আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংগঠিত সশস্ত্র বেসামরিক বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ লড়াই ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দিয়েছে এসব সশস্ত্র বাহিনীতে। লড়াইয়ের ব্যাপকতা ও তীব্রতা বাড়ায় এটি গৃহযুদ্ধে পরিণত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মিশেল বাশিলিত সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে মিয়ানমারে সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।

এখনই এর সমাধান না করলে নষ্ট হবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা।

 

যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাকলেডের (আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট) তথ্য অনুযায়ী, সংঘাতের বিস্তৃতি ঘটেছে পুরো দেশে। সেনাদের সঙ্গে বেসামরিক বাহিনীর এই সংঘাত ক্রমাগতভাবে সমন্বিত হয়ে উঠেছে। এর আগে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন সশস্ত্র প্রতিরোধ দেখা যায়নি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, মিয়ানমারে এক বছরের দীর্ঘ অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে দমন-পীড়নে অন্তত এক হাজার ৫০০ জন নিহত হয়েছে। সেই সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে আরো কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

সশস্ত্র সংঘাতে হতাহতের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা যাচাই করা কঠিন। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে করা অ্যাকলেডের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রায় ১২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সাংঘাত আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বেসামরিক নাগরিকরা অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মিশেল বাশিলিত বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতকে এখন গৃহযুদ্ধ বলা উচিত। পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। মিয়ানমারের এই সংকটের বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দ্রুত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিস্থিতি ‘বিপর্যয়কর’। বর্তমানের এই সংঘাত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

সরকারি বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারে যারা সংঘাতে জড়িত, তাদের সম্মিলিতভাবে বলা হয় পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। এর সদস্যরা বেশির ভাগই তরুণ। পিডিএফে যোগ দেওয়া ১৮ বছরের এক তরুণ বলেন, অভ্যুত্থানের পর তিনি যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেন, তখন সবেমাত্র স্কুল পার করেছেন। জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ছাত্র থওয়ে থুয়ে খাইং গুলিতে নিহত হওয়ার পর তিনি পিডিএফে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পিডিএফে শুধু ওই তরুণ ছাত্রই নয়, জান্তা সরকারকে উত্খাতের প্রত্যয় নিয়ে কৃষক, গৃহিণী, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ওই সশস্ত্র সংগঠনে যোগ দিয়েছে। পুরো দেশেই রয়েছে পিডিএফের ইউনিট।

মিশেল বাশিলিত বলেন, ‘অনেক বেসামরিক লোক ওই মিলিশিয়া বা পিডিএফে যোগ দিয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন থেকে আমি বলে আসছি, আমরা যদি এ বিষয়ে এখনই শক্তভাবে কিছু না করতে পারি, তবে এটা সিরিয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করবে। ’

সাবেক ব্যবসায়ী নাগার মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে পিডিএফের কয়েকটি ইউনিট নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি বলেন, পিডিএফের প্রধান শক্তি জনগণ। জনগণ তাদের সহায়তা করে যাচ্ছে। নাগার বলেন, ‘গোলটেবিল বৈঠকে সমস্যা সমাধানের পথ আর নেই। সারা বিশ্ব আমাদের দেশকে উপেক্ষা করছে। কাজেই যা করার আমাদেরই করতে হবে। ’

গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক মুখপাত্র রবিনা শামদাসানি বলেন, এই এক বছরে মিয়ানমারে কাস্টডিতে থাকা আট হাজার ৭৯২ জনসহ বেআইনিভাবে আটক হয়েছে অন্তত ১১ হাজার ৭৮৭ জন।

জেনেভায় এক ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারে বেআইনিভাবে ধরপাকড়ের এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন শামদাসানি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য মানুষজনকে এভাবে আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শামদাসানি বলেন, ‘আমরা এক হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু নথিভুক্ত করেছি। তবে এই হিসাব শুদু বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সেনাবাহিনীর কাস্টডিতে নির্যাতনে মারা যাওয়া ২০০ মানুষও। ’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button