও পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে। খবর এএফপি ও বিবিসির। সিসির শাসনে অতিষ্ঠ হয়ে দেশটির হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে ক্রমান্বয়ে সহিংস হয়ে উঠছে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন, কারাবন্দি ও প্রতিবাদ কর্মসূচির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন সাবেক এ সেনাপ্রধান।
শুক্রবার কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী তাহরির স্কয়ারে জড়ো হন। ২০১১ সালের গণঅভ্যুত্থানে এ চত্বরের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। কায়রোর পাশাপাশি আলেকজান্দ্রিয়া ও সুয়েজেও সিসি সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে। ২০১৪ সালে সিসির হাতে শাসনভার যাওয়ার পর সরকারবিরোধী এ ধরনের প্রথম বিরল বিক্ষোভ হয়েছে। আন্দোলনকারীরা ‘সিসি সরে যাও’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন।
টিয়ার গ্যাসের ঝাঁজ শহরের কয়েক কিলোমিটার দূরের বাসা বাড়িতে পর্যন্ত পৌঁছেছে বলে অপর এক নারী জানিয়েছেন। এ নারী বলেছেন, আমার নাক প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া করছিল। বাসার ব্যালকনি থেকেও এর ঝাঁজ পাওয়া গেছে। আমি দেখেছি অনেক তরুণ-তরুণী রাস্তা থেকে দৌড়ে পালাচ্ছেন।
মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের সূত্র ধরে ২০১৩ সালে সিসি নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী তৎকালীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপর থেকে বিরোধীদের ওপর তীব্র দমন-পীড়ন চালিয়ে সিসিই নজিরবিহীভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন।
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর আইন করে বিক্ষোভ কার্যত নিষিদ্ধ করে জেনারেল সিসি সরকার। স্পেনে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা মিসরীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনার সপ্তাহ দুয়েক পর মিসরে এ বিক্ষোভের সূচনা।
অনলাইনে পোস্ট করার সিরিজ ভিডিওতে আলী লাখ লাখ মিসরীয়কে দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে প্রেসিডেন্টের বিলাসবহুল বাসভবন এবং হোটেলের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার অপচয়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে সিসি এসব অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও অপবাদ’ আখ্যা দিয়ে সেগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এদিকে সিসির পদত্যাগের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ থেকে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। শনিবার এক বিবৃতিতে আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। রোববার এ খবর দিয়েছে আলজাজিরা।
এইচআরডব্লিউ’র বিবৃতিতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অধিকারের সুরক্ষা দিতে মিসর সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, শুক্রবার রাতের বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৭৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউ’র মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক মাইকেল পেজ বলেন, প্রেসিডেন্ট সিসির নিরাপত্তা বাহিনী আবারও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বানচালের জন্য নৃশংসতার আশ্রয় নিয়েছে।
মাইকেল পেজ বলেন, মিসরীয় কর্তৃপক্ষের এটি স্বীকার করা উচিত যে, পুরো দুনিয়া এটি দেখছে। তাদের উচিত অতীতের সব নিপীড়নের পুনরাবৃত্তি এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।