সম্পাদকীয়

কোভিড-১৯ সহ করোনা ও অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমনে করনীয়

বিজ্ঞানী ও রোগতত্ত্ব গবেষকগণের ভাষ্যে জানা যায় যে, ব্যাক্টেরিয়া, উদ্ভিদ ও প্রাণী বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতামত জনিত যত টানা টানিই থাকুক না কেন, এদের জীবন আছে। ভাইরাস একটি আল্ট্রা মাইক্রো অর্গানিজম, যার গঠন প্রোটিন দ্বারা উপরিস্তর আর এন এ (রাইবো নিউক্লিক এসিড) এবং অভ্যন্তর ভাগ ডিএনএ (ডি-অক্সি রাইবো নিউক্লিক এসিড) নামক জিন দ্বারা গঠিত। কোভিড-১৯ নামক ভাইরাসটি তার কায়া রুপ কয়েকশত বার পরিবর্তন করে বর্তমানে যে আকার ধারণ করেছে, তা দেখতে অনেকটা পিয়াজের ফুলের মতো। এই ভাইরাস সংক্রমিত মানুষের কাঁশি, হাঁচির মাধ্যমে নাসিকা ও মুখ গহবর হতে বাহিরে ধাবিত ড্রপলেট অন্য কোন মানুষের হাতে আসবাবপত্রে, টাকা পয়সায়, কাপড়-চোপড় ও কাগজ-কলমে লেগে গেলে স্পর্শের মাধ্যমে এই ভাইরাস সুস্থ মানুষের দেহে সংক্রমন ঘটায়। ভাইরাস সমৃদ্ধ হাত দ্বারা চোখ, মুখ, নাক স্পর্শ করলে এ ভাইরাস চোখ, মুখ ও নাকের মাধ্যমে দেহে সংক্রমিত হয়। কোভিড-১৯ এই বহুমুখী পদ্ধতিতে ব্যাপক সংক্রমন ঘটাতে সক্ষম একটি ভাইরাস। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল গণচীনের উহান প্রদেশে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে, প্রাকৃতিকভাবে বা খোদা প্রদত্ত প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে, না কি চীনের বিজ্ঞানীদের দ্বারা এই ভাইরাসের জন্ম হয়েছে, এই বিতর্কে যাওয়া বা ভাবার সক্রিয় সক্ষমতা আমার নাই। তবে ভাইরাসটি ভেগোরাসলী গোটা দুনিয়াতে ছড়াচ্ছে এবং অঞ্চলের পর অঞ্চলকে কর্মহীন, উৎপাদনহীন এবং নিস্ক্রিয় করে ফেলছে। এ বিষয়ে আমি টিএমএসএস এর লক্ষ  লক্ষ সদস্য পরিবার এবং সচেতন জনসাধারণের উদ্দেশ্যে পত্রিকায় নিম্নোক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলাম:

করোনা বিষয়ক বিশেষ বিজ্ঞপ্তি

এতদ্বারা বিজ্ঞ সর্বসাধারণকে সবিনয়ে জানানো যাচ্ছে যে, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধর্মীয় রীতিনীতি, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা এবং সৌন্দর্য রক্ষার্থে যাহা কিছু করতে হয়, করোনা প্রতিরোধেও তাহাই করতে হয়। তাই গুজবে কখনই কান দিবেন না। বাংলাদেশের সকল মানুষ ধর্ম বিশ্বাসী ও জাতীয়তাবোধ সম্পন্ন, বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ। তাই অবাংলাদেশী বিশেষজ্ঞগণের বাংলাদেশের প্রতি ভীতির আলোকে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তাহা বিবেচনার বিষয়। যেহেতুঃ

(১)          বাংলাদেশের ধর্ম প্রাণ মানুষ আল্লাহ/সৃষ্টিকর্তা নামক আপন মহাশক্তির প্রতি সহায়কের দৃঢ়                          আস্থাবান, যাহা মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে (Faith to God)।

(২)         দরদী মনভাবাপন্ন মানুষ হেতু রোগীর সেবার/সহায়তার ঘাটতি হবে না (Affection Affinity)।

(৩)         প্রতিকূল পরিবেশে থাকায় মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি (High Immunity)।

(৪)         দেশের সহায়ক আদ্রতা ও তাপমাত্রা (Positive Humidity &Temperature)।

(৫)         স্থানীয় ভেষজ ও ধর্মীয় চিকিৎসা (Local herbal & Religious Treatment)।

(৬)         দেশের ৯০% মুসলমানের প্রায় অধিকাংশই দিনে ০৫ বার নামাজ জনিত কারণে অজু করায়                        করোনা প্রতিরোধে প্রত্যাশিত ধৌত কাজ হয়ে থাকে  (Cleanness of expose body &                            Exercise)।

(৭)         করোনা ভাইরাস আমাদের দেশের জীবাণু নয়, বিদেশ থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে                       (Transported Germ)।

(৮)         আমাদের টিকে থাকার বা ফেস করার অভাবনীয় সক্ষমতা আছে (High Resilience)।

(৯)         সবুজায়ন গ্রাম আধিক্য বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু (Healthy Eco-System & Climate)।

তাই ভীত হওয়ার কোন কারণ নাই, সৃষ্টিকর্তা বা প্রকৃতি প্রদত্ত যাহা ঘটে, তাহার পিছনে মঙ্গল আছে। তবে সৃষ্টিকর্তার ঘোষনা “নিশ্চয়ই মানুষ যা করবে তাই পাবে”। সুতরাং আমাদেরকে সরকার ও বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শ ও স্বাস্থ্যবার্তা মেনে চলতে হবে।

করোনাতে বিশ্ব নেতাদের হয়তো বোধোদয় হবে যে, বিনোদন/খেলা/খেলোয়াড়/আড়ম্বর আয়োজন বাবদ যে বিপুল পরিমান ব্যয় বিধান করা হয়, কেন তারা ভ্যাকসিন/প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রতিষেধক আবিস্কারে অতি উচ্চ ব্যয় না হলেও বেশি ব্যয় করছেন না। Global Village /বৈশ্বিক গ্রামে তারা শুধুমাত্র অর্থনীতি ছাড়া সকল মানবীয় বিষয়গুলিতে চরম ভাগা-ভাগি, হানা-হানি করে অস্ত্রাগার সমৃদ্ধ করে তুলছে। সৃষ্টির সেরা জীব আল্লাহর শখের সৃষ্টি মানুষকে মারার জন্য যত অস্ত্র বিশ্ব মাতব্বরগণের আছে, করোনা মারার অস্ত্র নাই কেন? চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ পথের যাত্রী বিশ্ববাসী উচ্চ মানের মানবদেরকে করোনা হয়তোবা ভাবাবে। করোনা নামক রহস্যময় অদৃশ্য শক্তিশালী এই জীবাণুকে মোকাবেলার জন্য প্রতিষেধক বা ঔষধ প্রস্তুত কেন হলো না সে জন্য অনুযোগ বা অভিযোগ করছি না।

যেহেতু এই জীবাণু নাকি ইতিমধ্যেই কয়েকশত বার তার জ্বিন বা ডিএনএ পরিবর্তন করেছে, তাই প্রতিকারক (Curative) আবিষ্কার করতে পারাও সহজ নয়। এ জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা, সক্রিয় সচেতনতা ও সতর্ক থেকে মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট সাহায্য পাবার অবস্থানে থাকাই উৎকৃষ্ট উপায়। মনে রাখা ভাল, “Every Challenge brings Opportunity”। ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ্ কমিউনিটি হাসপাতাল থেকে ০১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অতি মনোরম পরিবেশে ২০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা কেয়ার ওয়ার্ড এবং Personal Protective Equipment (PPE) সহ স্বেচ্ছায় শত শত ডাক্তার ও নার্স প্রস্তুত আছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদন প্রাপ্ত (পাঠদান অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন) টিএমএসএস মেরিন একাডেমী ও শাজাহানপুর উপজেলাস্থ সুজাবাদ মৌজায় স্থাপিত প্রস্তাবিত ড্রাইভার মোটেল বহুতল ভবনে যা টিএমএসএস ফিরোজা বেগম আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরের পার্শ্বে এই দুইটিতে নিরাপদ দুরত্বে ৩৩০ শয্যা বিশিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ও যাবতীয় সুবিধাদি প্রদানের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

হটলাইন নং- ০১৭১৩৩৭৭১৩৮, ০১৭১১৪৩৬৫০৮, ০১৭১৩৩৭৭২৯০, ০১৭১৩৩৭৭০৮৬।

নিবেদনে-

লেখক

 

প্রিয় পাঠক,

আমরা দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘকালের বঞ্চিত, শোষিত, পূর্ববঙ্গের জনগণ। ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়ে একটি অতিনি¤œ আয়ের এবং তলাবিহীন ঝুড়িতুল্য একটি দুর্যোগের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পন করার প্রাক্কালে করোনা ভাইরাস আমাদের সকলের প্রান না নিলেও এদেশের অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে পর্যুদস্ত করছে ও করবে এতে সন্দেহ নেই। বাঙ্গালী জাতির অনেক গুণ থাকলেও দোষ-গুন মিশ্রিত আবেগ এবং বিভিন্ন গুজবের প্রতি এ দেশের জনগণ অত্যন্ত স্পর্শকাতর, এ বিষয়ে বাংলাদেশের সচেতন জনগণের মধ্যে কার না জানা। এদেশের গ্রামগঞ্জে অতি দরিদ্ররা তাদের কর্মক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ও জীবন যাত্রা নির্বাহের জন্য অতি উচ্চ সুদে প্রয়োজনীয় মুলধন সংগ্রহ করতো গ্রাম্য মহাজনের নিকট থেকে। এতে এক সময় ঋণ গ্রহীতাদের কুঁড়ে ঘর, লোটাঘটি, বসতভিটা এমনকি নারীদের সতীত্ব বিকিয়ে দিতে হত। এক শ্রেনীর মানুষ শুধুমাত্র নি¤œমানের খাদ্যের বিনিময়ে নিজের বাসায় গৃহকর্মী নিয়োগ করতো। তারা মনিবের কৃষি জমিতে ফয়-ফসলে কাজ করত। সেই সময় দেশের জনসংখ্যাও কম ছিল। বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। সাহেব সুভাগণের বাসায় এবং ক্ষেতখামারে শ্রমিকের অধিক মজুরী হেতু অনেক জোতদার ও সাহেব সুভাগনের মধ্যে বর্তমানে হতাশার শেষ নেই।

অতি উচ্চ সুদে মহাজনী কায়দায় দাদন ব্যবসাকে বিতাড়িত করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এদেশের বিভিন্ন পরিক্ষিত বেসরকারী সংস্থাকে লাইসেন্স দিয়ে ঋণ গ্রহীতা বান্ধব ঋণদান পদ্ধতি প্রবর্তন করেছেন। এই পদ্ধতি মনিটর করার জন্য মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (MRA) নামক একটি সরকারী কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় রেখেছেন। ফলশ্রুতিতে সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় ৭৫০টি  এনজিও এর মাধ্যমে প্রায় চার কোটি পরিবার ক্ষুদ্রঋণের সুবিধা ভোগ করছে। প্রায় চার কোটি ঋণ গ্রহীতার ঋণের অর্থ ব্যবহার করার সক্ষমতা  বৃদ্ধির জন্য ব্যবসা উন্নয়ন প্রশিক্ষনসহ নানাবিদ সামাজিক ও আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে। এ ধরনের ইতিবাচক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানব সম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। তৃণমুল পর্যায়ে অর্থাৎ মাইক্রো লেভেলে গৃহীত কোটি কোটি মাইক্রো ইন্টারভেনশন এবং উদ্যোগ এর ফলে আত্ম কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং চাকুরী প্রাপ্তি সহজ হয়েছে। তাই বর্তমানে প্রচন্ড রোদ বৃষ্টিতে ক্ষেত খামারে কাজ করার জন্য কমমুল্যে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না এবং স্বল্পমূল্যের শ্রম প্রত্যাশীদের ক্ষোভের ফলশ্রুতিতে  ধানের জমিতে আগুন লাগানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কৌশলগত উন্নয়নের নিমিত্ত জাতির জনকের কন্যা রাষ্ট্রনায়ক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদার নীতিতে কৃষি সেক্টরে ভুর্তকী প্রদান এবং কৃষি ম্যাকানাইজেশন করছেন। এই সময়ের বাংলাদেশে যুবকের বেকারত্ব যেন জাতিকে বেকায়দায় না ফেলতে পারে, এ লক্ষ্যে যুব প্রশিক্ষনের জন্য যথেষ্ট বরাদ্দ দিয়ে  STEP, SEIP, ASSET ইত্যাদি বিশাল বিশাল জাতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করার জন্য NSDA এর চেয়ারম্যান হিসাবে সোনার বাংলার স্বপ্নের ধারক জাতির পিতার কন্যা স্বয়ং শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

 

প্রিয় পাঠক

কোভিড-১৯ এর সংক্রমন রোধে শক্তিধর কর্তৃত্ববাদী (Authoritian) চীন সরকার যেভাবে সফল হচ্ছেন ও যে কৌশলে কাজ করছেন, নি¤œমধ্যম আয়ের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার ও সেইভাবে করতে পারবেন এ প্রত্যাশা মানানসই নয়। আমাদের মতে, আমাদের সরকার যা করেছেন ও করছেন তাই যথেষ্ট, কিন্তু আমাদের যা করা দরকার ছিল এবং আগামীতে যা করতে হবে, আমরা তা করছি না। হুজুক প্রসুত, বিদ্বেষবাদী, হেয়ালীপনা সমৃদ্ধ এবং অবাস্তব চিন্তা চেতনায় বর্তমানে আমরা যা করছি, তা একটি অপ্রয়োজনীয় আবেগ। সেদিন শুনলাম, এনজিও কর্মীরা ঋণের কিস্তি আদায় করতে গিয়ে গণপিটুনী খেয়েছে। এটি বরই দুঃখের বিষয়। এদেশে সাড়ে সাতশত লাইসেন্সধারী এনজিও প্রায় ৩ লক্ষ বেকার যুবককে চাকুরী দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এনজিওগুলি জামানত বিহীন লক্ষ-কোটি টাকা মাঠে বিনিয়োগ করে ঋণ গ্রহীতাদের সঙ্গে সম্পাদিত সহজ শর্তের চুক্তি অনুযায়ী ঋণের কিস্তি আদায় করতে ঋণ গ্রহীতাদের নিকট যাবেন, এটা তাদের আদর্শিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া কোন অপরাধ নয়। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অপরাধ হলে গণপিটুনি পাইলে পাবে এনজিও কর্তৃপক্ষ, মাঠের কর্মীরা নয়। এনজিও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পাইকারীভাবে সস্তাদরে টাকা কিনে খুচরাভাবে একটু উচ্চ দরে বিনিয়োগ করে ব্যাংক ঋণ ৬ মাস শ্রেনীকরণ/CIB তে না আনলেও সুদের চাকা যদি বন্ধ না করা হয়, তাতে কি কোন সুফল হবে? তবে বিভিন্ন মিডিয়ায় আমরা স্বচিত্র যে আদায় কাহিনী দেখলাম, তা ক্ষুদ্রঋণের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট অভিনয় কাহিনী। এনজিও কর্মীদের চরিত্র এবং যোগ্যতার প্রতি জনক্ষিপ্ততা সৃষ্টির জন্য কৃত্রিম ঘটনা বিভিন্ন জায়গায় করা হচ্ছে এবং মিডিয়াতে দেখানো হচ্ছে, এটি দাদন ব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্র। এনজিওরা ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ঋণ গ্রহীতাদের শরীর, স্বাস্থ্য ও সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সর্বদা জাগ্রত প্রহরী হিসেবে কাজ করে। তারা জানে, সদস্য বেঁচে না থাকলে, সদস্যের আয় বেশী না হলে, করোনা ছাড়াও স্বাভাবিক সময়েও ঋণের কিস্তি পাওয়া যাবে না। অথচ সস্তা জনপ্রিয়তা নেওয়ার জন্য এবং মহাজনী দাদন ব্যবসা পুনর্বহাল করার জন্য দাদন ব্যবসায়ীরা মাসির দরদ দেখাচ্ছেন।

অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে, যে সমস্ত দাদন ব্যবসায়ী বিনা লাইসেন্সে মহাজনদের মতো দাদন ব্যবসা করছেন, তারাই বিভিন্ন স্থানে নাটক সাজিয়ে এনজিওদের জনপ্রিয়তা নষ্ট করার কাজে নিয়োজিত আছেন। তাই সচেতন সমাজকে জাগ্রত থাকতে হবে। বিবেক দিয়ে পরিস্থিতির বিচার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মা অপেক্ষা মাসির দরদ কখনই বেশী নয়। মা যেমন নিজ সন্তানকে ভবিষ্যত রুজীর উৎস মনে করে, এনজিওরাও তার সদস্যদেরকে ভবিষ্যত স্বনির্ভর এর শক্তি গণ্য করে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্কতাও অবলম্বন করতে হবে, আবার উন্নয়ন কর্মকান্ডও বহাল রাখতে হবে। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি বলেছেন, এনজিওদের কিস্তি সাময়িক বন্ধ থাকবে। সেক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দায়িত্বশীল ব্যক্তি এই বন্ধকালীন সময়কে ছয় মাস হিসেবে ঘোষণা করে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। এনজিও প্রদত্ত ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য সাধারণভাবে কোন এনজিও কর্মী মাঠে যাননি। ঋণ গ্রহীতা কিস্তি নেওয়ার জন্য তাকে ডেকেছেন। উক্ত ঋণ গ্রহীতার কিস্তির অর্থ নিয়ে উক্ত কর্মী উপস্থিত অন্য ঋণ গ্রহীতার নিকট থেকে স্বাভাবিকভাবে কিস্তির অর্থ চেয়েছেন। এখানে কোথাও কোন প্রকার চাপা-চাপি করা হয়নি। অনেক সদস্য বলেছেন, তাদের কৃষি ভিত্তিক কার্যক্রম, ক্ষুদে পরিবহন ও অন্যান্য বিশেষ-বিশেষ কাজে এখনও রোজগার আছে। তাই সময়মত কিস্তি না আদায় করলে পরে খরচ হয়ে যাওয়ার কারনে পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। তাদের নিকট কিস্তি নিতে গেলে কায়েমী মহাজনী দাদন ব্যবসায়ী এবং তাদের দোসররা যদি গণ পিটুনি দেন, এতে গণদুর্দশা আসবে এবং পরিস্থিতির কোন উন্নতি হবে না। আমি নিজে আমার কর্মজীবন, শিক্ষা জীবন, অশোকা ফেলোশীপের গবেষণা, পিএইচডির গবেষণা, উদ্ভিদ বিদ্যা বিষয়ক বায়োমেট্রিক্যাল জেনিটিক্স এর গবেষণার চেতনা এবং বিশ্বের স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানী বিশেষজ্ঞগণের অভিমত মতে বিশ্বাস করেছি যে, বাংলাদেশের তাপমাত্রা এবং জলবায়ূ অর্থাৎ টেমপারেচার ও হিউমিডিটি কোভিড ১৯ কে নিস্ক্রিয় করতে না পারলেও নিস্তেজ করবে। এই আবহাওয়া অন্যান্য সকল ভাইরাসকেও নিস্তেজ করবে। সচেতন কোন্ ব্যক্তি না জানেন, ধুলিকণা (Dust particle) বহু ব্যামারের ধারক, তাই সামর্থবান সকলের উচিৎ, প্রতিবেশীসহ নিজেদের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিজের পরিবেশ নির্মল করা। ঝাটা ঝাড়– ফেলে দিয়ে ঘর-বারান্দা পানি দিয়ে ধৌত করুন। আপনার বাড়ী এবং আপনার মহল্লার চারিপার্শ্বে কোথাও ধুলিকণা ঝাড়– না দিয়ে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করুন। এতে আপনার বাড়ী এবং আপনার মহল্লা ধুলিমুক্ত থাকবে। ছিটানো পানি বাস্পীভূত হয়ে আর্দ্রতা (Humidity) বাড়াবে। এই আর্দ্রতা শুধু করোনাই নয়, অনেক ভাইরাসের জন্যই নেতিবাচক। নিজেদের পরণের কাপড়-চোপড় সিদ্ধ পানিতে ধৌত করে বা ওয়াসিং মেশিনে ধৌত করে মেশিনে না শুকিয়ে বাতাসে শুকালে বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ে/এতে ভাইরাস বেকায়দায় পড়ে। সকলের পরিবার, সন্তান-সন্ততি এবং প্রতিবেশী সুস্থ দেহ, সুস্থ মনে বসবাস করার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।

৮ই মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস সনাক্ত করার পর যা আমরা করতে পারিনি, তা হচ্ছে সকল উড়োজাহাজ ঘাটি ও স্থল বন্দর কঠিনভাবে সিলগালা করা। করতে পারলে, বর্তমান অবস্থাও সৃষ্টি হতো না। তারপর যা পারিনি, তা হচ্ছে এদেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগানদাতা প্রবাসীগণ যখন তাদের জন্মভূমি প্রিয় দেশে ফিরে এসেছেন তখন তাদের জন্য উচ্চমানের হোটেলগুলিকে প্রবাসীদের জামাই আদরে রাখতে সরকারী ভাবে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া এবং তার দায়দায়িত্ব CSR হিসেবে হোটেল মালিকগণকেই বহন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

আমরা আর যা পারিনি, তা হচ্ছে সাধারণ ছুটিতে চাকুরীজীবিদের নিজ কর্মস্থলের বাড়ীতে অবস্থান করাতে। ফলশ্রুতিতে চাকুরীজীবিগণ বাদুরঝোলা এবং পিপীলিকার মত গাদা-গাদি, ঠাসা-ঠাসি করে গোটা বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে নিরীহ মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস সংক্রমনকে গতিশীল করেছে। কেউ-কেউ এই উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছুটিকে উৎসব হিসাবে গ্রহণ করে মনের মাধুরী মিশিয়ে বিধি নিষেধ না মেনে ইচ্ছা মতো কাটাচ্ছেন, যা ছুটি প্রদানের মূল চেতনা বিরোধী।

উক্ত না পারা গুলিকে মিটিগেশন করার জন্য এবং প্রশাসনের নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে ঘরে অবস্থান করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পার্শ্ববর্তী সামর্থবান ও বিত্তবানগণকে সহায়হীন ঘরে থাকা মানুষকে খাদ্য সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিজ্ঞানী ও গবেষকগণকে অঢেল সহায়তা দিতে হবে। তাদের গবেষণালব্ধ প্রতিষেধক বা করোনা থেকে সেরে উঠা মানুষের রক্ত থেকে এন্টি জিন বা এন্টিবডি নিয়ে অন্যরা যেন সুস্থ থাকতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ সকল বিষয়ে গবেষণার জন্য বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ-সহ আন্তর্জাতিক বা জাতীয় দাতা সংস্থাগুলিকে উদার হস্তে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

করোনা পরিস্থিতি জনিত কারণে মোটা দাগে যা করতে হবে তা হচ্ছে দিনের ১৮ ঘন্টা জাগ্রত অবস্থায় ১০ বার সাবান দ্বারা হাত ধৌত করা। দেশের বর্ডার অতিক্রম করে দেশ-বিদেশে গমনা-গমন না করা, সরকারী সকল নির্দেশনা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রতিপালন করা। প্রত্যেকের নিজ নিজ বসতভিটা, ছাদ, আনাচে-কানাচেতে সবুজায়ন করা, নিারপদ সুষম খাদ্য খাওয়া।

করোনা আমাদের যা শিখাচ্ছে তা হচ্ছে, আরও মানবিক হওয়া, আরও সমষ্টিক হওয়া, হক্কুল ইবাদ নামক ফরজকে আঁকড়ে ধরা এবং সবাইকে বিনোদন ও জৌলুসের সঙ্গী করে সংক্রমনহীন পরিবেশ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সকল মানুষকে রোগ প্রতিরোধ শক্তিতে সমৃদ্ধ করা।

লেখকঃ নির্বাহী পরিচালক, টিএমএসএস
– চেয়ারম্যান, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button