খেলা

এখনই পরিবর্তন চান না ডমিঙ্গো

ডেভ হোয়াটমোর বলতেন নাথিং হ্যাপেন ওভারনাইট। শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো অস্ট্রেলিয়ান কোচ বাংলাদেশের ক্রিকেটের যুগ-সন্ধিক্ষণে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তার চার বছরের সময়ে বাংলাদেশ ফল পেয়েছিল শেষটায়। ডেভের ঠিক এক যুগ পর একই দায়িত্বে আসা রাসেল ডমিঙ্গো শুরুতে হয়তো একটু দ্রুত ফলের আশা করেছিলেন। কিন্তু গেল দেড় সপ্তাহে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থেকে ঠিকই বুঝেছেন রাতারাতি কিছু হয় না।

আগামীকাল আফগানিস্তানের সঙ্গে একমাত্র টেস্ট শুরু। তার আগে রাসেল ও তার দক্ষিণ আফ্রিকান কোচিং স্টাফের হাতে সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ দল ‘ইনটেন্স’ প্র্যাকটিস করছে। এর ফল যা মিলছে তাতে খুশি ডমিঙ্গো। তার চুক্তি দুই বছরের আপাতত। পরিকল্পনা চার বছরের। এবং সেই পরিকল্পনার মূলে ‘দেশের মতো বিদেশেও জয়’ ফর্মুলা, যা শুনে রোমাঞ্চিত ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খানও বলেছিলেন চট্টগ্রামে ঘাসের উইকেটে খেলার কথা।

গতকাল সেই উইকেট প্রায় ন্যাড়া হয়ে গেছে। আর সংবাদ সম্মেলনে রাসেলকেও ‘ধীরে চলো নীতি’ প্রয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মনে হলো। বিদেশের মাটিতে সমান সাফল্য পেতে যে পেসারদের প্রয়োজন তাদের ভুলে রাসেলকেও আপাতত ‘অল স্পিন’ সমর্থক লাগল।

‘ফিটনেস নিয়ে কোনো সমঝোতা নেই, বিশেষ করে ফাস্ট বোলারদের ব্যাপারে। বিশ্বের সেরা পেসারদের দিকে তাকালে দেখবেন তারা দিনে ১৮ থেকে ২০ ওভার একই গতিতে বল করতে পারে। আমাদের বোলারদের মধ্যে খুব বেশি তা করতে পারে বলে আমি দেখছি না।’ ফিটনেস ইস্যুতে কাজ চলছে বলে জানালেন ডমিঙ্গো। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ছিল সাকিবদের দেশে খেলা আগের দুই টেস্ট প্রসঙ্গে।

চট্টগ্রামে এক পেসার চার স্পিনারে উইন্ডিজের বিপক্ষে জয় নিয়ে ঢাকায় ফিরে সবেধন নীলমণি পেসারকে বাদ দিয়ে অল স্পিন অ্যাটাক নিয়ে নেমে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের প্রসঙ্গ। তাহলে তিনিও কি মনে করেন এখানে সেটাই ভালো হবে?

কখনো কখনো দায়িত্ব না নেওয়ার মধ্যেও অনেক দায়িত্বের পরিচয় দেওয়া হয়। তিন নতুন কোচ, মাত্র এসেছেন। একটু বুঝে-সমঝে নেবেন। এমন একটা অনুভূতি দিয়ে সাকিব আর নির্বাচকদের কোর্টে বল ঠেলে খুব গুছিয়ে রাসেল জানালেন, ‘বাংলাদেশের হয়ে এটা আমার প্রথম টেস্ট হতে যাচ্ছে। তারা কেমন পারফর্ম করে তা আগে আমি দেখতে চাই।

শেষ কয়েক টেস্টে যে প্রক্রিয়া তাদের খুব কাজে দিচ্ছে তা পাইকারিভাবে বদলে দেওয়াও কঠিন। প্রথম টেস্টে সবকিছু কীভাবে যায় তা দেখার অপেক্ষায় আছি। নির্বাচকরা আর সাকিব একটা নির্দিষ্ট ভাবনার দিকে আমাকে ঠেলে দিয়েছে। দলে আমার নিজস্ব ভাবনার প্রয়োগের আগে সেই ভাবনা নিয়ে স্বস্তিতেই আছি।’

স্বস্তিতে থাকা প্রধান কোচ খেলোয়াড়দের বাড়তে থাকা এনার্জি নিয়ে খুশি। মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা আফগানদের বিপক্ষে ১৯ বছরের টেস্ট অভিজ্ঞ তার দলকে এগিয়ে রাখছেন সহজাতভাবে, ‘গত দুই সপ্তাহে ওদের অবিশ্বাস্য খাটুনি খাটতে দেখেছি। আমাদের কাজের প্রক্রিয়ায় মন দিতে হবে, ধৈর্যশীল হতে হবে। আফগানিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা জরুরি। তাতে ফল আমাদের পক্ষে আসবে।’ তবে খেলোয়াড়দের আরও তৈরি করা বাকি তার, ‘আমার মতে বোলারদের ফিটনেস লেভেলে আরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি করা সম্ভব যাতে তারা দ্বিতীয় ও

তৃতীয় স্পেলে সমান গতিতে বল করতে পারে।’ প্রসঙ্গক্রমে সাকিবের কথা এলে প্রশংসা করে যান কোচ, ‘দীর্ঘকাল ধরে সে বিশ্ব ক্রিকেটের নেতৃস্থানীয় অলরাউন্ডার। তার কাছে আর সবার যেমন প্রত্যাশা, তার নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশাও তেমন উঁচুতে। সে উচ্চ একটা মান তৈরি করে রেখেছে। সব সংস্করণে তার পারফরম্যান্স চমৎকার।’

আফগানরা রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলে। বাংলাদেশকে ২০১৪ সালে প্রথম হারিয়েছিল। যেটা টেস্ট দলের বিপক্ষে ছিল তাদের প্রথম জয়। তাদের স্পিন অ্যাটাক চমৎকার। কিন্তু তা সীমিত পর্যায়ের ক্রিকেটে প্রমাণিত। টেস্ট ভিন্ন সংস্করণ। এর কলাকৌশল বাংলাদেশের এখনো বেশি জানা। তবু সতর্ক ডমিঙ্গো জানিয়ে গেলেন, ‘আফগানিস্তান কেবল টেস্ট যাত্রা শুরু করেছে বলে জয়ের জন্য মুখিয়ে থাকবে।’ তার মনে হয়, এই কন্ডিশনকে প্রতিপক্ষ কাজে লাগাতে চাইবে। কিন্তু কোচের পরিকল্পনা, ‘সামনের কদিনে আমাদের তারা চমকে দিতে চাইবে। ওদের নবী আর রশিদ খানের মতো ম্যাচ উইনার আছে। বিপজ্জনক তারা।

তাদের কাছ থেকে রান তুলতে হবে। সেরা বোলারদের চাপে ফেলার উপায় হতে পারে এটি।’ আর প্র্যাকটিস ম্যাচে ৫ উইকেটশিকারি চায়নাম্যান জাহির খান? তেমন পাত্তা দিলেন না ডমিঙ্গো, ‘তাকে সামলে নেওয়ার আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।’

2Shares

শেয়ার করুন 

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button