রিয়েলিটি শো নিয়ে নানামুখী আলোচনা!
সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় রিয়েলিটি শো মানেই আলোচনার চেয়ে সমালোচনা বেশি। এমন দৈন্যদশার শুরুটা খুব বেশিদিনের নয়। ১০ বছর আগেও দেশীয় টিভি চ্যানেলের রিয়েলিটি শোয়ের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ ছিল প্রবল। কোন রিয়েলিটি শো ঠিক ক’টায় প্রচার হবে তা নিমিষেই বলে দিতে পারতেন বেশিরভাগ দর্শক। অথচ এখন কখন কোন চ্যানেলে কোন ধরনের রিয়েলিটি শো প্রচার হয় তাও জানেন না টিভি দর্শকদের অধিকাংশ।
কিন্তু ওপার বাংলার সর্বোপরি ভারতের রিয়েলিটি শোয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ ঠিকই আছে। বরং বাংলাদেশি প্রতিযোগিদের সুযোগ দেওয়ার পর আগ্রহের মাত্রা আরো বেড়েছে। ‘সারেগামাপা’, ‘দিদি নম্বর ওয়ান’, ‘সুপার ড্যান্সার চ্যাপ্টার থ্রি’, ‘সুপারস্টার সিঙ্গার’, ‘ড্যান্স ইন্ডিয়া ড্যান্স’সহ প্রতিবেশি দেশটির বিভিন্ন রিয়েলিটি শোর খবর ঠিকই রাখছেন এদেশের দর্শকরা। কিন্তু কয়েক মাস হওয়া ‘সানসিল্ক ডিভাস’ ও ‘গানের রাজা’ অনুষ্ঠানটিও দর্শক সেভাবে দেখেননি, আলোচনায়ও আসেনি। তবে এটা ঠিক যে ‘লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার’, ‘ক্ষুদে গানরাজ’-এর মতো হাতেগোনা কয়েকটি রিয়েলেটি শো আছে যেগুলো ইন্ডাস্ট্রিকে তারকা দিচ্ছে প্রতিবছরই। এগুলোর মানের কারণেই দর্শদের মন জয় করতে পেয়েছে খুব সহজেই। তবে এমন রিয়েলিটি শো এখন আর হচ্ছে না বললেই চলে!
তবে দেশের বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারিত কয়েকটি রিয়েলিটি শো এরইমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া ‘কে হবেন মাসুদ রানা’ রিয়েলিটি শো নিয়ে এখনো উত্তাপ রয়েছে স্যোশাল মিডিয়ায়। বিচারকদের রীতিমতো তুলোধনা করছেন নেটিজেনরা! দর্শকদের অভিযোগ, প্রতিযোগিদের নিয়ে এক ধরনের তামাশা করা হচ্ছে এই শোতে।
রিয়েলিটি শোটির বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, একজন প্রতিযোগীর চুলের কাটিং নিয়ে প্রশ্ন করছেন বিচারক ইফতেখার আহমেদ ফাহমি। এমনকি ‘তুই-তোকারি’ আচরণও করতে দেখা যায় তাকে। এছাড়া পরিচালক শাফায়েত মনসুর রানা, অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম, শবনম ফারিয়া ও নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজকেও প্রতিযোগিদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতে দেখা যায়। অভিনয় কিংবা মূল বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন না করে অবাঞ্চিত প্রশ্ন করতেও দেখা যায়। বিশেষ করে প্রতিযোগিদের অপ্রাসঙ্গিক নানা প্রশ্নের মাধ্যমে অপমান করতে এগিয়ে ছিলেন ইফতেখার ফাহমি ও অভিনেত্রী মম।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে পরিচালক ইফতেখার আহমেদ ফাহমি রাজি হননি। তবে শবনম ফারিয়া জানান, এ বিষয়ে তিনি এখনই কিছু বলতে চান না। তবে খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দেবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনো এক রিয়েলিটি শোয়ের বিচারক বলেন, ‘চ্যানেলের টিআরপি বাড়ানো আর সমালোচনায় আসার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে ইদানিং।’ এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘টিআরপির বাড়ানোর জন্য এসব কাণ্ড নিন্দনীয়। আমি বিচারকার্যে গিয়ে যদি অন্যের কথা শুনে আমাকে কাজ করতে হয় তাহলে সে কাজ আমি করবো কেন? নিজেরও তো একটা ব্যক্তিত্ব থাকা দরকার।’
এর আগে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতাটিও মানুষের মুখে মুখে ছিল বিভিন্ন সমালোচনার কারণে। প্রথম আসরে বিবাহ কাণ্ড কিংবা দু-বার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হওয়া, বিচারকদের নানারকমের মন্তব্য। দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে দেখা যায়নি পাঁচ বিচারকের একজনকে। এছাড়া ফাইনালের আগেই ‘ফাঁস’ হয়েছিল ফলাফল। তাছাড়া ‘এইচটুও বিতর্ক’, গ্র্যান্ড ফিনালেতে জেসিয়ার ডাক না পাওয়াসহ নানা অভিযোগ তো ছিলই। ‘সিলন সুপার সিঙ্গার’-এর তিন বিচারকের একজন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী বলেন, ‘রিয়েলিটি শোয়ের একটা বিষয় হলো প্রচারণা। যত বেশি প্রচারণা তত বেশি দর্শককে আকৃষ্ট করবে। কিন্তু তাই বলে কটু কোনো কাজ করে দর্শককে আকৃষ্ট করাটা ঠিক নয়।’
আমাদের দেশের রিয়েলিটি শোগুলোর ধরন খুবই একঘেঁয়েমি। সে কারণে অনেকে নামই জানেন না শোগুলোর। যা আলোচনায় আসে সমালোচনার কারণেই। তবে বিভিন্ন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ বলছে অন্য কথা। আমাদের দেশে রিয়েলিটি শোয়ের বাজেট আর ভারতের শোয়ের বাজেট এক না। তাই আমরা সাধ্য থাকলেও ধরে ধরে কাজ করা সম্ভব হয় না।