স্বাস্থ্য

ডিমের কুসুম স্বাস্থ্যকর নাকি অস্বাস্থ্যকর

ডিমকে বলা হয় পাওয়ার হাউজ অব নিউট্রিশন। অবশ্য তা বলার কারণও রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টি উপাদানই রয়েছে এতে। প্রোটিনের চমৎকার উৎস এই খাবারটি। তবে ডিম নিয়ে আমাদের আলোচনার শেষ নেই। একপক্ষের মতে ডিম দারুণ উপকারী। আবার অপরপক্ষের মতে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া গেলেও কুসুম না খাওয়াই উত্তম। ডিমের কুসুম কি আসলে ভালো নাকি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?

ডিমে ক্যালরি থাকে আসলে নামমাত্র। এতে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসহ অন্যান্য সব স্বাস্থ্যকর পুষ্টি উপাদান। একটি বড় সেদ্ধ ডিমে ৭০ ক্যালরি থাকে। যেখানে উচ্চমানের প্রোটিন থাকে ৬ গ্রাম। অর্থাৎ, হৃদরোগী বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ডিম খাওয়া উচিত নয়, এ কথা ভিত্তিহীন। তবে এমন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের কুসুম কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

ডিমের কুসুম কি তবে ক্ষতিকর?

অনেকেই ডিমের কুসুমে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল থাকায় তা বাদ দিয়ে কেবল সাদা অংশ খেয়ে থাকেন। একটি ডিমে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে যার সবটাই থাকে কুসুমে। তবে এই কোলেস্টেরলকে ক্ষতিকর ভাবা হলেও তা অতটা ক্ষতিকর নয়।

আমাদের শরীরে টেস্টোস্টেরন তৈরিতে কোলেস্টেরল প্রয়োজন রয়েছে। এই হরমোন শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ও পেশি গঠনে সাহায্য করে। আর ডিম থেকে সহজেই এই উপকারী কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। ডিমের কুসুম আয়রন সমৃদ্ধ। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন বি ২, বি ১২ এবং ডি এর মতো উপকারী সব উপাদান যা ডিমের সাদা অংশে নেই।

ইউনিভার্সিটি অব কানেকটিকাটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কুসুমে থাকা চর্বি দেহ থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এমনকি যারা ডায়েট করছেন তাদেরও কুসুম বাদ দেওয়া উচিত নয়। বর্তমান বাজারে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম পাওয়া যাচ্ছে, এ ডিমও হৃদরোগ ঝুঁকি কমায়। ফার্মের ডিমের তুলনায় দেশি ডিমে বেশি ওমেগা-৩ থাকে।

পুষ্টিবিদদের মতে, ডিমের কুসুম বাদ না দিয়ে প্রতিদিন কুসুমসহ একটি ডিম সকালের নাস্তায় রাখা উচিত। তবে কারও জন্য হৃদপিণ্ডজনিত সমস্যা থাকে, তবে তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন। প্রতিদিন বেশি সংখ্যক ডিমের সাদা অংশ না খেয়ে কুসুমসহ একটি ডিম খেলে তা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। তবে এক্ষেত্রে তেলে না ভেজে সেদ্ধ ডিম খেতে হবে।

তবে হ্যাঁ, কেউ যদি ডিমকে ওষুধের মতো ভেবে থাকেন এবং মনে করেন প্রতিদিন একটি ডিম খেলেই ওজন কমবে তবে তার ধারণা ভুল। কেননা, ওজন কমার ব্যাপারটির সঙ্গে জীবনযাত্রা, ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস সবকিছু যুক্ত থাকে। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি যদি সারাদিনের খাদ্যতালিকায় উচ্চ ক্যালোরির খাবার, ভাজাপোড়া, লাল মাংস, মিষ্টিজাতীয় খাবার ইত্যাদি রাখেন তাহলে কুসুমসহ একটি ডিম তার জন্য কখনই শুভকর হবে না।

ডিমের কুসুমের উপকারিতাগুলো-

● ডিমের কুসুমে যেসব উপকারী উপাদান থাকে তা হাড় মজবুত করে। এটি অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করে।

● দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ডিমের কুসুম। এতে রয়েছে কোলাইন নামক উপাদান যা মস্তিষ্ক ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি দাঁতের সুরক্ষায় বেশ কার্যকর।

● ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য রাখে এটি। নিয়মিত ডিমের কুসুম গ্রহণের মাধ্যমে ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায়।

● ডিমের কুসুম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

বুঝতেই পারছেন, ডিমের কুসুমের কত উপকারিতা। সেসঙ্গে ডিমও দেহের জন্য বেশ উপকারী। প্রতিদিনের সকালের নাস্তায় তাই একটি কুসুমসহ ডিম যোগ করতে পারেন নির্দ্বিধায়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button