আন্তর্জাতিক

উত্তাল কাশ্মীরে কাঁদানে গ্যাসে মৃত্যু, শবযাত্রায় বাধা, দাফনও পুলিশ পাহারায়

ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই উত্তাল কাশ্মীর। এর কারণে কাশ্মীরে মোতায়েন করা হয়েছে হাজার হাজার সেনা সদস্য। এদিকে গত ১৭ অগাস্ট কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের সাফাকাদালে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। ওই দিন কী হচ্ছে দেখতে বেরিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাঁদানে গ্যাস শরীরে ঢুকে দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন মোহম্মদ আইয়ুব খান। এমনটাই অভিযোগ করছে তার পরিবার। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ বলছে, গুজব। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কাশ্মীরের সেনারা বিক্ষোভকারীদের দেখে প্রথমে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আইয়ুব রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার পাশেই দু’টি শেল পড়েছিল। পরে এক জন একটা শেলকে লাথি মেরে নর্দমায় ফেলে দেন। শেল থেকে কাঁদনে গ্যাসের ধোঁয়া ফোয়ারার মতো বের হচ্ছিল। নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া তার শরীরে ঢুকে গিয়েছিল। আইয়ুব হাঁপাতে শুরু করেন। পরে এক অটোচালক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন আইয়ুব।

এই নিয়ে আইয়ুব খানের পরিবারের দাবি, তিনি দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। নিরাপত্ত বাহিনীর ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাসের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। আইয়ুবের স্ত্রী খাজির বলেন, ‘আমি বের হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে? পরে আমার স্বামী বললেন, কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়া নাকে ঢুকেছে। উনি আমার সামনেই থুতু ফেলছিলেন। তারপরেই আমার স্বামীর হার্ট অ্যাটাক হয়। আমরা তাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। কিন্তু নেওয়ার পথেই তিনি মারা গেলেন।’

আইয়ুবের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পুলিশের কাছে জানতে চাওয়া হয়। মধ্য কাশ্মীর পুলিশের ডিআইজি ডি.কে. বিরদি জানান, সাফাকাদালে থেকে এক জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। পরিবার দাবি করছে কাঁদানে গ্যাস নাকে ঢুকে দম বন্ধ হয়ে মারা গেছে। গোলামাল এরই মধ্যে থেমে গেছে। ওটা আসলে গুজব।

আইয়ুবের মরদেহ হাসপাতাল থেকে আনার পর ক্রুদ্ধ প্রতিবেশীরা রাস্তায় নেমে আসেন। আবার শুরু হয় সহিংস বিক্ষোভ। ফয়েজ আহমেদ খান নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বড় ধরনের আবেগ কাজ করছিল। সে আমাদের বন্ধু ছিলো। সে আমাদের ভাই। আমরা কিছু একটা করতে পারতাম। একজন মানুষ মারা গেছে। কোনো জানোয়ার তো মারেনি। তিনি আরো বলেন, ‘ওরা আমাদের মরদেহ নিয়ে শেষযাত্রা করতে দেয়নি কেন? তার জানাজায় হাজার হাজার মানুষ যোগ দিতো। তারা আইয়ুবের লাশের দায়িত্ব নেয়। ঘুরপথে লাশ নিয়ে চলে যায় কবরস্থানে। সরকার এসব কখা কখনো গণমাধ্যমকে বলবে না।’

শেষ পর্যন্ত ওই এলাকার সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় নিরাপত্তা বাহিনী। পুলিশ পাহারায় আইয়ুবের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কবরস্থানে। দাফনের কাজে হাজির থাকার অনুমতি পান পরিবারের কয়েকজন সদস্য।

এদিকে কাশ্মীরে আসলে কী ঘটেছিলে তা নিয়ে নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আসল কথা হলো, এই ধরনের সহিংস বিক্ষোভে অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন কাশ্মীরিরা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button