সম্পাদকীয়

করোনা চিকিৎসায় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে টিএমএসএস

বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং বিস্তার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও এক অভূতপূর্ব সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মাত্র কিছুদিন আগেও যারা ভেবেছিলেন এই সমস্যা শুধুমাত্র চীন, ইতালী বা স্পেনেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তাদেরকে ভুল প্রমাণিত করে ভাইরাসটি আমাদের এ সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সামনে। ভাইরাসটির কড়াল থাবায় দেশে একদিকে যেমন প্রতিনিয়তই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক তেমনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নিত্য নতুন নাম। আপাতদৃষ্টিতে এই সংখ্যা কমার কোনো লক্ষণ দেখা না গেলেও এই তালিকা যে আরো সম্প্রসারিত হবে, তাতে কোনো সংশয় বা সন্দেহের অবকাশ নেই। বিশ্বব্যাপী মহাআতঙ্ক সৃষ্টিকারী এই ভাইরাসটি দেশকে মারাত্মক স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয়, ইতোমধ্যেই এই মহামারিকে কেন্দ্র করে দেশের চিকিৎসা সেবায় এক ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশাপাশি অন্যান্য রোগীদেরও চিকিৎসা সেবা পাবার জন্য এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়ানোরা অসংখ্য ঘটনা এখন দেশের পত্র-পত্রিকা এবং সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।

আজ করোনা নিয়ে কোনো আন্তর্জাতিক, দেশীয় বা স্থানীয় তথ্য দেবার প্রয়োজন নাই। কারণ এই তথ্যগুলো এখন সবারই জানা। তবে টিএমএসএস করোনা চিকিৎসায় যেভাবে এবং যে কাজগুলো করছে, তা এই লেখা থেকে যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জানতে পারে বা প্রয়োজনে সহায়তা নিতে পারে, সেটাই উদ্দেশ্য। দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম থেকেই টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টর সরকারের গৃহীত কর্মসূচির পাশাপাশি ধারাবাহিক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বিরাজমান সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখছে। সংকট মোকাবেলায় প্রতিরোধ এবং প্রতিকার দুই বিষয়ের উপরই জোর দিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি।

তথ্য মতে, দেশের মোট হাসপাতাল শয্যার ৬৪ শতাংশ বেসরকারি তত্ত্বাবধানে। কিন্তু করোনা সংকটে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের অংশগ্রহণ এখনো উল্লেখযোগ্য নয়। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চেম্বার চিকিৎসা সেবা সীমিত করেছে, বা অনেকক্ষেত্রে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ৭৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালটি বগুড়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের করোনা আক্রান্ত রোগী এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তি এবং সাধারণ রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের জন্য হাসপাতালটির একদল দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মী, প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্ট সকলেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এমন দূর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে কোনো রোগী যেন হাসপাতালের সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য সদা তৎপর রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীগণ।

ফেব্রুয়ারী হতে টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টর করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণসহ প্রতিকার করার গাইডলাইন প্রস্তুত করে তা বাস্তবায়ন করে আসছে। সময় সময় দেশের, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক তথ্যের ভিত্তিতে গাউড লাইনসমূহ প্রতিনিয়ত আপডেট হচ্ছে। আবার আপডেট তথ্যসমূহ চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে শেয়ার হচ্ছে নিয়মিতভাবে। এ পর্যন্ত টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরে কর্মরত ১০০জন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট, ৪০০জন নার্স, ৫৭জন ল্যাব টেকনোলজিস্ট, ৩০০জন চিকিৎসক এবং টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অধ্যায়নরত প্রায় তিন হাজার মেডিকেল, নার্সিং, প্যারামেডিক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোভিড-১৯ এ করণীয় নিয়ে সেমিনারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ চলমান আছে।

কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য মোট ৮টি (৪টি পুরুষ এবং ৪টি মহিলা) ওয়ার্ড এবং ৮০টি শয্যা রয়েছে। উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য কোভিড সাসপেক্ট ওয়ার্ড, আক্রান্ত রোগীদের জন্য করোনা পজেটিভ ওয়ার্ড এবং কোভিড হতে সুস্থ রোগীদের জন্য কোভিড রিকোভারী ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। একই সাথে হাসপাতালটিতে ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ ১০ বেডের একটি আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করার জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আরটি-পিসিআর ল্যাব চালু করেছে হাসপাতালটি। অপরদিকে করোনায় চিকিৎসায় নিয়োজিত স্টাফদের জন্য পৃথক একটি প্রাতিষ্ঠানিক স্টাফ কোয়ারেন্টিন সেন্টারও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১লা জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ১২১ জন কোভিড আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং ১০৩২ জনের কোভিড পরীক্ষা করা হয়েছে। তন্মধ্যে ৩৯৬ জন রোগীর ফলাফল পজিটিভ হয়েছে অর্থাৎ মোট পরীক্ষাকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা পজিটিভ হওয়ার হার প্রায় ৩৯ শতাংশ। কোভিড রোগীর চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অক্সিজেন থেরাপী। দেখা গেছে ভর্তি হওয়া ১২১ জন রোগীর মধ্যে প্রায় ৮২জনকে (৬৮%) অক্সিজেন দিতে হয়েছে। চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ন্যাশনাল গাইডলাইন মোতাবেক। হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষাকৃত কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০৬জন পুরুষ (৭৭.৪%) এবং ৯০জন নারী (২২.৬%)। অপরদিকে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, আক্রান্তদের মধ্যে ১-১০ বছর বয়সের মধ্যে ৮জন (১.৯%), ১১-২০ বছরের মধ্যে ২১জন (৫.৪%), ২১-৩০ বছরের মধ্যে ৪৭জন (১১.৯%), ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ৮৫জন (২১.৫%), ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ৯৭জন (২৪.৫%), ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ৮৫জন (২১.৫%) এবং ৬০ বছরের উর্দ্ধে রয়েছে ৫৩জন (১৩.৪%)।  আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই (প্রায় ৯২%) বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলার নাগরিক, যার মধ্যে বগুড়া সদর উপজেলার ৭৭ শতাংশ। তবে পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁ এবং সিরাজগঞ্জ জেলারও কিছু ব্যক্তি (৮%) রয়েছেন। ভিড রোগীর চিকিৎসার জন্য প্লাজমা থেরাপী প্রদানের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে। এছাড়াও যাবতীয় ল্যাব পরীক্ষা বিশেষ করে ডি-ভাইমার টেস্টও করা হচ্ছে, যা দিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টি বোঝা যায়।

অপরদিকে, নন-কোভিড অর্থাৎ কোভিড আক্রান্ত নন এমন সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালের বর্হিবিভাগ এবং আন্তঃবিভাগ চালু রয়েছে। সকল রোগীকেই বিশেষ করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, পক্ষাঘাত, হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট, লিভার ও কিডনির রোগ, গর্ভবতী নারী ও প্রসূতি সেবা ইত্যাদির সেবা নিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন প্রদান, কিডনী ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান, সিসিইউ, ডে-কেয়ার চালু রেখে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। নন-কোভিড রোগীদের জন্যেও একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে, সেই মোতাবেক তাদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, হাসপাতালে আগত রোগীদের যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ তথা হাসপাতালে প্রবেশ এবং বর্হিগমনের পৃথক পথ, সম্পূর্ণ হাসপাতালকে কোভিড ও নন-কোভিড জোনে বিভক্ত করা এবং লাল, হলুদ ও সবুজ রং দ্বারা জোনগুলো পৃথকভাবে দৃশ্যমান করা, প্রতিটি প্রবেশমুখে হাত ধোয়া ও শুকানোর ব্যবস্থা করা, শরীরে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, শরীরে তাপমাত্রা পরিমাপ করা, লিফটসমূহকে পৃথক করা, হাসপাতালের ভিতরে ও বাহিরে খোলা জায়গাসমূহে নিয়মিতভাবে জীবণুশক স্প্রে করাসহ জীবাণুক্তকরণ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান এই করোনাজনিত দূর্যোগের সময় চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবাইকে উদ্বিগ্ন করছে, তা হচ্ছে চিকিৎসায় সেবায় নিয়োজিতদের মধ্যে করোনার সংক্রমন ভীতি। বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে স্বাভাবিক সময়েই চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত জনবলের স্বল্পতা রয়েছে, ঠিক তখন স্বাস্থসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে করোনার সংক্রমন ভীতি এই সংকটকে আরো গভীরে ঠেলে দিয়েছে। টিএমএসএস হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সাথে সংশ্লিষ্ট জনবলদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এলক্ষ্যে হাসপাতাল থেকে প্রোটেক্টিভ গাউন, এন ৯৫ বা সমমানের মাস্ক, আইশিল্ড, ফেস প্রটেক্টর, হেড কভার, সু কভার, গ্লাভস প্রভৃতি সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হয়। এছাড়াও সকল কর্মী তথা চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্ট স্টাফ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক প্রবেশমুখ এবং বর্হিগমন পথ নিশ্চিত করা, পৃথক লিফটের ব্যবস্থা করা, প্রবেশমুখে হাত ধোয়া এবং হাত শুকানোর ব্যবস্থা, জীবাণুনাশক দ্বারা শরীরে স্প্রে করা প্রভৃতি ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। Triage System এর মাধ্যমে (ফিজিক্যাল, ম্যানপাওয়ার, লজিসটিকস প্রভৃতি তিন স্তরে বিভক্ত) আউটডোর, ইনডোর ও অন্যান্য সার্ভিস প্রদান করা হচ্ছে। ফলে কোভিড ও নন-কোভিড সেবা কার্যক্রম স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়োজিত করে পরিচালনা করা হচ্ছে। আরো রয়েছে হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলাব্যাথা নিয়ে আগত রোগীদের জন্য পৃথক বহিঃবিভাগ সার্ভিস (ফিভার ক্লিনিক)।

এর বাইরেও চিকিৎসায় নিয়োজিত জনবল বিশেষত চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট এবং অন্যান্য সাপোর্ট স্টাফদের সুরক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ বা ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণসমূহের মধ্যে ছিলো করোনা রোগী ও ওয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট, পিপিই ডোনিং ও ডোফিং এবং বিনষ্ট প্রক্রিয়া প্রভৃতি। করোনা রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা, সেবায় নিয়োজিতদের সুরক্ষা প্রভৃতি বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য ৬টি গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। ট্রায়েজ (Triage) গাইডলাইন, করোনা ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইন, স্বাস্থ্য বিধি গাইডলাইন, পিপিই রি-ইউজ সংক্রান্ত গাইডলাইন, পিপিই, স্যানিটাইজার, মাস্ক, গ্লাভ্স, গামবুট, হেড কভার, সু কভার, গগলস, ফেস শিল্ড ইত্যাদি বিতরণ সংক্রান্ত গাইডলাইন এবং পিপিই অটোক্ল্যাভ সংক্রান্ত গাইডলাইন।

এসব প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরের পক্ষ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের আগ থেকেই বিভিন্ন ধরণের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষত: ভাইরাসটি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে টিএমএসএস হাসপাতালটিতে কর্মরত প্রায় নয় শতাধিক চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট এবং সাপোর্ট ষ্টাফসহ অন্যান্য কর্মীদের এবং মাঠ পর্যায়ের সাব-ক্লিনিকসমূহে কর্মরত তিন শতাধিক কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ‘নভেল করোনাভাইরাস ২০১৯ ডিজিস কোভিড-১৯ আপডেট’ শীর্ষক তিনটি পৃথক সাইন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। মাঠ পর্যায়েও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেক্টরের পক্ষ থেকে সচতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় টিএমএসএস’র ৯৬ টি সাব-ক্লিনিক (টিএইচসিসি) ও ৪টি ফিল্ড হাসপাতালের মাধ্যমে এপর্যন্ত সংস্থাটির ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার গ্রুপ সদস্যদের মাঝে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, প্রায় দশ লক্ষ লিফলেট মুদ্রণ ও বিতরণ করা হয়েছে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।

বর্তমান এই দূর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টর হোম কেয়ার বা ফিল্ড লেভেল মেডিকেল সার্ভিস কর্মসূচি চালু করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় মোবাইল হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে মেডিকেল টিম, মাঠ পর্যায়ে মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ও প্যারামেডিকদের সহায়তায় ক্রনিক ডিজিজ (ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, কিডনী জনিত সমস্যা প্রভৃতি) রোগীদের সাব-ক্লিনিক ও রোগীর বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।কোন রোগী বাসায় ঔষধ চাইলে হাসপাতালের ফার্মেসী থেকে তাকে হোম ডেলিভেরী দেয়া হচ্ছে। করোনার যুদ্ধের এই সংকটকালীন সময়ে পিপিই, মাস্ক কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চাহিদা পূরণ করার জন্য টিএমএসএস হাসপাতালের উদ্যোগে পঁচিশ হাজার নিরাপত্তা গাউন, ত্রিশ হাজার মাস্ক ও পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে প্রদান করেছে। এর বাইরেও টিএমএসএস হ্যান্ডিক্রাফটস নিয়মিতভবে নিরাপত্তা গাউন ও মাস্ক উৎপাদন, বিতরণ এবং বাজারজাত করছে।

একই সাথে CPAP Machine, VPAP Machine, High flow Oxygen Delivery System, Oxygen Retaining Mask হাসপাতাল সেবায় সংযোজন করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী স্বাভাবিক সময় বিবেচনায় টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টর বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সেবায় আইসিটি কার্যক্রমের সম্প্রসারণ, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, প্যালিয়েটিভ কেয়ার, কম্প্রেহেনসিভ ক্যান্সার কেয়ার, ইনভেসিভ কার্ডিয়াক কেয়ার ইত্যাদি। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, ডিপ্লোমা মেডিকেল ইনস্টিটিউটসমূহে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

কোডিভ হাসপাতালের নির্ধারিত গাউডলাইন অনুসরন করে অধ্যাপক ডা. মোঃ মাসুদুর রহমান, বিভাগীয় প্রধান (মেডিসিন), ডা. মোঃ আজিজুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক (রেস. মেডিসিন) এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে অন্যান্য বিভাগের কনসালন্টেদের সহযোগীতায় একদল তরুণ চিকিৎসক এই মহামারী রোগের চিকিৎসা প্রদানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় যে ব্যক্তির অবদান অনস্বীকার্য, তিনি অত্যন্ত পরিচিত একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরের নির্বাহী উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর (পাভেল)। টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরে কোভিড অ্যাড্রেস করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটি রয়েছে। যেখানে মোট নয় জন সদস্য রয়েছেন। এই কমিটি সকল পলিসি এবং গাইডলাইনগুলো প্রস্তুত করে এবং বাস্তবায়ন কার্যাদি মনিটরিং করে। টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরের এই যাবতীয় কার্যাদি যার নির্দেশনায় এবং সকল প্রকার সহযোগীতায় পরিচালিত হচ্ছে, তিনি টিএমএসএস এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে-আরা বেগম। তিনি লিখিতভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মীদের যাবতীয় চিকিৎসা, প্রনোদনাসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয়ের। আরো উল্লেখ করতে চাই, কোভিড চিকিৎসায় স্বাস্থ্য সেক্টরকে সার্বক্ষণিক সহযোগীতা করছেন টিএমএস সিস্টার অর্গানাইজেশন বিসিল গ্রুপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক টি. এম. আলী হায়দার। এছাড়া স্বাস্থ্য সেক্টরের নিবেদিত কর্মী বাহিনী। বিশেষ করে নির্বাহী কর্মকর্তা (হাসপাতাল) মোঃ আলমগীর হোসেন।

আরও একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করতে চাই, তা হলো- কোভিড নিয়ে সৃষ্ট মানসিক চাপ। এই সমস্যা স্বাস্থ্য কর্মীদের মধ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে এক ধরণের ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে এবং হতাশা তৈরী করছে। এতে করে স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে অনেকটা বিমুখ হচ্ছে। এ বিষয়টি দেখা খুবই জরুরী। তাদেরকে মানসিকভাবে সাহস যোগানোর দায়িত্ব পালন করতে হবে রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও পরিবারকে। রোগীদেরও মানসিক অবস্থা রোগের আরোগ্যতে ভূমিকা রাখে। তাই সবার মোটিভেশন অ্যানহেন্স করাটা অত্যন্ত জরুরী। টিএমএসএস তথা টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টর এই সবগুলো ইস্যু নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও কাজ করে যেতে চায়। আমাদেরও মোটিভেশন প্রয়োজন, যা সবার সহযোগীতা থেকে নিয়মিত পাচ্ছি। এজন্য সবাইকে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ।

লেখক: রোটা. ডা. মোঃ মতিউর রহমান
এমবিবিএস,এমপিএইচ,পিএইচডি
উপ-নির্বাহী পরিচালক, টিএমএসএস।

সহযোগী অধ্যাপক, পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট
পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button