আইন-আদালত

আইনে সন্তানের অভিভাবকত্ব

একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনগ্রন্থ হলো, দেশটির সংবিধান। আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৮(২)-এ বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার লাভ করবে।’ অথচ দেশে প্রচলিত আইনে শুরু থেকেই নারীর প্রতি বৈরী আচরণ বিদ্যমান। সন্তান জন্মদান থেকে লালনপালনে নারীর গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবু নারীর সন্তান ধারণ ও লালনের সব গুরুত্বকে ছাপিয়ে পিতৃত্বের অধিকারবোধ প্রবল হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ অনেক সময়ে মায়ের কাছ থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয় সন্তানের জিম্মাদারিত্ব। সামাজিকভাবে সাধারণত ধরে নেয়া হয়, বাবাই সন্তানের চূড়ান্ত অধিকারী। সন্তান নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে বাবার দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আজও অনেকটা বিদ্যমান।

৮৯০ সালের বিধান অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়স্ক সন্তানকে ‘নাবালেগ’ বলে বিবেচনা করা হয়। তার অভিভাবক হবেন তিনি, যিনি কোনো নাবালেগ বা নাবালকের শরীর অথবা সম্পত্তি অথবা সম্পত্তি ও শরীর উভয়ের তত্ত্বাবধানের এবং তাকে ভরণপোষণ প্রদানে আইনিভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আইন অনুযায়ী, নাবালকের স্বাভাবিক ও আইনগত অভিভাবক হলেন বাবা। তার অনুপস্থিতিতে বা অভিভাবক হিসেবে তার অযোগ্যতায় মা, অথবা আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োজিত ব্যক্তি নাবালকের ‘শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক’ হতে পারেন। তবে নাবালকের সার্বিক কল্যাণের গুরুত্বের ওপরে নির্ভর করে দেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী, মাকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদারিত্বের অধিকার দেয়া হয়েছে। ছেলেশিশুকে সাত বছর এবং মেয়েশিশুকে তার বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মা জিম্মায় রাখার অধিকারী। তবে মা বা নাবালক সন্তান যার তত্ত্বাবধানে থাকুক না কেন, সন্তানের খোঁজখবর নেয়া, দেখাশোনা এবং ভরণপোষণের দায়িত্ব কিন্তু অভিভাবক হিসেবে বাবার।

জিম্মাদারিত্বের নির্দিষ্ট বয়স পার হলে সন্তান যে বাবার জিম্মায় যেতে বাধ্য হবে, তা নয়। নির্দিষ্ট বয়সের পরও তার সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করে সন্তানের জিম্মাদারিত্বের দায় ফের মায়ের কাছে ন্যস্ত হতে পারে। ‘সার্বিক কল্যাণ’ বলতে আইন অনুযায়ী সন্তানের পার্থিব, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক কল্যাণকে বোঝানো হয়ে থাকে। তা শিশুটির নিরাপত্তার পাশাপাশি সুন্দর ও উত্তমরূপে তাকে প্রতিপালনের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করে। অর্থাৎ, জিম্মাদারিত্বের নির্দিষ্ট বয়স পার হলেই বাবা শর্তহীনভাবে সন্তানদের চূড়ান্ত জিম্মাদার হতে পারেন না, এ ক্ষেত্রে সন্তানের সার্বিক কল্যাণকে গুরুত্ব দেয়া হয়। মায়ের জিম্মায় সন্তান থাকাকালে বাবা যদি কোনো ভরণপোষণ না দেন, সে ক্ষেত্রে মা সন্তানকে বাবার সাথে দেখাসাক্ষাৎ করাতে ‘বাধ্য নন’ বলে বিভিন্ন মামলার রায়ে অভিমত দেয়া হয়েছে (১৭ ডিএলআর ১৩৪)।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button