রংপুর বিভাগসারাদেশ
পানি বন্দি কাজ-কাম নাই, আয় উন্নতি বন্ধ। খুব সমস্যাত আছি।’
কুড়িগ্রাম: পানিত বেরবের পাই না। বেরালেই খরচ। কাজ-কাম নাই, আয় উন্নতি বন্ধ। খুব সমস্যাত আছি।’ এভাবেই নিজের অক্ষমতার কথা জানালেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের খেয়ারচর গ্রামের দিনমজুর নজির হোসেন।
পানি ভেঙে বাতেন মিয়া ডিম নিয়ে গিয়েছিলেন খেয়ারচর হাটে বিক্রি করতে। বৃষ্টির কারণে লোকজন হাটে নাই। বিকাল ৪টার মধ্যে হাট বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অবিক্রীত ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তিনি।
গত ৭-৮ দিন ধরে এই এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় মানুষ এভাবেই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
জানা গেছে, সরাসরি ভারত থেকে নেমে এসেছে জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদী। এই তিন নদীতে অস্বাভাবিক পানিবৃদ্ধি হওয়ায় কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে আগাম বন্যা। রৌমারী-ঢাকা সড়কের পূর্ব অংশে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও পশ্চিম অংশে ব্রহ্মপুত্র, হলহলিয়া ও সোনাভরি নদী পানি তেমন বৃদ্ধি পায়নি। ফলে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বিচ্ছিন্ন এই দুই উপজেলার একটি অংশের মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে ভোগান্তি।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আশরাফুল আলম রাসেল জানান, ভারি বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরেছে। বন্যায় তলিয়ে গেছে ৩০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক। পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এছাড়া ২৮৩ হেক্টর ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
এ পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ পাওয়া ৩ লাখ টাকা দিয়ে শুকনো খাবার হিসেবে চিড়া, মুড়ি, চিনি, লবণ ও মোমবাতি কেনা হচ্ছে। দ্রুতই বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
বকবান্ধা ব্যাপারীপাড়া গ্রামের গৃহিণী নাজমা বেগম (৩৮) বলেন, বন্যায় বাড়িঘরে পানি উঠে নাই। কিন্তু সব সবজি ক্ষেত ডুবে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন রান্নার সবজি কেনা লাগাছে। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। কারণ আমার স্বামী কাজেও যেতে পারছে না।
খেয়ারচর রাবার ড্যাম এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, জমিতে খড় পরে আছে। ঘাসও পানিতে ডুবে আছে। গরু-ছাগল ও ভেড়া নিয়ে বিপদে আছি।
খেয়ারচর ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার নজরুল ইসলাম বলেন, আমার ওয়ার্ডের ৬ শতাধিক বাড়িঘরে পানি উঠেছে। লোকজন কোথাও বের হতে পারছে না। এখন পর্যন্ত পানিবন্দি লোকজন কোনো সরকারি সহযোগিতা পায়নি।
এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, জনপ্রতিনিধিদের বন্যা কবলিত এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে দুর্গতদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তবে রৌমারী ল্যান্ড পোর্ট পানিবন্দি হওয়ায় এই পোর্টের সঙ্গে জড়িত ৫-৬ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে। তাদের বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। যাতে তারা সহযোগিতা পান।