হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ, উৎপাদনকারী, খামারি ও শিল্পসংশ্লিষ্টরা। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন দেশীয় মাংস উৎপাদনকারীরা।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট ১০টি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বিদেশ থেকে অবাধে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করলে দেশীয় উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক খামারিরা চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ফলে বিশাল যুবসমাজ তথা উদ্যোক্তা বেকার হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডেইরি ও ক্যাটল শিল্প একটি বিকাশমান শিল্প। স্বাধীনতাপরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি যতটা প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি শুধুমাত্র বিদেশি গরুর অবাধ বাণিজ্যের ফলে।
নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি ভোক্তার প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে এ দেশের আপামর খামারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জনপ্রতি দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের চাহিদা হিসেবে বার্ষিক মাংসের চাহিদা ৭২ দশমিক ৯৭ লাখ টন। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি থেকে মোট মাংস উৎপাদিত হয়েছে ৭৫ দশমিক ১৪ লাখ টন। অর্থাৎ ২ দশমিক ১৭ লাখ টন উদ্বৃত্ত। এর মধ্যে গরু-ছাগলের মাংস মোট উৎপাদনের ৫৫ শতাংশ। সরকারি তথ্যমতে, আমরা ইতিমধ্যে প্রাণিজ আমিষে স্বাবলম্বিতা অর্জনে সক্ষম হয়েছি।
মাংস আমদানি করলে দেশের কী ক্ষতি হবে- এ বিষয়ে নানা যুক্তি তুলে ধরে নজরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরে বিদেশ থেকে অবাধে গরু চোরাচালান বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে দেশে ডেইরি ও ক্যাটল শিল্প বিকশিত হতে শুরু করেছে। শিক্ষিত বেকার যুবক ও নারীরা গরু মোটা-তাজাকরণ ও দুগ্ধ শিল্পে নিজেদের আত্মনিয়োগ করেছেন। সরকারও স্বল্প সুদে তাদের ঋণ দিচ্ছে। ফলে বর্তমানে কোরবানির সময় দেশীয় গরু দিয়ে সম্পূর্ণ চাহিদা মেটানো যাচ্ছে। দেশে গরু-ছাগলের উৎপাদন কমে গেলে তাদের বিষ্ঠা দিয়ে যে জৈব সার উৎপাদন হয় তার ঘাটতি দেখা দেবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিকেএসএফের মহাব্যবস্থাপক ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ। তিনি বলেন, কয়েক দিন পর যদি গরুর মাংস আমদানি করা হয়, আর ওই মাংসের সঙ্গে যদি শূকরের মাংস থাকে তাহলে এর দায় নেবে কে? যেহেতু বাংলাদেশ মাংস উৎপাদন করে তাহলে আমদানি করার প্রয়োজন হবে কেন? বরং দেশে মাংস উৎপাদনে যেসব সমস্যা রয়েছে তা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, দেশে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৯১টি নিবন্ধিত গরু মোটাতাজাকরণ খামার ও ৫৯ হাজার ২৭৪টি ডেইরি খামার রয়েছে। এছাড়াও অসংখ্য অনিবন্ধিত খামার রয়েছে দেশজুড়ে। প্রবন্ধে বলা হয় গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার প্রায় ১৮ কোটি বর্গফুট চামড়া উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়। চামড়া ও চামড়াজাতীয় পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ বছরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা আয় করে। এসব শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে প্রায় ৫৬ লাখ লোকের জীবিকা।
গবাদিপশুর উৎপাদন বাড়াতে বক্তারা বলেন, সহজে ব্যাংক ঋণ দিলে, পতিত জমিগুলো কৃষকদের লিজ দেয়ার ব্যবস্থা নিলে এবং ১০ বছরের জন্য এ খাতে ভ্যাট রেয়াত দিলে এই শিল্পের বিকাশ হবে আরও দ্রুত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আহকাবের সাবেক সভাপতি মমিন উদ দৌলা, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. হাবিবুর রহমান মোল্লা, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ এমরান, বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মহসিন, বেঙ্গল মিটের হেড অব কমার্শিয়াল অ্যান্ড এক্সপোর্ট একেএম সাইদুল হক ভূঁইয়া প্রমুখ।