আন্তর্জাতিক

সৌদির উচিত রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা, দাবি পুতিনের

নিজেদের সর্ববৃহৎ দুই তেলক্ষেত্র আক্রান্ত হওয়ার পর সৌদি সরকারের উচিত রাশিয়ার কাছ থেকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা। এমনটাই মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তুরস্কে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর ‘আনাদোলু এজেন্সি’র।

সৌদির তেলক্ষেত্রে হামলার ইস্যুটি উল্লেখ করে ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘রিয়াদের কাছে নিজেদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রি করে মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রটির জনগণ ও তেলক্ষেত্রগুলোকে রক্ষায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত মস্কো।’

এ দিকে মার্কিন গণমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’ বলছে, সৌদি আরবের কাছে রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার প্রস্তাব দিয়ে দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রকে উপহাসের পাত্র বানাতে চাইছেন পুতিন। এর মাধ্যমে তিনি যতটা না রিয়াদকে বার্তা দিতে চেয়েছেন; তার চেয়ে বেশি বার্তা দিতে চাইছেন সৌদির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ওয়াশিংটনের প্রতি।

কেননা মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির সমরাস্ত্র ক্রয়ের সব থেকে বড় উৎস যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বারংবার সৌদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন।

যদিও বিশ্লেষকদের মতে, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপহাস কেবল শতভাগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিই ছিল; এমনটা ঠিক নয়। কেননা যে সংবাদ সম্মেলনে তিনি রিয়াদকে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয়ের জন্য প্রস্তাবটি দেন; সেখানেই তার পাশে ছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। আর সেই ইরানকেই এবার তেলক্ষেত্রে হামলার জন্য দায়ী করে আসছে সৌদি আরবসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার পুতিন যখন বক্তব্যটি দিচ্ছিলেন তখন ইরানি প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দুজনের চোখেই হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছিল।

তুরস্কে সফররত রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা সৌদি আরব ও তাদের জনগণের সুরক্ষায় সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত। ইরানের মতো তাদেরও অতি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। আর তা হলো রাশিয়ার তৈরি ‘এস-৩০০’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করা।’

তিনি বলেন, ‘রুশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সৌদির সকল অবকাঠামোকে যে কোনো হামলা থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। তাছাড়া তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানও আমাদের কাছ থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ‘এস-৪০০’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

অপর দিকে আরামকোর দুই তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলার নেপথ্যে ইরানকে জড়িত দাবি করে একটি স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করেন, ভয়াবহ সেই হামলার সঙ্গে তেহরানই জড়িত।

সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আরামকোর পৃথক তেল স্থাপনায় হামলার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এরই মধ্যে টেলিফোনে সৌদি যুবরাজের কথা হয়েছে। এ সময় এমবিএস খ্যাত যুবরাজ সালমান বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের হামালা মোকাবিলায় রিয়াদ পুরোপুরি সক্ষম। আমাদের সেনারা এর জন্য সর্বদাই প্রস্তুত।’

যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাৎক্ষণিক এমবিএস খ্যাত সৌদি যুবরাজকে বলেছিলেন, ‘ড্রোন হামলার পর সৌদি আরবের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তা করতে প্রস্তুত। যে কোনো সময় সৌদি চাওয়া মাত্র মার্কিন প্রশাসন তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।’

এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘সৌদির ইস্টার্ন প্রদেশে অবস্থিত তেল স্থাপনাগুলোতে ইয়েমেনের ড্রোন হামলার পেছনে তেহরানও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।’ যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব অভিযোগ এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে শিয়াপন্থি সশস্ত্র সংগঠন হুথি বিদ্রোহীরা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button