সারাদেশ

আরো ৮ জেলা লকডাউন

দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, নওগাঁ, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও ময়মনসিংহ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। খবর আমাদের স্টাফ রিপোর্টার, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের।
রাজশাহী: অবশেষে রাজশাহীকে আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণ সতর্কতায় মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসক হামিদুল হক এই ঘোষণা দেন। এ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করেন তিনি। এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লকডাউন চলবে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতিমধ্যে রাজশাহী জেলায় দুই জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে করোনা রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজশাহী জেলায় আগমনের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক রাজশাহী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন। এর আগে ৬ এপ্রিল লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছিলেন রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। কিন্তু তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
রংপুর : বুধবার রাত ১০টা থেকে রংপুর মহানগরীসহ পুরো জেলার আট উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। রংপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিব আহসান লকডাউন ঘোষণা করে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। গণবিজ্ঞপ্তিতে জেলা প্রশাসক জানান, রংপুরের আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপকভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে রাত ১০টার পর থেকে রংপুর মহানগরসহ জেলার বাইরে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না এবং বাইরে থেকে কাউকেই আসতে দেওয়া হবে না।
দিনাজপুর : জেলায় মোট আট জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর দিনাজপুর জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বুধবার দিনাজপুরে আরো এক জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আবদুল কুদ্দুছ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পার্বতীপুরে ঢাকা থেকে আসা এক গার্মেন্টস কর্মীর দেহে করোনা ভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগে গত সোমবার প্রথমবারের মতো সাত জনের দেহে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়।
নীলফামারী : করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় নীলফামারী জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে লকডাউনের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান চৌধুরী। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই জেলায় কেউ প্রবেশ-বাহির হতে পারবে না। উল্লেখ্য, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নীলফামারী জেলায় এক জন চিকিত্সকসহ চার জন করোনা সংক্রমণ শনাক্ত রোগী আইসোলেশনে আছে এবং ১ হাজার ১৭৩ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
নওগাঁ : করোনা ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ প্রতিরোধে নওগাঁ জেলাকে পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশিদ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এ নির্দেশ দেন। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১টি উপজেলাসহ সমগ্র জেলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ লকডাউন বলবৎ থাকবে। দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও এখনো মুক্ত রয়েছে নওগাঁ জেলা। তবে এরই মধ্যে অনেক জেলার বাসিন্দা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও অন্যান্য জেলা থেকে বাড়ি ফিরেছেন।
গোপালগঞ্জ : জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন (অবরুদ্ধ) ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে লকডাউন কার্যকর হয়। এদিন বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সভা হয়। সভা থেকে জানানো হয় এ পর্যন্ত জেলায় তিন পুলিশ সদস্যসহ ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
শরীয়তপুর : শরীয়তপুর জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে জেলাটি অবরুদ্ধ ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের। মঙ্গলার দুপুরে এ তথ্য দেওয়া হয় গণমাধ্যমকে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলায় এখন পর্যন্ত চার ব্যক্তির দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
ওই চার ব্যক্তির মধ্যে এক জন ঢাকা ও তিন জন নারায়ণগঞ্জ থেকে সম্প্রতি শরীয়তপুরে এসেছেন। আর গত ৪ এপ্রিল নড়িয়ার এব বাসিন্দা ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনিও ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। শরীয়তপুরের পার্শ্ববর্তী সব জেলাতেই করোনায় আক্রান্ত মানুষ শনাক্ত হয়েছে।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসক। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টায় এ সংক্রান্ত গণনোটিশ জারি করা হয়। জেলায় এখন পর্যন্ত দুই চিকিত্সকসহ ছয় রোগী শনাক্ত হওয়ায় এবং ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড লকডাউন ঘোষণাসহ সদর উপজেলায় আরো এক করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় জেলাকে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
সাতকানিয়া: চট্টগ্রাম অফিস জানায়, করোনা ভাইরাস দ্রুত সংক্রমিত হওয়ায় চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। জানা গেছে, চট্টগ্রামের মোট ২৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে আট জনই সাতকানিয়ার। এ কারণে ওই উপজেলাকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ‘হটস্পট’ হিসেবে বিবেচনা করছে প্রশাসন।
নোয়াখালীতে হাসপাতাল লকডাউন: নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, জেলায় প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালি প্রবাসীর মৃত্যুর পর তথ্য গোপন করে ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে স্বাভাবিক চিকিত্সা কার্যক্রম পরিচালনা করায় জেলা শহর মাইজদীর প্রাইম হসপিটাল লিমিটেডকে লকডাউন করা হয়েছে।
এদিকে ইতালি প্রবাসীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রীও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাইনুল ইসলাম জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রবাসীর স্ত্রীকে ওই এলাকার একা একটি বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। এখন তার শারীরিক অবস্থা ভালো। তবে তাকে চিকিত্সার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে আজ।
উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের ওই প্রবাসীর মৃত্যু হয়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button