জাতীয়

বিআরটিএ থেকে গাড়ির নিবন্ধন কমেছে ৩৩ শতাংশ

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে টানা ৬৬ দিন বন্ধ ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর। দেশের সড়ক পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যক্রমও থেমে ছিল ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত। সংস্থাটি ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে কয়েকটি সেবা কার্যক্রম শুরু করে। দুই মাসের বেশি সাধারণ ছুটি ও পরে আরো প্রায় দুই মাসের সীমিত পরিসরে সেবা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি চাহিদা কমে যাওয়ায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে মোটরযান নিবন্ধন আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ শতাংশ কমেছে।
বিআরটিএর সারা দেশে যানবাহন নিবন্ধন সম্পর্কিত তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে মোটরযান নিবন্ধন নিয়েছিল আড়াই লাখের বেশি। আর চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে বিআরটিএ থেকে নিবন্ধিত হওয়া মোটরযানের সংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার। আগের বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে মোটরযান নিবন্ধন কমেছে ৩৩ শতাংশ।
নভেল করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে বিআরটিএর ঢাকা মেট্রো এলাকায়। সারা দেশে যত গাড়ি নিবন্ধিত হয়, তার একটা বড় অংশই নিবন্ধিত হয় বিআরটিএ ঢাকা মেট্রোর তিনটি সার্কেল অফিস থেকে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-জুন সময়ে যেখানে ঢাকা মেট্রো এলাকায় প্রায় ৮০ হাজার মোটরযান নিবন্ধন হয়েছিল, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে নিবন্ধন নিয়েছে ৪৭ হাজার মোটরযান। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে বিআরটিএর ঢাকা মেট্রো এলাকা থেকে মোটরযান নিবন্ধন কমেছে ৪০ শতাংশ।
সারা দেশে বিআরটিএ থেকে গাড়ির নিবন্ধনের হার কমে যাওয়ার জন্য চলমান নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে টানা ৬৬ দিন বিআরটিএর সারা দেশের সবগুলো সার্কেল অফিসের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল। ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে সার্কেল অফিসগুলোর পেন্ডিং কাজ নিষ্পত্তি, বিভিন্ন অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপের  (যেমন—রুট পারমিট সনদ, অস্থায়ী মোটরযান চালানোর অনুমতিপত্র, মালিকানা বদলির আবেদন, মোটরযান রেজিস্ট্রেশন সনদ ইত্যাদি) মেয়াদ বৃদ্ধি, মোটরযানের ফিটনেস নবায়ন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের আবেদনপত্র গ্রহণ ও রুট পারমিট নবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়। ৭ জুন থেকে এসব সেবা বিআরটিএর সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে দেয়া শুরু হয়।
তবে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু, ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেস্ট বোর্ডের পরীক্ষা গ্রহণ, ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীদের বায়োমেট্রিক গ্রহণ, মোটরযান মালিকের বায়োমেট্রিক গ্রহণ, ম্যানুয়াল/অফলাইন পদ্ধতিতে মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এসব কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, মূলত সেবা কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ ও পরবর্তী সময়ে সেবা কার্যক্রমের পরিসর সীমিত হয়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ সারা দেশেই মোটরযান নিবন্ধনের পরিমাণ কমেছে।
তবে পরিবহন মালিকরা নিবন্ধন কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিদ্যমান মোটরযানগুলোই ঠিকমতো চালানোর সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে মোটরযান কেনা ও সেটি নিবন্ধন করার প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। বিষয়টি সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বণিক বার্তাকে বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন পরিবহন মালিকরা। দুই মাসের বেশি ব্যবসা বন্ধ ছিল। বর্তমানে বহরে থাকা ৩০ শতাংশের বেশি গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আমরা যেখানে পুরনো গাড়িগুলোই ঠিকমতো চালাতে পারছি না, সেখানে নতুন গাড়ি কেনাটা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত পর্যায়েও গাড়ি কেনার প্রবণতা কমে গেছে। এটাও গাড়ির নিবন্ধন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button