স্বাস্থ্য

কালিজিরা খাওয়ার আশ্চর্য স্বাস্থ্য উপকারিতা

বিভিন্ন পদের রান্নায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হলো কালোজিরা। তবে শুধু রান্নার স্বাদ বাড়াতেই নয়, সুস্বাস্থ্য রক্ষায়ও কালিজিরা তালিকার শীর্ষে। কালিজিরাতে রয়েছে ফসফেট, ফসফরাস আর আয়রন। এই সব খনিজ উপাদান শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

কালিজিরাতে রয়েছে একাধিক আশ্চর্য স্বাস্থ্যগুণ, যেগুলো হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। শীতের সময়টাতে শরীর সুস্থ রাখতে কালোজিরা খাওয়া খুবই জরুরি। আসুন কালিজিরার আশ্চর্য সব স্বাস্থ্যগুণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-

কালিজিরার পুষ্টিগুণ

কালিজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান আছে। কালিজিরা খাদ্যাভাসের ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালিজিরা ফুলের মধু উৎকৃষ্ট মধু হিসেবে বিশ্বব্যাপী বিবেচিত, কালোজিরার তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বর্তমানে কালিজিরা ক্যাপসুলও বাজারে পাওয়া যায়। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাব বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক। এর প্রধান উপাদানের মধ্যে আমিষ ২১, শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ, স্নেহ বা ভেষজ তেল ও চর্বি ৩৫ শতাংশ। এছাড়াও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে। প্রতি গ্রাম কালিজিরা পুষ্টি উপাদান হলো-প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম; ভিটামিন বি১ ১৫ মাইক্রোগ্রাম; নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম; ক্যালসিয়াম ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম; আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম; ফসফরাস ৫.২৬ মিলিগ্রাম; কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম; জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম; ফোলাসিন ৬১০ আইউ। কালিজিরার অন্যতম উপাদানের মধ্যে আরও আছে নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। পাশাপাশি কালিজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি ছাড়াও জীবাণুনাশক বিভিন্ন উপাদান যা হাজারও উপকার করে।

কালিজিরার ঔষধি গুনঃ

  • প্রসবকালীন ব্যথা কমাতে, প্রসূতির স্তনে দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য প্রসবোত্তর কালিজিরা বাটা ভর্তা খাওয়ার প্রমাণিত উপকারী বিধান আছে।
  • প্রশ্বাব বাড়ানোর জন্য কালিজিরা খাওয়া উপকারী।
  • জ্বর, সর্দি, কাশি, কফ, অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ব্যথা ও দাঁতের ব্যথা, বাতের ব্যথা, পেটের বাথা, মাথাব্যথা কমাতে, মাথা ঝিমঝিম করা, মাইগ্রেন নিরাময়ে যথেষ্ট উপকারী বন্ধু হিসেবে কাজ করে।
  • পেটফাঁপা, চামড়ার ফুসকুরি, ব্রঙ্কাইটিস, এলার্জি, একজিমা, এজমা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাসট্রিক আলসার, জন্ডিস, খোসপাঁচড়া, ছুলি বা শ্বেতি, অর্শরোগ, দাদে কালিজিরা অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
  • স্নায়ুবিক উত্তেজনা, আঁচিল, স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে, শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে, স্ট্রোক, স্থূলতা নিরাময়ে দারুণ কাজ করে কালিজিরা।
  • শরীর ব্যথা দূর করতে কালিজিরা বিশেষভাবে উপকার করে।
  • টিউমার এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালিজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • কালিজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
  • ডায়বেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় ইনসুলিন সমন্বয় করে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করে।
  • হার্টের বিভিন্ন সমস্যা, হাইপারটেনশন, নিম্ন রক্তচাপকে বাড়ায় আর উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে রক্তের স্বাভাবিকতা রক্ষা করে।
  • এছাড়া মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

কালিজিরার ব্যবহার কৌশল

কালিজিরা সরাসরি তেল হিসেবে, কাঁচা চিবিয়ে, ভেজে পরিমাণমতো খাওয়া যায়। সরাসরি খাওয়ার থেকে শুরুতে ভাত রুটি বা মুড়ির সাথে কালিজিরা খাওয়াটা অভ্যাস করতে পারলে ভালো। যখনই গরম পানীয় বা চা পান করা হয় তখনই কালিজিরা কোনো না কোনোভাবে সাথে খাওয়া ভালো। গরম খাদ্য বা ভাত খাওয়ার সময় কালিজিরা বেশ উপকারী। কালিজিরা একটা দারুণ ঘরোয়া ওষুধ। দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালিজিরা দিয়ে কুলকুচ করলে ব্যথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে স্বস্তি এনে দেবে।

কালিজিরার সর্তকতা

কালিজিরা নিয়মিত ও পরিমিত খেতে হয়। অতিরিক্ত খুব বেশি খেলে বা ব্যবহার করলে হিতের বিপরীত হয়। কালিজিরা গ্রহণ করার সবটাই করতে হয় পরিমিত পর্যায়ে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button