অর্থনীতি

‘জবাবদিহীতার ভয়ে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসছে না’

কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, যা এই বাজারের গভীরতা বাড়াতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান। একইসঙ্গে বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার ভয়ে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না।

শনিবার বেলা সাড়ে ১২ রাজধানীর বিজয় নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, যা এই বাজারের গভীরতা বাড়াতে সাহায্য করবে এমন উক্তি করে ছায়েদুর রহমান বলেন, বহুজাতিক ও বেসরকারি খাতের স্বনামধন্য কোম্পানীকে বাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য নীতি সহায়তা দরকার। বর্তমানে ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ পাওয়ায় অনেক কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। কারণ তারা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার সম্মুখীন হতে চায় না।

আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ফান্ড নিয়ে যুগান্তকারী নীতি সহায়তা দিয়েছে। যা ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ এবং সাহস যোগাচ্ছে। এ সহায়তা কোন প্রকার দান বা ভর্তুকি না। ফলে এটা নিয়ে অপপ্রচার করার কোন কোন সুযোগ নেই। তারপরও কেউ কেউ বিষয়টিকে ব্যাংকের জন্য বোঝা, টেক্সের টাকা ইত্যাদি ভুল ব্যাখা প্রদান করছেন। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরী করতে পারে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ছায়েদুর রহমান বলেন, হংকংয়ের পুঁজিবাজার খুবই শৃঙ্খল। সেখানেও বছরে তালিকাভুক্ত হওয়া ২০০ কোম্পানির অর্ধেক অভিহিত মূল্যের নিচে চলে আসে। আমরা যে ভারতের বাজারকে অনুসরন করি, সেখানে প্রথম দিনেই অনেক কোম্পানির শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হয়।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব কোম্পানির শেয়ার দর বেশি উত্থান-পতন হয়, সেসব শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি। তারা পিই ৩ এর নিচে থাকা শেয়ারে আগ্রহ দেখায় না। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান পিই ১২ এবং ভারতের পিই ২৮ বলে যোগ করেন।

ছায়েদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি অনুকল ছিল না। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে বিশ্লেষনে বুঝা যায় যে, বাজারে অর্থের যোগান কম ছিল। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের জন্য বাজার মধ্যস্থতাকারিদের অংশগ্রহন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহনের সুযোগ করার জন্য অর্থমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছিলাম। কোন প্রকার দান বা ভর্তুকির প্রস্তাব করি নাই।

বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য ৬টি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। এরমধ্যে রয়েছে- পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশ গ্রহন বৃদ্ধি করা, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা ব্যবস্থা করা, আইসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, বাজারে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্দ্যোগ গ্রহন করা এবং বাজারে আরও ভালো ও মানসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে বহুজাতিক কোম্পানী ও সরকারীলাভজনক কোম্পানী আনা। এসব বিষয়াদি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে এবং পুঁজিবাজার আরও গতিশীল হবে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে বিএমবিএর পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামিতে কিছু বিষয়ে গুরুত্ব দেবে বিএমবিএ। এরমধ্যে রয়েছে- বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা; সরকারের নীতি নির্ধারনী পক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও সমন্বয় সাধন করা; পুঁজিবাজারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে সমন্বয় সাপেক্ষে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সমুন্নত রাখা; ভাল উদ্যোক্তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো; পুঁজিবাজারের আকার বৃদ্ধিতে গুনগত মান সমৃদ্ধ বৃহৎ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভূক্তির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে সমন্বয়ের চেষ্টা করা; পুঁজিবাজারের সার্বিক মূল্যায়নের জন্য সকল অংশীজনের সমন্বয়ে প্রতি ছয় মাসে ১টি বড় সেমিনার করার উদ্যোগ নেয়া; আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অথচ আমাদের পুঁজিবাজারে অনুপস্থিত, সেই সকল বিষয়ে অংশীজনদের সাথে আলোচনা ও সমন্বয় করা; বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সমন্বয়ে বছরে ১টি আন্তর্জাতিক সেমিনার করা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএমবিএর সাধারন সম্পাদক রিয়াদ মতিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান, নির্বাহি সদস্য মাহবুব এইচ মজুমদার, নুর আহামেদ, মো. হামদুল ইসলাম ।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button