জাতীয়লিড নিউজ

প্রতি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যয় আড়াই লাখ টাকা

শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে নয়, সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা নিতেই যেন বেশি আগ্রহী অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আয়ের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় তারা। তাদের মাধ্যমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির (১৩ থেকে ২০তম গ্রেড) প্রতিটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গড়ে খরচ হয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা।

এতে যেমন একদিকে অপ্রয়োজনীয় অর্থ খরচ হচ্ছে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা-গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আর এ কারণেই সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণি পদে নিয়োগ বন্ধ করেছে সরকার। এখন থেকে আর এ খাতে কোনো ধরনের বরাদ্দও রাখা হবে না বলে পরিপত্র জারি করেছে অর্থ বিভাগ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

২৪ অক্টোবর অর্থ বিভাগের এক পরিপত্রে বলা হয়, সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং অধিদফতর বা সংস্থায় বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ (আগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের জন্য পাবলিক বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা অধীনস্থ দফতর সংস্থায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা বা প্রস্তাব করা যাবে না বলেও পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ পরিপত্রের নেপথ্যে রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অতি বাণিজ্যিক মনোভাব। তারা শিক্ষা কার্যক্রমের চেয়ে নিয়োগ পরীক্ষা নিতেই বেশি আগ্রহী। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হল- শিক্ষার্থীদের সময়োপযোগী শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশকিছু ক্ষেত্রে পেশাগত পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু কোনোভাবেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে কাজ করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ নয়। সম্প্রতি দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ, ব্যবসা প্রশাসন ইন্সটিটিউট, ফার্মেসি বিভাগ, গণিত বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও এমআইএসটিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সরকারের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রমে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে।

প্রতিটি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে উল্লেখ করে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসা প্রশাসন ইন্সটিটিউট (আইবিএ) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিজিডিএফ কার্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ২৫৬টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য চুক্তি করেছে। এর জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে দিতে হবে ৭.৭২ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনএসআইয়ের ১৭ ক্যাটাগরির ১৩৯৯টি পদে নিয়োগের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ও এমআইএসটিকে দিতে হবে ৩১.৫৮ কোটি টাকা। প্রতিযোগিতা কমিশনের নিয়োগ কার্যক্রমের জন্য ঢাবির বিজনেস ফ্যাকাল্টিকে দিতে হবে দশমিক ৬০ কোটি টাকা।

একইভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের জনবল নিয়োগে ঢাবির গণিত বিভাগকে দিতে হবে ১.৯৯ কোটি টাকা। খাদ্য অধিদফতরের ১১৬৬টি পদে নিয়োগের জন্য ঢাবির এমআইএসকে দিতে হবে ২৮.১২ কোটি টাকা। এছাড়া সমাজসেবা অধিদফতরের ৪৬৩টি পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য ঢাবির ফার্মেসি বিভাগের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের বাইরে গিয়ে সরকারের কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ায় শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও গবেষণা কাজের সময় কমে যাচ্ছে। একই সঙ্গে এমন কাজে সম্পৃক্ত হয়ে অতিরিক্ত অর্থ আয়ের প্রতিযোগিতায় তারা লিপ্ত হচ্ছেন; যা বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান সোমবার বলেন, সরকার যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা হলে সেখানে অনিয়মের প্রশ্ন ওঠে না। শতভাগ সততার সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় যা অন্য কোথাও মিলবে বলে মনে হয় না। সততার কারণেই সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রমের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button