খুলনা বিভাগসারাদেশ

মিরসরাই ট্র্যাজেডি : নিঃশব্দে কেটে গেল নয়টি বছর

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ঃ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের ফুটবল খেলা দেখে ফেরার পথে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৪ স্কুল ছাত্রসহ ৪৫ জন নিহত হওয়ার ৯ম বর্ষপুর্তি আজ শনিবার। কিন্তু আজও কেঁদে বুক ভাসান মা ও স্বজনরা। সন্তান হারানো পিতা-মাতার কাছে এই দিন আজও বেদনা জাগায়।

২০১১ সালের এই দিনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখে মিরসরাই স্টেডিয়াম থেকে ফেরার পথে বড়তাকিয়া আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় শিক্ষার্থীদের বহনকারী ট্রাক পাশ্ববর্তী ডোবায় উল্টে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়। মর্মান্তিক এই ঘটনা মিরসরাই ট্র্যাজেডি হিসেবে পরিচিতি পায়।

এই ঘটনায় আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন শিক্ষার্থী প্রাণ হারায়। অন্যন্যরা প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজ ও আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

করোনা পরিস্থিতিতে এবার মিরসরাই ট্র্যাজেডির আনুষ্ঠানিকতা সীমিত করা হয়েছে।

আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার বলেন, মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহত স্কুল শিক্ষার্থীদের স্মরনে শনিবার সকাল ৯টায় স্কুলে কোরআন খতম, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের রীতি অনুযায়ী প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ ও দুর্ঘটনাস্থলে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‌’অন্তিম’ এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার শোকসভা ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা হচ্ছে না।

স্থানীয় মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহমদ নিজামী বলেন, মিরসরাই ট্র্যাজেডির মর্মস্পর্শী সেই ঘটনা আমাদের এখনো আবেগতাড়িত করে। প্রতিবছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হলেও এবার শোকসভা, মেজবানসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হচ্ছে না। ধর্মীয় কর্মসূচির পাশাপাশি দুটি স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

ওই দুর্ঘটনায় নিহত আবুতোবার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সাকিবের মা পারভীন আক্তার বলেন, সেদিন যদি স্কুল কর্তৃপক্ষ খেলা দেখে আসার জন্য ট্রাকে ছাত্রদের উঠতে না দিতো তাহলে এতগুলো স্কুল ছাত্র মারা যেতো না। স্কুল শিক্ষার্থী পরিবহনে নীতিমালার পাশাপাশি সড়ক দূর্ঘটনায় দায়ী চালক ও সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তির বিধান রাখার দাবি জানান তিনি।

সেদিন যা ঘটেছিলোঃ
উপজেলা সদরস্থ স্টেডিয়াম মাঠে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলা শেষে বিজয়োল্লাসে বাড়ি ফেরার পথে চালকের অসর্তকতায় ঘটে যায় এই দুর্ঘটনা। ঘটে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। পিতার কাধে উঠে পুত্রের লাশ! এ যেন ভিবিষিকাময় এক পরিবেশে পরিণত হয়। এতে প্রাণ হারায় আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজ, আবুতোরাব ফাজিল মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৩ জন শিক্ষার্থী। এতে নিহত হন দুজন অভিবাবকও। পুরো মিরসরাই ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে মূহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। একে একে ছুটে আসেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ততকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ অনেকে। সে দিনটি রচিত হয় “মিরসরাই ট্রাজেডী” নামে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button