রূপনগরে বিস্ফোরণ: মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ালো আটে
রাজধানীর রূপনগরে বেলুনে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ঝরে গেল আরও এক শিশুর প্রাণ।
তার নাম নিহাদ (৮)।
নিহাদসহ এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াল ৭-এ। আর এরা সবাই শিশু।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) দিনগত রাত ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউতে) চিকিৎসাধীন মৃত্যু হয় শিশু নিহাদের।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত নিহাদের মামা আনিস মিয়া জানান, ঢামেকের আইসিইউর ২২ নম্বর বেডে ভর্তি ছিল নিহাদ। বিস্ফোরণের ঘটনায় তার চোখে আঘাত লেগেছিল। চিকিৎসাধীন রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহাদের বাড়ি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলায়। বাবা শরু মিয়ার সঙ্গে রূপনগরের শিয়ালবাড়ি এলাকার ১২ নম্বর রোডে থাকত নিহাদ। স্থানীয় একটি ব্র্যাক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত সে। চার ভাইবোনের মধ্যে নিহাদ ছিল সবার ছোট।
বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রূপনগরের মনিপুর স্কুলের পূর্ব পাশে ১১ নম্বর সড়কের মাথায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এতে ৬ শিশু প্রাণ হারায়। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে ঢামেক, সোহরাওয়ার্দীসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যারা নিহত হয়েছে, তারা হলো- রমজান (৮), নূপুর (৭), শাহীন (৯), ফারজানা (৬), রুবেল (১১) এবং রিয়া (৭)। বুধবার রাতে মারা গেল নিহাদ (৮)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রূপনগর থানার এসআই লোকমান হোসেন জানান, যাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। তবে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঢামেক হাসপাতালে যাদের ভর্তি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১২ শিশু, দুজন পুরুষ এবং একজন নারী রয়েছেন।
তারা হলেন- জুয়েল (২৫), সোহেল (২৬), জান্নাত (২৫), তানিয়া (৮), বায়েজিদ (৭), জামেলা (৭), মিজান (৭), মীম (৮), ওজুফা (৯), মোস্তাকিম (৮), মোরসালিনা (৯), অর্নব ওরফে রাকিব (১০), জনি (১০) এবং সিয়াম (১১)। এদের মধ্যে সোহেল হলো বেলুন বিক্রেতা। জুয়েল রিকশাচালক। জান্নাত বাসাবাড়িতে কাজ করে। শিশুদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের পরিবারের।
ঢামেক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. আলাউদ্দিন জানান, আমাদের এখানে আসা ১৫ জনের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। আহতদের মধ্যে ৪-৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, রূপনগরের ঘটনায় আমাদের এখনে ১২ জন হতাহত এসেছে। এর মধ্যে ৫ জন মৃত। আহতাবস্থায় ৭ জন এসেছিল। তাদের মধ্যে দুজন এখন ভর্তি আছেন। তারা শঙ্কামুক্ত। এ ছাড়া দুজনকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে রেফার করেছি। তাদের শরীরের ৬০-৭০ ভাগ পুড়ে গেছে। এই দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তিনি বলেন, নিহতদের দেহ বিকৃত অবস্থায় আছে।
রূপনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, মনিপুর স্কুলের সামনে এক ব্যক্তি সিলিন্ডার থেকে বেলুনে গ্যাস ভরে শিশুদের কাছে বিক্রি করছিলেন। এ সময় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন। আহতদের মধ্যে কারও কারও হাত-পা বা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, যেভাবে গ্যাস তৈরি করে বেলুনে ভরা হতো, সেটি ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।