আন্তর্জাতিক

করোনাভাইরাসে প্রথম চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে যে চীনা চিকিৎসক সর্বপ্রথম সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গিয়েছেন।

তিনি যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, সেখান থেকে এই খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে উহান সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘৩৪ বছর বয়সী চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. লি ওয়েনলিয়াং নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় দুর্ভাগ্যক্রমে ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন।’

তার মৃত্যুর বিষয়ে পরস্পরবিরোধী সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, পরে পিপলস ডেইলি জানিয়েছে যে শুক্রবার দুপুর ২টা ৫৮ মিনিটে তিনি মারা যান।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে অসুস্থতা নিয়ে ‘গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে পুলিশের কাছে হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন লি। উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া সেই ভাইরাসে এখন বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ২০০ মানুষ এবং এতে আক্রান্ত হয়ে ৫৬০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি ৩০শে ডিসেম্বর সহকর্মীদের কাছে একটি সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তবে পুলিশ তাকে “মিথ্যা মন্তব্য করা” বন্ধ করতে বলে।

গ্লোবাল টাইমস, পিপলস ডেইলি এবং অন্যান্য চীনা গণমাধ্যম বৃহস্পতিবার ডা. লি-এর মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল।

৩৪ বছর বয়সী ডা. লিকে, স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ প্রাথমিকভাবে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল এবং এই খবরটি চীনা সামাজিক মাধ্যম ওয়েইবোতে ঝড় তুলে দেয়। ওয়েইবো অনেকটা টুইটারের মতো। এই খবরে সেখানে প্রচুর মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়া জানায়।

পিপলস ডেইলি একটি টুইট করে করে জানিয়েছে যে ডা. লি এর মৃত্যু “জাতীয় শোক” ছড়িয়ে দিয়েছে।

তবে গ্লোবাল টাইমস তখনও বলেছিল যে ড. লি’কে ‘ইসিএমও (এক্সট্রা-কর্পোরাল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন)’ নামে পরিচিত একটি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

যার মাধ্যমে একজন রোগীর হার্টকে পাম্প করে সচল রাখা হয় এবং রক্তে অক্সিজেনের পরিবহন বজায় রাখা হয় যেন তা ফুসফুসের মধ্যে চলে না যায়।

গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছিল যে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিক এবং চিকিৎসকরা, যারা তাদের নাম ব্যবহার করতে চান না, তারা বিবিসি এবং অন্যান্য মিডিয়াকে বলেছেন যে সরকারি কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করেছেন।

সরকারী সংবাদমাধ্যমগুলোকে বলা হয়েছে যেন তারা তাদের প্রতিবেদন পরিবর্তন করে এবং জানায় যে, ডা. লিকে এখনও চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পরে সংবাদমাধ্যমগুলো ডা. লি’র মৃত্যুর নতুন সময়টি জানায়

চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, করোনাভাইরাস দ্বারা নিহতদের বেশিরভাগের বয়স ৬০ বছরের উপরে। যারা অন্যান্য সমস্যায় ভুগছিলেন। তবে ডা. লি এর মেডিকেল ইতিহাস জানা যায়নি।

জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনের মূল ভূখণ্ডে ভাইরাসটির প্রকোপে এখন পর্যন্ত ৬৩৬জনের মৃত্যু হয়েছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে মোট ৩১ হাজার ১৬১জন। বৃহস্পতিবারই ৭৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে শ্বাসযন্ত্রে তীব্র সংক্রমণ দেখা দেয় এবং এর লক্ষণগুলো সাধারণত জ্বর দিয়ে শুরু হয় এবং এর পরে হয় শুকনো কাশি। সংক্রামিত বেশিরভাগ মানুষই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন – ঠিক যেমন তারা ফ্লু বা জ্বর থেকে সেরে ওঠেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button