আন্তর্জাতিক

জাপানের ভুতুরে বাড়িগুলোর কি হবে?

বিশ্বের অনেক দেশেই শিশু জন্ম হার কমছে। তবে জাপানের পরিস্থিতি বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। ২০১৮ সালে ওই দেশে খুব অল্প পরিমাণে শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। অন্যদিকে গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় বৃদ্ধদের সংখ্যা বেড়েছে।

জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসনের চাহিদাও হ্রাস পাবে এটাই স্বাভাবিক। জাপানে অন্তত তাই হচ্ছে। বৃদ্ধরা মারা যাওয়ার পর শূন্য ঘরের তালিকা বাড়ছে।

ভায়াটিয়া স্বল্পতা কিংবা উত্তরাধিকারী সমস্যায় থাকা পরিত্যক্ত বাড়িগুলোকে স্থানীয় ভাষায় ‘আকিয়া’ বলা হয়। ২০১৮ সালে দেশটির মোট সম্পত্তির ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ‘আকিয়া’ বাড়ি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।

খুব কম নাগরিকই এসব বাড়ির মালিকানা নিতে আগ্রহী হন। কারণ জাপানে একের অধিক বাড়ি থাকলে করের পরিমাণ বেশি দিতে হয়, এ কারণে স্বজনরাও এসব বাড়ি নিতে চান না।

এ ধরনের ‘আকিয়া’ বাড়ি দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলেই বেশি দেখা যায়। কারণ নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগ ছেলেমেয়ে সুযোগ-সুবিধার কারণে শহরের দিকেই থাকতে চায়। অবশ্য এ সমস্যা শুধু জাপানে নয়, গোটা বিশ্বেই প্রতিফলিত হচ্ছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে আবাসনের চাহিদা কম হওয়ায় ভূমি এজেন্টরাও এগুলো নিতে চান না। কারণ সম্পত্তির মূল্যের শতাংশের উপর নির্ভর করে যে ফি ধার্য করা হয় তা থেকে তারা কাঙ্খিত ব্যবসা করতে পারেন না। কোনো কোনো জায়গায়, আগ্রহের অভাবে এমন সম্পত্তির বিধি ব্যবস্থা করার মতো কোনো ভূমি এজেন্টও নেই।

যদিও ‘আকিয়া ব্যাংকে’ ক্রমবর্ধমান সংখ্যক শূন্য সম্পত্তি তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে, তবে কর্তৃপক্ষ সাধারণত অনুমতি নেওয়ার সময় বাড়ির মালিকদের সনাক্ত করতে পারছেন না। একারণে অনেক বাড়ি সংস্কার বা ভেঙেও দিতে পারছেন না।

অন্যদিকে বেশিরভাগ ‘আকিয়া’ যেহেতু কয়েক দশক আগের তৈরি, তাই কাঠের এ পুরাতন ঘরগুলোর টাইফুন এবং ভূমিকম্প সহ্য করার সম্ভাবনা কম। এ কারণে স্থানীয় কাউন্সিলগুলি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনায় আকিয়া যেন বোঝা হয়ে না যায় তা নিশ্চিত করার জন্য চাপ অনুভব করছে।

জাপানের টয়ো ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ চি নোজাওয়া পূর্বাভাস দিয়েছেন, আগামীতে বড় শহরগুলির মধ্য অঞ্চলে ‘আকিয়া’ সমস্যাটি সবচেয়ে বড় হয়ে উঠবে। কারণ জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় এসব পুরানো এলাকাগুলো কিভাবে পুনরুদ্ধার করা হবে তার কোনো সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তিনি জানান, স্থানীয় কাউন্সিলগুলো এসব বাড়ি বাঁচাতে কি কৌশল অবলম্বন করবে সেটার ওপরই ‘আকিয়া’ বাড়িগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

অধ্যাপক নোজাওয়া বলেন, ‘নতুন প্রজন্ম ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।’ তা্র মতে, জনসংখ্যা বাড়াতে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার তাই করতে হবে। কারণ জনসংখ্যা যদি এভাবেই হ্রাস পেতে থাকে তাহলে আরও শূন্য শহর এবং ভবনের সংখ্যাই শুধু বাড়বে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button