স্বাস্থ্য

পায়ুপথে ব্যথার কারণ….

মলদ্বারে বা পায়ুপথে নানাবিধ কারণে ব্যথা হয়ে থাকে। পায়ুপথের ব্যথার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- (১) পায়খানার রাস্তার আশপাশে ফোঁড়া (পেরিএনাল এবসেস) (২) এনালফিসার (৩) এনাল ফিসটুলা (৪) পেরি এনাল হিমাটোমা (৫) ক্যান্সার (৬) কক্সিডাইনিয়া (৭) পাইলোনিডাল সাইনাস (৮) পেরি এনাল ওয়ার্ট ও (৯) প্রোকটালজিয়া ফিউগাক্স ইত্যাদি। নিম্নে এই রোগগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করা হলো।

পেরি এনাল এবসেস বা ফোঁড়া:
মলদ্বারের আশপাশে এই ফোঁড়া হয়ে থাকে। ফোঁড়ার স্থানটি ফুলে যায়, প্রচণ্ড টনটনে ব্যথ্যা ও জ্বালা থাকে। রোগীর উঠতে-বসতে ও চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। এই রোগীর একমাত্র চিকিৎসা হলো অপারেশনের মাধ্যমে পুঁজ বের করা।

ফিসটুলা :
ফিসটুলা একটি নালি যা মলদ্বারের ভেতরে শুরু হয়ে মাংসের ভেতর দিয়ে মলদ্বারের পাশে একটি মুখ হয়ে বেরিয়ে আসে এবং মাঝে মাঝে এখান থেকে পুঁজ পড়ে ও ব্যথা হয়। পেরি এনাল এবসেস বা ফোঁড়া যদি নিজে নিজে ফেটে যায় কিংবা অসম্পূর্ণভাবে অপারেশনের মাধ্যমে পুঁজ বের করা হয় তাহলে এই রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকে। এই রোগের দুটি মুখ থাকে। একটি থাকে মলদ্বারের ভেতরে এবং অন্যটি বাইরের স্কিনে। মাঝে মাঝে মলদ্বারের বাইরে ও ভেতরে একাধিক মুখও থাকতে পারে। যাকে আমরা বহুমুখী ফিসটুলা বলে থাকি। বেশ কিছুদিন স্কিনের মুখটি বন্ধ থাকে এবং ভেতরে পুঁজ ও ময়লা জমতে থাকে। ফলে মুখ ও আশপাশে ফুল যায় এবং বেদনা হয়। এক সময় মুখ ফেটে পুঁজ ও ময়লা জাতীয় আঠালো পদার্থ বের হয়ে আসে এবং রোগী সুস্থ অনুভব করে। এভাবে ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে এবং রোগটি জটিলতর হতে থাকে।

এনাল ফিসার:
এই রোগে পায়খানার সময় মলদ্বারে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয় এবং পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়ে থাকে। ব্যথার প্রচন্ডতা এত বেশি হতে পারে যে রোগী পায়খানা করতে ভয় পায়। এই ব্যথা পায়খানার পরও ২-৩ ঘণ্টা থাকতে পারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে মলদ্বারে চামড়ায় লম্বালম্বিভাবে ইসপ্লিট বা ফেটে যাওয়া দেখা যাবে। একিউট ফিসারের চিকিৎসা হলো পায়খানা নরম রাখা ও ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া। ক্রনিক ফিসারের ক্ষেত্রে অপারেশন হলো চিকিৎসা।

পেরি এনাল হিমাটোমা:
এই রোগে মলদ্বারের পাশে স্কিনের নিচে রক্তনালি ছিঁড়ে রক্ত জমা হয়। মোটা বড় আকারের শক্ত পায়খানা করার সময় মলদ্বারে অতিরিক্ত চাপ দেয়ার ফলে রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে এই রোগের উৎপত্তি হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের সময় এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে। এই রোগে মলদ্বারের পাশে ব্যথা ও ফোলা থাকে এবং দেখতে লালচে বেগুনি রঙের মতো হয়। এই রোগে একটু কেটে জমাট রক্ত বের করে দিলে রোগ ভাল হয়ে যাবে।

পাইলোনিডাল সাইনাস:
পাইলোনিডাল সাইনাস শব্দের অর্থ ‘চুলের বাসা’। এই রোগ মলদ্বারের পেছনে স্কিনের মধ্যে দেখা যায়। স্কিনের গর্তে ছোট ছোট চুল জমা হয় এবং ক্রনিক ইনফেকশনের সৃষ্টি করে। এ রোগ যাদের চুল বেশি থাকে তাদের ও নিগ্রোদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। সার্জারি একমাত্র এ রোগের চিকিৎসা।

পেরিএনাল ওয়ার্ট (আঁচিল):
এই রোগে ছোট ছোট অসংখ্য ওয়ার্ড বা আঁচিল মলদ্বারের চারপাশে দেখা যায়। এই রোগ ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে এবং যৌন সঙ্গমের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। এই রোগী ব্যথায় অস্বস্তি, ঘা এবং মলদ্বারে জ্বালাপোড়ার কথা বলে থাকে।

কক্সিডাইনিয়া:
রোগীর প্রধান উপসর্গ হলে মলদ্বারের বাইরে পেছনের দিকে ব্যথা, বিশেষ করে বসতে গেলে, দাঁড়ালে, চলাফেরা করলে কিংবা মলত্যাগের সময় কোন ব্যথা অনুভব করে না। ইতিহাস নিলে জানা যাবে রোগী পড়ে গিয়ে মলদ্বারে পেছনের কক্সি নামক হাড়ে ব্যথা পেয়েছে। গরম সেক ও ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ধীরে ধীরে রোগী ভাল হয়ে যায়। যদি তারপরও ব্যথা ভাল না হয়। ব্যথার স্থানে বিশেষ ইনজেকশন লাগবে যার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

মনে রাখবেন উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়া মলদ্বারে ক্যান্সার হলেও পায়ুপথে ব্যথা হতে পারে। অতএব, মলদ্বারে ব্যথা হলে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাবেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button