স্বাস্থ্য

ওজন কমানোর কার্যকর উপায় আসলে কোনটি?

ওজন কমানোর জন্যে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তীব্র শরীরচর্চা বা ব্যায়াম অনেক বেশি কার্যকর। এমনটাই দেখা গেছে একটি গবেষণায়। হাই ইনটেনসিভ ইনটারভেল ট্রেনিং বা হিট নামে পরিচিত এই শরীর চর্চার ফলে ওজন কমার হার দীর্ঘ সময়ের ব্যায়মের তুলনায় বেশি।

ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এই গবেষণাটি ৩৬টি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে করা হয়েছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা এই ‘হিট’ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে তাদের ওজন কমার হার অন্যদের তূলনায় ২৮.৫% বেশী।

তবে গবেষকদের মতে এই পদ্ধতি অবশ্য সবার জন্যে উপযোগী নাও হতে পারে। কেননা এটির ফলে উচ্চ রক্তচাপসহ আরো কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব গোইয়াসের একদল গবেষক ৫৭৬ জন পুরুষ ও ৫২২ জন নারীর ফিটনেস ট্রেনিং থেকে নেয়া বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করেন।

ইন্টারভেল ট্রেনিং বা স্বল্প সময়ের ব্যবধান সংক্রান্ত এই ধরনের প্রশিক্ষণকে হৃদযন্ত্রের ব্যায়াম হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যাতে পুনরাবৃত্তিমূলক সংক্ষিপ্ত ব্যবধানে তীব্র শারীরিক কসরত থাকে, আর একেকটি প্রচেষ্টার মধ্যে সময়ের ব্যবধানও কম থাকে।সাইকেল চালনা, সাঁতার, দৌড়ানো এবং বক্সিং বা মুষ্টিযুদ্ধ এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এইভাবে শরীর চর্চার কর্মপন্থার সাথে তুলনা করা হয় তুলনামূলক দীর্ঘসময়ের ব্যায়ামের। যেগুলো অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট স্থায়িত্বের ছিল। যারা এই ইন্টারভেল ট্রেনিং করেছেন তাদের ওজন কমেছে গড়ে ১.৫৮ কেজি, আর যারা দীর্ঘ সময়ের শরীর চর্চার প্রশিক্ষণ করেছেন তাদের গড় ওজন হ্রাস ১.১৩ কেজি।

স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দ্রুত দৌড়ের ইন্টারভেল ট্রেনিং সবচেয়ে বেশী কার্যকর হলেও এতে করে কিছু পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন গবেষকরা। তবে এনএইচএস প্রতি সপ্তাহে সাইক্লিং বা জোরে হাঁটার মতো ১৫০ মিনিটের মাঝারি অ্যারোবিকস এর সুপারিশ করে থাকে। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দ্রুত দৌড়ের ইন্টারভেল ট্রেনিং সবচেয়ে বেশী কার্যকর হলেও এতে করে কিছু পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন গবেষকরা।

স্টিরিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য ও ব্যায়াম বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ড. নেইলস ভোলার্ডের মতে ফলাফলগুলি কিছুটা অনির্দিষ্ট ছিল। কেননা বেশিরভাগ মানুষ দীর্ঘ সময়ের ব্যায়ামেই অধিক ক্যালোরি খরচ করে। এর দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা রয়েছে, প্রথমত, হিট প্রশিক্ষণের পর অধিক পরিমাণে শক্তি ব্যয় হতে পারে, হিট সেশনের পর একদিন পর্যন্ত বিপাক বেড়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত , এই হিট সেশনের পর আপনার ক্ষুধা কমে যেতে পারে।

মি. ভোলার্ডের মতে, তাদের গবেষণায় ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ হরমোনগুলোকে প্রভাবিত হতে দেখা গেছে। তবে এধরনের তীব্র রুটিনের কসরতে দীর্ঘ মেয়াদে কার্যকর হয় কিনা তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। বিবিসির হরাইজন সিরিজের তথ্যচিত্র ‘দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট এক্সারসাইজ’-এ সাত বছর আগে মাইকেল মোজলি এই ‘হিট’ শরীরচর্চার পদ্ধতি সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ২০১২ সালে আমি সপ্তাহে তিনবার এক্সারসাইজ বাইকে বিশ সেকেন্ড করে তীব্র ব্যায়াম করেছি।

আর এর ফলে আমার ইনসুলিন সংবেদনশীলতার উন্নতি ঘটেছে ২৪%। এই অনুষ্ঠানে আমরা আবারো দেখেছি যে, তরুণ এবং অনুপযুক্ত মানুষের ক্ষেত্রে খুবই ভালো ফল লাভ হয়েছে।” তার মতে, সাধারণ ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল শরীর চর্চার পর অতিরিক্ত খাবার অভ্যাস এবং বিশ্রাম নেয়া। লোকেরা হয়তো ৩০ মিনিট ট্রেডমিল এ দৌঁড়ালো, ১২০ কিলো ক্যালোরি খরচ করলো আর এরপর নিজেকে খুশি করতে হয়তো মিষ্টি একটা কেক খেল, এভাবেই বিষয়টার ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন মি. মোজলি। তার মতে, ‘হিট’ পদ্ধতির সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় হলো এটি ক্ষুধাকে দমন করে। তিনি মনে করেন, কতটা ক্যালরি কমানো গেল সেটি মূল বিষয় নয়- মূল ব্যাপার হলো এরপর কি করা হলো।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button