অর্থনীতি

হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে চিনি শিল্প করপোরেশনের লোকসান

প্রতি বছর বাড়ছে বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশনের লোকসানের পরিমাণ। গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) করপোরেশনের ১ হাজার ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হয়। তার আগের অর্থবছরে (২০১৭-১৮) লোকসান হয়েছিল ৮৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ তথ্য করপোরেশনের হিসাব শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এদিকে চলতি মাড়াই মৌসুমে (২০১৯-২০) করপোরেশনের ১৫টি চিনিকলে ১ লাখ ২৫ হাজার টন চিনি উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। আখ মাড়াই করা হবে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। চিনি রিকভারি হার ধার্য করা হয়েছে শতকরা ৮ ভাগ। গত মাড়াই মৌসুমে ১১ লাখ ৮২ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৬৯ হাজার মেট্রিক টন চিনি উত্পাদিত হয়েছিল। চিনি রিকভারির হার ছিল ৫ দশমিক ৮৩ ভাগ।

চিনিকলগুলো হচ্ছে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, সেতাবগঞ্জ, শ্যামপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নর্থ বেঙ্গল, নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, দর্শনা (কেরু), মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর ও জিলবাংলা। দেশে কৃষিভিত্তিক বৃহত্ শিল্প হচ্ছে চিনি শিল্প। অনেক দিন ধরে এ শিল্প সংকটের মধ্য দিয়ে চলেছে। নিয়মিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতন পান না। দুই মাসের বেতন বাকি পড়েছে।

এদিকে মিলগুলোর গুদামে ১৮ কোটি ৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের ৩২ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন চিনি মজুত রয়েছে। করপোরেশনের প্রতি কেজি চিনির দাম ৫৫ টাকা। অর্থাত্ প্রতি টনের দাম ৫৫ হাজার টাকা। বাজারে বেসরকারি মিলগুলোর চিনির দাম কম। তাছাড়াও দেশে উত্পাদিত চিনির ক্রেতা কম। ফলে চিনির মজুত রয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে মিলগুলোতে উত্পাদন শুরু হতে যাচ্ছে। চিনি কলগুলোর প্রধান কাঁচামাল আখ। আখ এক বছরের ফসল। চাষিরা জানায়, এখন আর আখ চাষ করে লাভ হয় না। চাষিরা অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছে। মিলগুলো চাহিদামতো আখ পায় না। এ ছাড়াও মিলগুলোতে আখ বিক্রি করে টাকার জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয় চাষিদের। এ কারণেও চাষিরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বছরে মাত্র ৩ মাস মিলগুলো চালু থাকে। বাকি ৯ মাস বন্ধ থাকে। চিনির পাশাপাশি অন্য পণ্য উত্পাদন করা গেলে লোকসান কমিয়ে আনা যাবে বলে করপোরেশনের কর্মকর্তারা মনে করেন।

চিনির উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নির্ভর করবে আখের প্রাপ্যতার ওপর। মিলগুলো চাষিদের কাছ থেকে ১৪০ টাকা দরে আখ ক্রয় করে থাকে। অপরদিকে গুড় তৈরিকারকরা এর চেয়ে বেশি দামে চাষিদের কাছ থেকে নগদ টাকায় আখ কিনে থাকে। এ কারণে আখের একটি বড়ো অংশ গুড় তৈরিতে চলে যায়। মাসখানেক আগে গুড় তৈরি শুরু হয়ে গেছে। বাজারে চিনির চেয়ে গুড়ের দাম বেশি। এক কেজি গুড় বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। আর খুচরা প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৫৭ টাকা দরে। গুড় তৈরি লাভজনক। এ কারণে অনেকে গুড় তৈরিতে ঝুঁকছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button