স্বাস্থ্য

করোনা ভাইরাস বিংশ শতাব্দীর সেরা মহামারীর এক নাম

করোনা ভাইরাস কি?
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস – যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি।
এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী প্রাণহানি হয়েছে এক লাখের বেশি মানুষের। বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ লাখ ছাড়িয়েছে।
ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯ – এনসিওভি বা নভেল করোনাভাইরাস। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ছয়টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। তবে নতুন ধরণের ভাইরাসের কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাতটি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
 রোগের লক্ষণ ও রোগ প্রকাশঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়।
করোনা ভাইরাস যখন নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের শরীরের ঢুকবে তখন নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাকে গন্ধ না পাওয়া উপসর্গটি দেখা দিবে। যখন এটি গলায় থাকবে তখন গলাব্যাথা ও খুসখুসে কাশি হতে পারে। ভাইরাসটি যখন আমাদের শরীরে রক্তের সাথে মিশে যাবে তখন শরীরে প্রচন্ড জ্বর হবে, শরীর ব্যাথা হবে, সাথে অনেক সময় পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
 করোনাভাইরাস যখন ফুসফুসের অ্যালভিওলাই তে আঘাত করবে তখন রোগীর প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হবে এবং এর সাথে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে যাবে। যেটাকে আমরা মেডিকেলের ভাষায় বলি নিউমোনিয়া। এ ধরনের রোগীকে সাধারণত হাসপাতালে চিকিৎসা করতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখতে হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে এই ধরনের রোগী গুলোর বয়স সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বা তার বেশি। শুধু তাই না এদের ভিতরে যাদের পূর্ব থেকেই অ্যাজমা, ডায়বেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ,কিডনি রোগ, স্ট্রোক রোগ আছে তাদের কিন্তু মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে ৬০ এর বেশি বয়সের মানুষের মৃত্যু হার প্রতি ১০০ জনে ৪২ জন।
একটি আশার বাণী নিয়েই আমরা বেঁচে আছি, সাধারনত করোনাভাইরাস আক্রান্ত সব রোগীর ই হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। শতকরা ৮০ ভাগ রোগীই হালকা জ্বর, গলাব্যাথা, খুসখুসে কাশি, নিয়ে বাসায় থেকে সুস্থ হয়ে যাবে। রোগী বুঝতেই পারবে না যে,সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল।
চিকিৎসা পদ্ধতিঃ
কোভিড‌-১৯ এর জন্য এখন পর্যন্ত নির্ধারিত কোন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি। ভাইরাসটির মূল প্রতিষেধক হবে ভ্যাকসিন। তবে এখন এটি গবেষণা পর্যায়ে আছে। এই ভ্যাকসিনটি আমাদের পেতে হয়তো আরও এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে। তবে তথ্য এসেছে কিছু ঔষধ প্রয়োগ করার ফলে ভাইরাসটি খুব দ্রুত নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে।
 আমাদের দেশে সাধারণত চিকিৎসা গুলো চলছে রোগের লক্ষণ অনুযায়ী।
একটি চিকিৎসা পদ্ধতি আমরা গবেষণা করছি, সেটি হলো আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থ হয়ে ওঠার পরে তার শরীরে থেকে রক্ত নিয়ে স্বয়ংক্রিয় মেশিনে রক্ত রস তৈরি করে, যারা অনেকদিন থেকে ভেন্টিলেটরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন তাদের শরীরে প্রয়োগ করা হচ্ছে। রক্তরসে থাকে ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় করার এন্টিবডি। ফলে ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীটি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিকার ও সচেতনতাঃ
করোনাভাইরাস এর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি বা ভ্যাকসিন বর্তমানে আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধ মূল চিকিৎসা।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যে সমস্ত ব্যবস্থাগুলো নিয়েছে, সেগুলো সঠিকভাবে পালিত হলে হয়তো ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
তবে আমরা ইতিমধ্যে করোনা মহামারীর চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। তাই উপসর্গ ছাড়া আমাদের আসে পাশে কোভিড১৯ পজিটিভ রোগী অনেক আছে। যাদের কে ডিটেক্ট করা যাচ্ছে না। কারন হাল্কা জ্বর কাশি শরীর ব্যাথা হয়ে ভালো যাচ্ছে। সাধারণত এই রোগী গুলোকে পরীক্ষা করানোর সুযোগ থাকছে না। এটি নিঃসন্দেহে ভালো তবে সবার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। তাহলে আপনি কিভাবে সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে নিরাপদে থাকবেন। সহজ কথা, অতি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাহিরে যাওয়া যাবেন না। কোন কারনে বাহিরে গেলে সার্জিক্যাল মাক্স ২ টা, সাথে ৩ লেয়ার বিশিষ্ট কাপড়ের মাক্স ও চশমা পরে বের হবেন। ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে কাজ সমাধান করবেন। বাহিরে যাওয়ার পর কোথাও কোন কিছুতে টাচ করবেন না। করলেও হাত দ্রুত সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে পরিস্কার করে নিবেন। বাসায় আসার পর হাত স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে পোশাক খুলে ধুয়ে ফেলবেন।
 কোন অবস্থাতেই আপনার হাত দিয়ে নাক,মুখ ও চোখ স্পর্শ করবেন না।
পরিশেষে আমার আকুতি বাসায় থাকেন। আপনি সুস্থ থাকুন, আপনার পরিবারকে সুস্থ রাখুন ও বাংলাদেশকে মহামারীর থেকে বাঁচান।
ডাঃ গোলাম আরেফিন প্রিন্স, স্বেচ্ছাসেবক চিকিৎসক
করোনা হটলাইন কল সেন্টার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button