স্বাস্থ্য

ড্রাই আই ডিজিজ : শুষ্ক চোখের সমস্যা

শরীরের অন্যান্য অংশের মতো আমাদের চোখেরও পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতার দরকার হয়। কিন্তু সবসময় কিন্তু আমাদের চোখ আর্দ্র থাকে না। অনেকের ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে বয়স্কদের চোখে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়। আর এই সমস্যাটিকে বলা হয় ড্রাই আই ডিজিজ। ড্রাই আই ডিজিজের ওষুধ যে নেই তা নয়। কিন্তু এগুলোর কোনটাই খুব বেশি কার্যকরী নয়। সম্প্রতি জানা গিয়েছে এই সমস্যার কার্যকরী অন্য একটি সমাধান। চলুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক-

ড্রাই আই ডিজিজ কী?

সাধারণত, আমাদের চোখকে আর্দ্র রাখার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত তরল উৎপাদিত হয়। তবে অটোইমিউনের কারণে বা অন্য কোন কারণে এই তরল উৎপাদিত হওয়া কমে যেতে পারে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কর্ণিয়া সবচাইতে বেশি আক্রান্ত হয় এবং চোখব্যথা, আলো সহ্য না করতে পারা ইত্যাদি সমস্যাগুলো তৈরি হয়।

সমস্যাটি বেশ পরিচিত হলেও এর সমাধান এতোদিন পর্যন্ত সেভাবে ছিলো না। থাকলেও সেটা সবার জন্য একই রকমভাবে কার্যকরী নয়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এই সমস্যাটির একটি সমাধান নিয়ে এসেছেন।

সম্প্রতি একদল গবেষক ড্রাই আই ডিজিজের কার্যকরী চিকিৎসার একটি পদ্ধতি খুঁজে পেয়েছেন। নিউট্রোফাইলস নামক এক ধরণের রোগপ্রতিরোধক কোষ খুঁজে পেয়েছেন তারা যেটি এক্সট্রাসেলুলার ট্র্যাপ উৎপন্ন করে। এটি কর্ণিয়ার চারপাশে জালের মতো ছড়িয়ে যায়।

ফলে বাইরে থেকে চোখে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে গেলে এটি সেগুলোকে বাঁধা দেয় ও ধ্বংস করে ফেলে। এটি অটোঅ্যান্টিবডিসের বিরুদ্ধেও যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা রাখে। গবেষকদের মতে, এই অ্যান্টিবডিসের কারণে ড্রাই আই ডিজিজ সারিয়ে তুলতে সমস্যার মুখে পড়েন আক্রান্তরা। সম্প্রতি এই প্রতিষেধক তৈরি করেছেন গবেষকেরা। যেটি ড্রাই আই ডিজিজ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

নতুন আই ড্রপ কতটা কার্যকর?

গবেষকেরা শুধু নতুন আই ড্রপ তৈরি করেননি, এর কার্যকারিতাও পরীক্ষা করেছেন। মানব শরীর থেকে পরীক্ষার জন্য অ্যান্টিবডিজ নিয়ে আসেন তারা। ইঁদুরের ওপরে এই পরীক্ষা করার পর মানব শরীরে পরীক্ষা চালান গবেষকেরা।

এক্ষেত্রে, মোট ২৭ জন ভিন্ন ভিন্ন রকমের ড্রাই আই ডিজিজের ভুক্তভোগীর উপরে পরীক্ষা চালান তারা। এদের কারো সমস্যা ছিল জোগ্রেন’স সিনড্রোম, কারো মেইবোমাইন গ্ল্যান্ড ডিসফাংশন। এর মধ্যে অর্ধেক অংশগ্রহনকারীদের অ্যান্টিবডিজ দেওয়া হয়, আর বাকিদের অ্যান্টিবডিজ ছাড়া একইরকম আই ড্রপ দেওয়া হয়। মোট ৮ সপ্তাহ এই আই ড্রপ ব্যবুহার করেন তারা।

এই পুরো পরিক্ষা চলাকালীন সময়ে, এর আগে ও পরে- পুরোটা সময় আক্রান্তদের কর্ণিয়ার সংক্রমণ এবং প্রদাহ কতটুকু ছিল, কমেছে নাকি বেড়েছে- এই সবটা পর্যবেক্ষণ করেন তারা। এই অ্যান্টিবডিযুক্ত আই ড্রপ চোখের ড্রাই আই ডিজিজের জন্য অসম্ভব কার্যকরী বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকেরা। যারা অ্যান্টিবডিযুক্ত আই ড্রপ ব্যবহার করেছেন তাদের চোখের কর্ণিয়াতে সংক্রমণ এবং কোষ নষ্ট হওয়ার পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে ড্রপ ব্যবহারের পর। তাই, নিজেদের নতুন এই উদ্ভাবনাকে অসম্ভব কার্যকরী এবং ভবিষ্যতের জন্য উপকারী বলে মনে করছেন গবেষকেরা।

বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত পুরো বিশ্বে ড্রাই আই ডিজিজে ঠিক কতজন ভুগছেন তার সংখ্যা দিতে পারেন না। সংখ্যাটা আনুমানিক ৫ থেকে ৩৪ শতাংশের মধ্যে বলে মনে করেন তারা। তবে তাই বলে এই সমস্যাটিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই একেবারেই।

চোখ অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। তাই, চোখের যেকোন সমস্যায় দেরী না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। ড্রাই আই ডিজিজ পরবর্তীতে আপনার চোখের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই, চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে যতটা সম্ভব সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button