লিড নিউজ

আগামীকাল প্রথম যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী

মুজিব বর্ষের প্রক্কালে যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে দেশের প্রথমবারের মত এক্সপ্রেসওয়ে আগামীকাল যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি আনুষ্ঠানিকভাবে এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন।
ভ্রমণের সময় কমানোর পাশাপাশি দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর লোকদের জন্য আরামদায়ক ও নিরবিচ্ছিন্ন যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়।
প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেন,আন্তর্জাতিক মানের এই এক্সপ্রেসওয়ে দুইটি সার্ভিস লেনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করবে।
স্থানীয় এক পরিবহন চালক বাসসকে বলেন,”এটি একটি চমৎকার এক্সপ্রেসওয়ে, যা ভ্রমণের সময় সাশ্রয় করবে এবং এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন দ্রুত নির্বিঘেœ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করবে”।
প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, এক্সপ্রেসওয়েতে পাঁচটি ফ্লাইওভার, ১৯ টি আন্ডারপাস এবং প্রায় ১০০টি সেতু এবং কালভার্ট রয়েছে, যা দেশের ব্যবসা- বাণিজ্য বাড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
এটিতে মাওয়া থেকে ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এবং ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পানছার থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত দুটি এক্সপ্রেসওয়ে পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের একটি অংশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।পাশাপাশি ঢাকা শহর এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের মধ্যে যোগাযোগ জোরদার করবে।
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা বিভাগের ১০ টি জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলাসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ টি জেলার মানুষ সরাসরি এই আন্তর্জাতিক মানের এক্সপ্রেসওয়ে থেকে উপকৃত হবেন।
আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন রয়েছে। দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর চার কিলোমিটার গতকাল মঙ্গলবার ২৬তম স্প্যান বসানোর পরে ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।
২০২১ সালের জুনের মধ্যে ট্র্যাফিকের জন্য ব্রিজটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে, কোনও ভ্রমণকারীকে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা আসা এবং যেতে এক ঘন্টা সময় লাগবে না।
এই হাইওয়েতে আগামী ২০ বছরের জন্য ক্রমবর্ধমান ট্রাফিকের পরিমাণ বিবেচনা করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় ১১০০৩.৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে ২০১৬ সালে চারটি জেলা – ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর এবং ফরিদপুরে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করে এবং এটি নির্ধারিত সময়সীমার তিন মাস আগে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২০২০ সালের ২০ জুন।
১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মুজিব বর্ষ উদযাপন শুরুর প্রাক্কালে এক্সপ্রেসওয়ে ট্রাফিকের জন্য উন্মুক্ত হতে চলেছে।
স্থানীয় ও ধীর গতি সম্পন্ন যানবাহনের জন্য এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশে দুটি পরিসেবা লেন রাখা হয়েছে যাতে দ্রুত যানবাহনগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় চলাচল করতে পারে এবং এইভাবে দীর্ঘপথের যাত্রীদের ভ্রমণের সময় হ্রাস করতে পারে।
এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচটি ফ্লাইওভারের মধ্যে একটি ২.৩ কিলোমিটার কদমতলী-বাবুবাজার লিংক রোড ফ্লাইওভার রয়েছে। অন্য চারটি ফ্লাইওভার হলো আবদুল্লাহপুর, শ্রীনগর, পুলিয়াবাজার এবং মালিগ্রামে।
৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে জুরাইন, কুচিয়ামোড়া, শ্রীনগর ও আতাদিতে চারটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ রয়েছে এবং চারটি বড় সেতু রয়েছে যার মধ্যে ৩৬৩ মিটার ধলেশ্বরী -১, ৫৯১ মিটার ধলেশ্বরী -২, ৪৬৬-মিটার আড়িয়াল খান এবং ১৩৬-মিটার কুমার সেতু।
গতকাল এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রাবাড়ী-মাওয়া অংশ পরিদর্শন করে বাসস সংবাদদাতা দেখতে পান যে শ্রমিকরা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রাক্কালে নিরবচ্ছিন্ন দ্রুতগতির রাস্তায় চূড়ান্ত স্পর্শ দিচ্ছিল।
মাওয়ার নিকটবর্তী রাস্তার পাশে নিরালা রেস্তোঁরার মালিক মোহাম্মদ মাসুদ বলেছেন, এক্সপ্রেসওয়ের কারণে
মাওয়া থেকে ঢাকা যেতে আগের দুই ঘন্টার পরিবর্তে এখন ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে।
“এক্সপ্রেসওয়েতে যানজট না থাকায় বাস ও ট্রাক দ্রুতগতিতে চলাচল করতে পারে,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আগে পোস্তগোলা রেলপথ পারাপারে ৩০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট সময় লেগেছিল, তবে এখন মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই স্পটটি অতিক্রম করা যায়।
তিনি বলেন,“ভ্রমণের সময় হ্রাস হওয়ায় রোগীরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী থেকে খুব সহজেই মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন। দ্রুত যোগাযোগের অগ্রগতির কারণে এখন অনেক লোকই আমাদের এলাকায় ঘরবাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনা তৈরি করতে চায়।”
তিনি আশাবাদী তাঁর অঞ্চলটি একটি পর্যটন স্পটে পরিণত হবে।
বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানরত ব্রিটিশ বাংলাদেশী নাগরিক আরিফ চৌধুরী এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শন করে বলেছেন, “এটা চমৎকার, আমি অভিভূত । আমার কাছে মনে হয় আমি যুক্তরাজ্যের কোথাও আছি , এই এক্সপ্রেসওয়ের মান এবং সৌন্দর্য দেখে আমি গর্ব অনুভব করছি।”
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছে, বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করতে চলেছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button