বরিশাল বিভাগসারাদেশ

পানিবন্দী হয়ে পরেছে সতের গ্রামের বিশ হাজার মানুষ

কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: চলাচলের জন্য নেই এক ইঞ্চি রাস্তা। ভেসে গেছে কালভার্ট, সেতু।
বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ৬০শতাংশ বসতঘর। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সচ্ছল পরিবারের কর্মক্ষম  ব্যক্তিটি  এখন হিমশিম খাচ্ছে সংসারের ঘানি টানতে।  হারিয়ে নি:স্ব অনেক স্বচ্ছল পরিবার। দেনাগ্রস্থ অনেকেই অভাবের তাড়নায় ছেড়ে গেছেন এলাকা। এছাড়া এই এলাকার স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে পানিবন্দী হওয়ার কারনে। বলছিলাম দফায় দফায় ভাঙ্গন কবলিত পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়নের কথা।
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন  জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মানের আশ্বাস দিয়েছেন বহুবার। এমনকি  ভাঙ্গন কবলিত এই এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক নিজে। সেসময় তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ী বাঁধ র্নিমানের নির্দেশনা প্রদান করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। সবাই কথা দিয়েছেন স্থায়ী বাঁধ র্নিমানের। কিন্তু স্থায়ী বাঁধ তো দুরের কথা, বিগত ৫ বছর ধরে হচ্ছেনা কোন জরুরী সংস্কার কাজ। তাই স্থানীয় বানভাসি মানুষরা এখন আক্ষেপ করে বলে  কেউ কথা রাখেনি। এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন উপজেলার লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস।
২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডরে বিধ্বস্ত হয় লালুয়ার ০৭ কিলোমিটার বেরিবাঁধ। এরপর বেশ কয়েকবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে জরুরীভাবে সংস্কার কাজ হলেও মানহীন, দুর্বল কাজের জন্য তা টেকসই হয়নি। ফলে ফি-
বছর ভেঙ্গে বর্ষা মৌসুমের অস্বাভিক জোয়ারে পানিবন্ধী হয়ে পড়ছে ১৭টি গ্রামের প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ। প্লাবিত হয়েছে ফসলি জমি, পুকুর ঘের। বছর জুরে অনাবাদি থাকছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। এতে পেশা হারিয়ে কর্মহীন ও নি:স্ব হয়ে পড়েছে অনেক স্বচ্ছল পরিবার। দেনাগ্রস্থ অনেকই অভাবের তাড়নায় ছেড়ে গেছেন এলাকা।
সরজমিনে লালুয়ার চারিপাড়া, পশরবুনিয়া, বানাতিপাাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাগর ও রাবনাবাদ নদের মিলন মোহনায় লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া এলাকায় বেরিবাঁধের আদৌ কোন অস্তিত্বই নেই। এর বিভিন্ন ভাঙ্গা অংশ দিয়ে হু-হু করে নামছে ভাটার পানি। ভাটার সময়ও ফসলি মাঠে থৈ-থৈ করছে পানি। বেশিরভাগ বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে আছে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ বসতঘর। বানের জলে ভেসে গেছে সেতু, সাঁকো। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে অনেক কালভার্ট। খাবার পানিসহ গো-খাদ্যের দেখা দিয়েছে তীব্র সঙ্কট। চারিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে গৃহহারা বেশ কয়েকটি পরিবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী সুবিধাভোগী ঠিকাদার এবং পাউবো’র অসাধু প্রকৌশলীদের কারনে শুরু থেকেই বারবার সংস্কার কাজ হলেও স্থায়ী বাঁধ র্নিমান হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবী, ভূমি অধিগ্রহনসহ পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্ধ না থাকায় লালুয়া বাঁধের স্থায়ী র্নিমান কাজ শুরুতেই আটকে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ষাটের দশকে জলোচ্ছাস থেকে এই উপকূলের মানুষদের রক্ষায় নির্মান করা হয় ১৩৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। নির্মানের পর থেকে কোন সংস্কার কিংবা পুন:নির্মান
কাজ না হওয়ায় এসব বাঁধের অধিকাংশই বর্তমানে হয়ে পড়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ন। সর্বশেষ উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে লতাচাপলী, কুয়াকাটা, ডাবলুগঞ্জ, ধুলাসর ইউনিয়নের ৮কিলোমিটার বেরিবাঁধের পুনরাকৃতির কাজ চললেও বাঁধ ভাংগা এই এলাকায় হচ্ছে কোন কাজ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওলিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দর লালুয়া ইউনিয়নের ওই এলাকার জমি অধিগ্রহন করায় তাদের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় বিগত পাঁচ বছর ধরে কোন সংস্কার কাজ করা যাচ্ছেনা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button