সারাদেশ

উৎপাদনে যাচ্ছে কয়লা ভিত্তিক পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র

সোলায়মান পিন্টু,কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি ।। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদনে যাবে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মানাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ প্রকল্পের কাজ ৮৮ ভাগ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। আর ২০২০ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু করা হবে এমন লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই দিন রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন চীন ও বাংলাদেশী প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শ্রমিক। আপতত: এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে। উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া এলাকায় প্রায় ১০০২ একর ভূমির উপর দুই বিলিয়ন ডলারের অধিক ব্যয়ে পরিবেশ বান্ধব কয়লা ভিত্তিক এ পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হচ্ছে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পুরনে এটি হবে একটি মাইল ফলক এমন অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এন্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি), চায়না যৌথভাবে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে। ২০১৯ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শ্রমিক অসন্তোষের জেরসহ বিভিন্ন অনাকাংখিত ঘটনা ঘটার ফলে কিছুটা পিছিয়ে যায়। এসব কাটিয়েও এ বছরের ডিসেম্বরে এ বিদ্যুৎ প্লান্টের প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বানিজ্যিক ভাবে উৎপাদিত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর বাকি ৬৬০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ ২০২০ সালে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই লক্ষ্য মাত্রাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রকল্পের সমস্ত কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। সম্পন্ন করা হয়েছে ইউনিট-১ ও ২ এর টারবাইন-জেনারেটর বসানোর কাজ। বয়লার ইউনিট-১ এর হাইড্রোটেস্ট এবং ইন্সুলাশানের কাজও প্রায় শেষের দিকে। বয়লার ইউনিট-২ এর কাজ চলমান,ইউনিট-১ এর ইন্সুলাশান ও প্রেসিপিটেটরের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের মালামাল লোড আনলোডের জন্য জেটি’র কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে অনেক আগেই। এছাড়া সম্পন্ন করা হয়েছে ওয়াটার ইন্টেকের কাজ। কোল ডোম,কুলিং টাওয়ার,পানি পরিশোধন প্লান্ট,কনভেয়ার বেল্ট, প্লান্টের বিভিন্ন মটরের প্রি-কমিশন, ডিসিএস সিস্টেমের কমিশনিং এবং জি আই এস’র শেষ দিকের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজে বর্তমানে প্রায় ২৬০০ চাইনিজ ও ৫৫০০বাঙ্গালী শ্রমিক কাজ করছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় চলছে মহা কর্মযজ্ঞ। আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দিন রাত কাজ করছেন দেশী বিদেশী শ্রমিকরা। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে এমভি জিংহাইটন নামের একটি কয়লাবাহী জাহাজ পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে কয়লা খালাস করেছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্র জানায়, কয়লা ভিত্তিক পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আনার জন্য কোরিয়ার একটি কোম্পানির মাধ্যমে ৪০০ কেভি এবং চীনের একটি কোম্পানির মাধ্যমে ২৩০ কেভির লাইন নির্মাণ কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে। এই প্লান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ গোপালগঞ্জের সাবস্টেশনে যুক্ত হবে। সেখান থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে।
প্রকল্পের সহকারী ম্যানেজার শাহ মনি জিকো জানান, এ প্রকল্পের কাজ দ্রæতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশে যে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে তার বেশীর ভাগ বিদুৎ সরবরাহে এ পাওয়ার প্লান্ট বড় ভ‚মিকা রাখবে। ২০২০ সালে এ প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
নির্মানাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক(পিডি) মো.গোলাম মাওলা জানান, ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ প্রথম ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদনে যাবে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাকি ৬৬০ মেগাওয়াট পরিপূর্ন ভাবে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে। এ প্রকল্প সংলগ্ন আরো একটি ১৩২০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট তৈরী হবে। ইতোমধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে এটিও শেষ করা হবে বলে তিনি জানান।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button