রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিকাশের টাকা উঠাতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার কলেজ ছাত্রী

চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ বান্ধবীর দেয়া ধারের টাকা বিকাশের দোকানে উঠাতে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী জান্নাতি খাতুন। পরে বিকাশের এজেন্ট মোবাইল নিয়ে দেখতে পায় ম্যাসেজ এসেছে, কিন্তু কোন ব্যালান্স নেয়। সেটি জান্নাতিকে বললে সে দোকান ত্যাগ করে চলে আসে। এরপর প্রায় ১ কিলোমিটার দূর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে দোকানের সামনে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে নাচোল উপজেলার মল্লিকপুর বাজারের বিকাশের এজেন্ট ও গোমস্তাপুর  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীনের ভাগ্নে সোহান। মঙ্গলবার সকালে মল্লিকপুর বাজারে দোকানের সামনে প্রায় ৩ ঘন্টা বেঁধে রাখে শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়নের গুপ্তমানিক-মুক্তারোড়া গ্রামের মো. টিপুর দ্বিতীয় মেয়ে জান্নাতিকে। এসময় বাজারের লোকজন মোবাইলে ছবি ধারন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিতে থাকলে দ্রুত তা ভাইরাল হয়ে যায়। পরে ৩ ঘন্টা বেঁধে রাখার পর স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে মেয়েটিকে ছেড়ে দেন চেয়ারম্যানের ভাগ্নে ও বিকাশ এজেন্ট সোহান।
নির্যাতনের শিকার জান্নাতি বলেন, আমার সহপাঠী গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের প্রবাসী শহিদুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন আমার নম্বরে বিকাশে আমার পাওনা ১০ হাজার টাকা পাঠায়। সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে সেই টাকা উঠাতে গেলে মহিপুর মোড়ে বিকাশের দোকান বন্ধ পায়। পাশের এক লোক পরামর্শ দেয়, মল্লিকপুর বাজারে চলে যাও পেয়ে যাবে। সে অনুযায়ী আমি মল্লিকপুর বাজারের সেই দোকানে গেলে এজেন্ট আমার ফোন চাই। ফোন নিয়ে তিনি বলেন, ম্যাসেজ আছে কিন্তু ব্যালান্সে টাকা নেয়। এরপর সেখান থেকে আমার আরেক বান্ধবীর বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয় নয়াদিয়াড়ী যাওয়ার জন্য। প্রায় ১ কিলোমিটার পথ খলসী বাজারে গেলে সেখান থেকে আমাকে ধরে ভ্যানে করে আবারো মল্লিকপুর বাজারের তার দোকানে নিয়ে আসে বিকাশ এজেন্ট সোহান।
জান্নাতি আরো জানায়, দোকানের সামনে চোরের মতো দড়ি দিয়ে খুঁটির সাথে আমাকে বেঁধে রেখে নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এজেন্ট সোহান ও তার লোকজন। এসময় আমার ফোন কেড়ে নিয়ে সব ম্যাসেজ ডিলেট করে দেয় এবং আমার পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করতে দেয়নি। দীর্ঘ সময় পরে আমার বাড়ির লোকজনকে বলে জান্নাতি অসুস্থ, তাই আমরা তাকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছি। পরে এক চাচাতো দুলাভাইয়ের কাছে আমাকে ছেড়ে দেয়। কথা বলার সময় জান্নাতিকে ভয়ে আতঙ্কিত হতে দেখা যায়।
জান্নাতির বড় বোন মাসকুরা বেগম বলেন, সেই বাজারে সোহানের দোকানের সামনে দিয়ে জান্নাতিকে বাসায় নিয়ে আসার সময় তারা বলছে, এবার ছেড়ে দিলাম। এনিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করলে খবর আছে। আমার বোন কোন অপরাধ করেনি, বিকাশের টাকা তুলতে গিয়েছিল। তার ফোনে টাকা নাই, তাই চলে এসেছে। তারপরও তাকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।
জান্নাতির দেয়া তথ্যে তার সহপাঠী গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের প্রবাসী শহিদুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনের যে নম্বর থেকে ম্যাসেজ গিয়েছিলো সেই নম্বরে অনেকবার চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত বিকাশের এজেন্ট ও গোমস্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীনের ভাগ্নে সোহান মুঠোফোনে জানায়, বিকাশে প্রতারক সন্দেহে তাকে আটক করা হয়। পরে মেয়েটির পরিবারের সাথে সমাধান করে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে সমাধানের বিষয়টি অস্বীকার করে জান্নাতির পরিবার। কি ধরনের প্রতারণা জানতে চাইলে, তা বলতে অস্বীকৃতি জানায় সোহান। এসময় প্রতিবেদককে বিভিন্ন তথ্য না দিয়ে হুমকি দেয় বিকাশ এজেন্ট সোহান। পরে পরিচয় না দিয়ে অন্য নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় অজ্ঞাত ব্যক্তি। স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নাচোল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) কে ফোন দিলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) শিশির কুমার চক্রবর্তী বলেন, ওসি স্যার ছুটিতে আছেন। তবে এবিষয়ে আমার কিছু জানা নেয়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button