অর্থনীতিআইন-আদালতজাতীয়দুর্যোগলিড নিউজ

মিল্ক ভিটার জমির ৮০ ভাগই বেদখল

সরকারের মালিকানাধীন সমবায় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের (মিল্ক ভিটা) পাঁচ হাজার একর গোচারণ ভূমির মধ্যে চার হাজার একরই বেদখল হয়ে আছে।

এই জমি উদ্ধারে দৃশ্যত কোনো তৎপরতা নেই মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষের। যার কারণে উষ্মা প্রকাশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে মিল্ক ভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।

এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে মিল্ক ভিটাকে পাঁচ হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। বর্তমানে সেই জমি বেহাত। এখন মাত্র এক হাজার একরের মতো জমি তাদের হাতে আছে।

তিনি বলেন, মিল্ক ভিটা ও ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন সময়ে অসাধু লোকজন জমি বরাদ্দ দিয়ে দখল করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ভূয়া কাগজ দেখিয়ে জমি দখল করেছে। এই জমি উদ্ধারের মিল্ক ভিটা কখনো আইনি লড়াইয়ে যায়নি। আমরা এই জমি উদ্ধারে মিল্ক ভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু উপস্থিত না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কমিটি। এ ছাড়াও মিল্ক ভিটার দুর্নীতিবাজ, অদক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই ও বরখাস্তের সুপারিশ করা হয় বৈঠকে।

সম্প্রতি বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে সিসার উপস্থিতির বিষয়েও আলোচনা করা হয় বৈঠকে। এ সময় মিল্ক ভিটার পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিল্ক ভিটার পাস্তুরিত দুধে সহনীয় মাত্রার চেয়ে কম সিসা রয়েছে। মিল্ক ভিটা কয়েকটি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও তুলে ধরেছে।

এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, মিল্ক ভিটার দুধে যেটুকু সিসা পাওয়া গেছে, তা পানি ও খাদ্য থেকে গবাদি পশুর শরীরে গেছে। আমরা এ বিষয়ে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার সুপারিশ করেছি।

মিল্ক ভিটার লাভ বছরে বছরে কমে আসছে উল্লেখ করে কমিটির সভাপতি বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মিল্ক ভিটার মুনাফা হয়েছিল ১১ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই লাভ হয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যদি লাভ বেশি হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক আমলে লাভ কম হচ্ছে কেন? মিল্ক ভিটাকে তাদের মুনাফা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, গত বছর মিল্ক ভিটার দুরবস্থা ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১৪ দফা সুপারিশ দেয়। এগুলো হলো- মিল্ক ভিটা রক্ষায় জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন, গুঁড়াদুধ আমদানির ওপর সর্বোচ্চ করারোপ, প্রান্তিক-ভূমিহীন ও দরিদ্র খামারিসহ দুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত নারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, বেদখল হওয়া গোচারণ ভূমি উদ্ধার, বিশেষ কিছু জমিতে সাধারণ ফসলের বদলে গরুর মানসম্মত ঘাস চাষ ও গরুর প্রজনন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ করা, দুগ্ধ শিল্পসমূহে বিদ্যুৎ ব্যবহারে ক্ষুদ্র শিল্পের আওতায় বাণিজ্যিক বিল থেকে রেহাই দেয়া।

সূত্র জানায়, এই সুপারিশের বিষয়ে মিল্ক ভিটার বেশিরভাগ কর্মকর্তা এখনও অবহিত নন। এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি জানান, এই সুপারিশ বাস্তবায়নে মিল্ক ভিটা এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই সুপারিশ করে। এ সব সুপারিশ বাস্তবায়নে মিল্ক ভিটাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button