জাতীয়রাজনীতিলিড নিউজ

সাদকে মহাজোটের প্রার্থী মানছে না তৃণমূল

রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থীরা পুরোদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রার্থীরা যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোট পেতে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালালেও আওয়ামী লীগ তা মানতে নারাজ।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, লাঙ্গলের প্রার্থীর এমন বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। নৌকার প্রার্থী রাজনৈতিক কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। লাঙ্গলের প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি কোনো পর্যায়ে।

কথা হয় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় ধন্যবাদ জানাই। তাদের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করা মানেই সাদ এরশাদ জাতীয় পার্টির প্রার্থী হলেও জোটের প্রার্থী হয়ে গেছেন। নির্বাচনী লড়াইয়ে জোটের প্রার্থী হিসেবে সাদ এরশাদ নির্বাচন করছেন। তাই জাতীয় পার্টি সাদ এরশাদকে জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটির সভাপতি সাফিউর রহমান সাফি বলেন, সাদ এরশাদ মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নয়, জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। সাদ এরশাদকে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে। সাদ এরশাদকে যারা মহাজোটের প্রার্থী বলছেন তারা অপ্রচার চালাচ্ছেন।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সোমবার অ্যাডভোকেট রেজাউল করীম রাজু দলের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। ফলে নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির সাদ এরশাদ, বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, এনপিপির শফিউল আলম, গণফ্রন্টের কাজী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডলসহ ৬ জন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে সাদ এরশাদ (জাতীয় পার্টি), রিটা রহমান (বিএনপি) ও হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফের (স্বতন্ত্র প্রার্থীর) মধ্যে।

এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ বুধবার নগরীর অর্জন মোড়, চকবাজার, কামারটারী, বাসটার্মিনাল, গণেশপুর ও কামাপাড়ায় গণসংযোগ ও পথসভা করেছেন।

এ সব প্রচারে আসিফের বক্তব্য ছিল রংপুরের মানুষের কাছে এরশাদ পরিবারের অনেক ঋণ আছে। আমি তার অবর্তমানে সেই ঋণ শোধ করতে নির্বাচনে নেমেছি। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আপনাদের সন্তান আমার বড় আব্বা এরশাদকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে ফাঁসি দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি।

রংপুরবাসী কারারুদ্ধ এরশাদকে ৫টি আসনে নির্বাচিত করে নজির সৃষ্টি করেছিল। আজকে তার অবর্তমানে আপনাদের সে ঋণ শোধ করার সময় এসেছে। আমি সেই ঋণ শোধ করতেই আপনাদের কাছে একটি ভোট প্রার্থনা করছি।

আমি নির্বাচিত হলে বর্তমান মহাজোট সরকার উন্নয়নের যে পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমি সেই ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। এরশাদ সেই স্বপ্ন নিয়েই সরকারের সঙ্গে কাজ করছিলেন। তার মৃত্যুর পর আমি সেই অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে চাই।

এদিকে বিকাল ৪টায় সাদ এরশাদ দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে চন্দনপাট ও সদ্যপুষ্করণী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রচারে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে দেখা যায়নি। বিগত নির্বাচনী প্রচারে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সমাবেশে যে জনস্রোত দেখা যেত তাও চোখে পড়েনি।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনী হাওয়া সেভাবে লাগেনি এখনও। জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীদের জাগিয়ে তুলতে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তারা নির্বাচনী প্রচারে বক্তব্য দিতে গিয়েও হোঁচট খাচ্ছেন। প্রচারে থাকা দলের অন্য নেতাদেরকে মাঝেমধ্যেই বক্তব্য দেয়ার সময়ও সাদ এরশাদকে শুদ্ধ করে কথা বলতে সহযোগিতা করতে দেখা যায়।

কথা হয় জাতীয় পার্টির মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সচিব এসএম ইয়াসিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রংপুরের মানুষের চাওয়া-পাওয়া উপেক্ষা করে সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেয়ার পরও এরশাদ পরিবারের সাবেক এমপি ও এরশাদের ভ্রাতুষ্পুত্র হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় জাতীয় পার্টি কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। শেষ পর্যন্ত তার নির্বাচনী প্রচার কোন মাত্রায় পৌঁছায় তার ওপর নির্ভর করছে সাদ এরশাদের জয়-পরাজয়।

তিনি বলেন, আসিফ এরশাদের পরিবারের সদস্য হিসেবে একবার এমপি হয়েছিলেন, তাকে এরশাদের পরিবারের সন্তান বলেই ভোটাররা জানেন। সেখানে নতুন করে সাদ এরশাদকে পরিচয় করিয়ে দেয়াটা কষ্টকর আর এরশাদ তার জীবদ্দশায় রংপুরের মানুষের কাছে কোনোদিন সাদ এরশাদকে পরিচয় করিয়ে দেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির একাধিক নেতাকর্মী বলেছেন, দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভের ভোট যদি আসিফের দিকে যায় তা হলে তার ভোটের পাল্লা ভারি হবে। সে ক্ষেত্রে তার জয়লাভ সহজ হবে। আওয়ামী লীগের ক্ষুব্ধ ভোটও স্বতন্ত্র প্রার্থী আসিফের পক্ষে যেতে পারে।

এদিকে বিএনপিও বিপাকে রয়েছে দলীয় প্রার্থী রিটা রহমানকে নিয়ে। রিটা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হলেও ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করায় খুশি হতে পারেনি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ফেসবুকে তাকে নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে দলের রংপুর মহানগর কমটির সাধারণ সভাপতি রইচ আহমেদ বলেন, ‘আমরা যারা দলের জেলায় তৃণমূলে রাজনীতি করি তারা বর্তমান সরকার আমলে জেল-জুলুম-অত্যাচার ভোগ করে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছি। তাদের মধ্যে আমিসহ অন্তত ৫ জন ছিলাম মনোনয়নপ্রত্যাশী। তা উপেক্ষা করে রিটা রহমানকে মনোনয়ন দেয়ায় সবাই হতাশ, ক্ষুব্ধ। ভোটে এর প্রভাব পড়বে বলে আমার শঙ্কা রয়েছে।’

এ পরিস্থিতির মুখে বিএনপির রিটা রহমান বুধবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন। তিনি তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারের বিষয়ে বক্তব্য দেন। রংপুর মহানগরীর শিমুলবাগ কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে বলেন, এতে ফলাফল প্রভাবিত করার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি দাবি করেন, তার স্বামী মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মামলার আসামি ছিলেন না। একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে এই ধরনের অপপ্রচারে নেমেছে। তবে জেলহত্যা মামলায় তার স্বামীকে আসামি হিসেবে গ্রেফতার করা হলেও তার স্বামীসহ ৫ জন উচ্চ আদালতে ২০০২ সালে নির্দোষ হিসেবে মামলা থেকে অব্যাহতি পান। তারপর তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন ধাপ ও সাগরপাড়াসহ পূর্ব গেট এলাকায় গণসংযোগ করেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button