আইন-আদালতজাতীয়দুর্যোগরাজনীতি

এনু-রুপনের বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ, সম্পদ শতকোটি টাকা ছাড়াতে পারে * ৩৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই মিলেছে ৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা

গেণ্ডারিয়ার দুই আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দুটি মামলা করেছে। বুধবার সংস্থাটির ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

এ দুই ভাইয়ের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করার ১ মাস পর মামলা করল দুদক। এর আগে র‌্যাব তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও অস্ত্র আইনে তিন থানায় ৭টি মামলা করে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেছেন, অনুসন্ধানে দুই ভাইয়ের ৩৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়ায় মঙ্গলবার কমিশনের সভায় মামলার অনুমোদন দেয়া হয়। দুদক সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এনু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপনের অবৈধ আয়ের পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এনামুল হক এনুর বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। তিনি মামলায় এনু ছাড়াও এনুর বন্ধু হারুন অর রশিদ ও কর্মচারী আবুল কালাম আজাদকে আসামি করেছেন। এজাহারে বলা হয়েছে, এনু ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এ অবৈধ অর্থ অর্জনে সহায়তা করেছেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ ও হারুন অর রশিদ।

এজাহারে বলা হয়েছে, এনুর আয়কর নথি, গণমাধ্যমের সংবাদ ও গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এনুর বৈধ আয়ের কোনো উৎসই নেই। ক্যাসিনো থেকে আসা অর্থ দিয়েই তিনি প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি বিদেশেও বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য আছে।

অন্যদিকে, দুদকের আরেক সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী বাদী হয়ে রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যে মামলা করেন তার এজাহারে বলা হয়েছে, রুপন অসৎ উদ্দেশ্যে অবৈধ পন্থায় নামে-বেনামে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

সর্বশেষ ২০১৯-২০ করবর্ষে তার দাখিল করা আয়কর রিটার্নেও কোনো স্থাবর সম্পদের তথ্য দেননি। তবে ব্যবসার পুঁজি বাবদ ২ কোটি ৬২ লাখ ২৮ হাজার ৮৫২ টাকাসহ ৩ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ৯১১ টাকার অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দিয়েছেন।

এর মধ্যে ব্যবসার পুঁজি এবং ‘এনু রুপন স্টিল কর্পোরেশন’র শেয়ার বাবদ প্রদর্শিত ২ কোটি ৭১ লাখ ৮২ হাজার ৪৮১ টাকা অর্জনের সপক্ষে কোনো বৈধ আয়ের উৎস দেখাননি। এটা তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

অনুসন্ধানের সময় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে পাওয়া তথ্য ও রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৫টি অ্যাকাউন্টেই ৮ কোটি ৭৩ লাখ ৯৭ হাজার ১০১ টাকার খোঁজ পাওয়া যায়। এসব তিনি আয়কর রিটার্নে দেখাননি। এর কোনো বৈধ উৎসও নেই। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে রুপনের বাসা থেকে নগদ ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ টাকা এবং ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৫ হাজার ১৬৩ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়।

এরও বৈধ উৎস পায়নি দুদক। সব মিলিয়ে রুপনের ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এজাহারে বলা হয়েছে, গোপন সূত্রে দুদক জেনেছে, রুপন ভূঁইয়া তার অবৈধ অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে একাধিক প্লট, বাড়ি ও ফ্ল্যাট করাসহ দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তদন্তে এসব তথ্য পাওয়া গেলে তা আমলে নেয়া হবে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, সংক্ষিপ্ত অনুসন্ধানের পর মামলা দুটি রুজু হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের মাধ্যমে চার্জশিট দেয়া হবে। তদন্তে তাদের অন্যান্য সম্পদের তথ্যও উঠে আসবে। যা টাকার অংকে শতকোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এদিকে এ দু’জনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের আরও দুটি মামলা করতে যাচ্ছে দুদক। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় এনু-রুপনের স্ত্রীদেরও আসামি করা হতে পারে। ২৪ সেপ্টেম্বর এনু-রুপনের বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে টাকা ও গহনা জব্দ করার পর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনুর বন্ধু হারুন অর রশিদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, ৮ কেজি স্বর্ণালঙ্কার ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে র‌্যাব।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button