শিক্ষাঙ্গন

কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রাজধানীর রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নাইমুল আবরার (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকাল তিনটার দিকে আবরার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে তাকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আবরার রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির দিবা শাখার শিক্ষার্থী ও আবাসিক ছাত্র ছিল। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া আবরারের বাবা সৌদি আরব থাকতেন। তারা দুই ভাই। বড়ভাই প্রকৌশলী, তিনি জার্মানিতে থাকেন।

জানা গেছে, শুক্রবার বিকালে কলেজ ক্যাম্পাসে কিশোর আলো আয়োজিত ‘লাভেলো কিআনন্দ’ অনুষ্ঠানে অংশ নেয় আবরার। অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চের পেছনে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সে গুরুতর আহত হয়। পরে আয়োজকরা তাকে উদ্ধার করে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতেই জানাজা শেষে তার মরদেহ নোয়াখালী নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে আবরারের মৃত্যুর বিষয়টি কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ ও কলেজের পক্ষ থেকে না জানানোর কারণে গোপন থাকে। পরে সহপাঠীদের বিক্ষোভ ও ফেসবুকে পোস্টের কারণে বিষয়টি সামনে আসে। আবরারের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরেও অনুষ্ঠানটি চলতে থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

অন্যদিকে নাইমুরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক। রাত ১টা ৩৫ মিনিটে ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে কিশোর আলোর সম্পাদক লিখেছেন, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, কিশোর আলোর অনুষ্ঠান দেখতে এসে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল কলেজের ক্লাস নাইনের ছাত্র নাইমুল আবরার বিদ্যুতায়িত হয়। ওখানেই জরুরি মেডিকেল ক্যাম্পে তাকে নেওয়া হয়। দুজন এফসিপিএস ডাক্তার দেখেন। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে বলেন। হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

আনিসুল হক আরও লিখেছেন, ‘আমার জীবনে এর চেয়ে মর্মান্তিক খবর আমি আর পাই নাই। আমি এখন হাসপাতালে আছি। প্রিন্সিপাল স্যার আছেন। নাইমুল আবরারের বাবা-মা এবং আত্মীয়রা আছেন। আমি ও কিশোর আলো আজীবন আবরারের পরিবারের সঙ্গে থাকব। যদিও এই অপূরণীয় ক্ষতি কিছুতেই পূরণ হবে না। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় আছি। নাইমুল আবরারের জন্য দোয়া করছি।’

ফেসবুকে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আনিসুল হক দাবি করেন, এখন ফেসবুকে কতগুলো প্রচারণা দেখছি। আমি আমার জানা দেখা কথাগুলো বলি। আমাকে চারটার পর জানানো হয়, একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। আরো খানিক পরে জানানো হয়, আহত ভদ্রলোক সম্ভবত চট্টগ্রাম থেকে আসা। অনুষ্ঠান শেষ হয় ৪টা ৪০ কি ৪টা ৪৫। পাঁচটার পর আমি জানতে পারি, আহত জন মারা গেছেন। মানে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার ১৫/২০ মিনিট পরে মৃত্যুর খবর আমি পাই। তারও আধ ঘণ্টা পর আমাকে জানানো হয়, যিনি মারা গেছেন, তিনি ক্লাস নাইনের ছাত্র রেসিডেনসিয়ালের ছাত্র।

তিনি বলেন, কাজেই যারা বলছেন, নাইমুল আবরার মারা যাওয়ার খবর গোপন করে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া হয়েছে, তারা ঠিক বলছেন না। শেষ শিল্পী অর্ণব ওঠার আগে দুর্ঘটনা সম্ভবত ঘটেনি। সম্ভবত বলছি, কারণ একেকজন একেকটা কথা বলছেন।

আনিসুল হক আরও দাবি করেন, দ্বিতীয়ত, ইউনিভার্সাল হাসপাতাল আমাদের স্পন্সর নয়। তারা আমাদেরকে জরুরি মেডিকাল সার্ভিস দেবার জন্য ওখানে ছিলেন। দুজন এফসিপিএস ডাক্তার ছিলেন। একটা অ্যাম্বুলেন্স রেডি করা ছিল। সেই অ্যাম্বুলেন্সেই নাইমুল আববারকে হাসপাতালে নেয়া হয়। কেন তাকে হৃদরোগ ইন্সিটিউটে নেয়া হলো না, এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য আমার জানা নেই। তবে আমরা যে মেডিকাল ক্যাম্প, টিম, অ্যাম্বুলেন্স রেডি রেখেছিলাম, সেটা ভালোর জন্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তা থাকা সত্ত্বেও নাইমুল আববার আমাদের ছেড়ে চলে গেল।

অপরদিকে আনিসুল হকের স্ট্যাটাসের ঘণ্টাখানেক পর কিশোর আলোর ফেসবুক পেজে আবরারের মৃত্যুর বিষয়ে আরকেটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। ওই স্ট্যাটাসে বলা হয়েছে, আবরারের মৃত্যুর কারণে শনিবারের পর্যালোচনা সভাসহ কিআনন্দ সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি সভা ও কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button