মানশসেন সিনড্রোম : অসুস্থতার নাটক করে মনোযোগ আকর্ষণ!
মানশসেন সিনড্রোম:
অফিসে ছুটি নেওয়ার জন্য মিছেমিছি অসুখের ভান করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু অসুখের ব্যাপারে মিথ্যে অভিনয় করা, অসুস্থ হওয়ার ভান করা এবং এই ব্যাপারটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করার ঘটনাটি মানসিক সমস্যার কারণেও হতে পারে। এই মানসিক অসুখের নাম মানশসেন সিনড্রোম। ফ্যাক্টিশাস ডিজঅর্ডার বলেও পরিচিত এই অসুখ।
এক্ষেত্রে, আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে অসম্ভব অসুস্থ বলে ভাবেন এবং এ নিয়ে মিথ্যে কথা বলে থাকেন। সাধারণত, বাড়তি মনোযোগ পাওয়ার জন্যই এমনটা করে থাকেন তারা। শিশু এবং বয়স্ক- প্রত্যেকের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষেরা এমন সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন।
এতে আক্রান্তরা একের পর এক হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের কাছে যান নিজেকে অসুস্থ প্রমাণের জন্য। অনেকসময় অসুস্থতা দেখানোর জন্য নিজেকে আহত করা বা কোনো রাসায়নিক পদার্থ শরীরে প্রবেশ করানোর ব্যাপারও তারা করে থাকেন।
অনেকেই হয়তো অফিসে ছুটি পাওয়ার জন্য, কোনো মামলায় জেতার জন্য বা মাদক গ্রহণের জন্য এমনটা করে থাকেন। তবে মানশসেন সিনড্রোমের আওতায় সেগুলো পড়ে না। এই সিনড্রোমে আক্রান্তরা নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই এমন কাজগুলো করে থাকেন। সাধারণত, আবেগীয় দিক দিয়ে অসম্ভব মানসিক কষ্টে ভুগে থাকেন তারা। আর সেটার ফলাফল কাজ করে এ ক্ষেত্রে। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অসুস্থতার ভান করতে থাকেন এই ব্যক্তিরা।
লক্ষণগুলো কী?
মানশসেন সিনড্রোমের ক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায়-
১। কোনো প্রমাণ ছাড়াই নিজের শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কে বারবার এবং খুব বড় আকারে বলতে থাকা
২। বারবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া
৩। শরীরে অনেকগুলো ক্ষত থাকা
৪। শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণের সাথে পরীক্ষার ফলাফল না মেলা। এই লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে আরও বেড়ে যাওয়া।
৫। অপারেশন, ওষুধ ইত্যাদির প্রতি বাড়তি আকর্ষণ থাকা।
৬। হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে রোগীর পরিচিত কেউ না আসা। রোগীর হাসপাতালে একাই থাকতে চাওয়ার মানসিকতা।
৭। কোনো অসুখ সম্পর্কে অনেক ভালো জ্ঞান থাকা ইত্যাদি।
এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি:-
নিজের পরিবারে থাকা বড় কোনো অসুখের কথা বলে নিজেকেও অসুস্থ বলে দাবি করেন। ব্যথা, জ্ঞান হারানো ইত্যাদি নানারকম লক্ষণের কথা উল্লেখ করেন। নিজেকে আহত করেন। নিজেকে অসুস্থ করার জন্য নানারকম ওষুধ ও মাদক গ্রহণ করেন। সুস্থ হওয়ার কোনো চেষ্টাই করেন না। এছাড়া চিকিৎসকের দেওয়া রিপোর্টগুলোও যতটা সম্ভব বদলে ফেলার চেষ্টা করেন।
কারণ কী?
এই সমস্যার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে-
১। পরিচিত আর কারো একই সমস্যা থাকা
২। ছোটবেলায় শারীরিকভাবে প্রচণ্ড অসুস্থ থাকা
৩। ছোটবেলায় নির্যাতিত হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকা
৪। পার্সনালিটি ডিজঅর্ডার, পরিবেশের সাথে মানিয়ে না নিতে পারা
৫। চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার আগ্রহ থাকলেও তা না করতে পারা
৬। আত্মবিশ্বাসের অভাব
৭। নিজের খুব কাছের কোনো মানুষকে হারানো ইত্যাদি কারণে এমনটা করে থাকতে পারেন একজন ব্যক্তি।
আক্রান্তরা এ ক্ষেত্রে নিজেদের শারীরিক সমস্যার ব্যাপারে বিশ্বাস করাতে খুব পটু হয়ে থাকেন। ফলে চিকিৎসককে মূল কারণ খুঁজে পেতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়।
সাধারণত, মনশসেন সিনড্রোমের ভুক্তভোগীরা বড় রকম বিপদে পড়ে যান। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে অসুস্থতা তৈরির উদ্দেশ্যে নিজেদের ক্ষতি করে ফেলেন তারা। অন্যদিকে, খুব ভালো কোনো চিকিৎসা যে এর আছে তাও নয়।
অনেকসময় যে রোগ নেই সেটার চিকিৎসা করতে গিয়েও শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন। এমন নয় যে, আপনার পাশের মানুষটির অসুস্থতা তার কল্পনা বা ভান। তবে সেটা যেটাই হোক না কেন, চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। মানুষটির পাশে থাকুন। তাকে বোঝান তার অসুস্থতা সম্পর্কে। আপনি যে তার পাশে আছেন সেটা জানান। এতে করে ধীরে ধীরে তার ভেতরে কারো মনোযোগ আর আকর্ষণ পাওয়ার জন্য অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা কমে আসবে।