বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ইন্টারনেট সংযোগসহ ওয়ালটনের স্মার্ট রেফ্রিজারেটর

বিশ্ব এখন প্রযুক্তিনির্ভর। প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে গৃহস্থালী পণ্যেও। আর প্রযুক্তির এ উৎকর্ষ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটন বাজারে আনছে স্মার্ট রেফ্রিজারেটর। আকর্ষণীয় ডিজাইন ও অত্যাধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ ওয়ালটনের এই স্মার্ট রেফ্রিজারেটর হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬ নম্বর প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়নে আইওটি-বেজড স্মার্ট রেফ্রিজারেটরটি প্রদর্শন করছে ওয়ালটন। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯,৯১০ টাকা। মেলায় বিনামূল্যে স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের প্রি-বুক দেয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রি-বুকিংয়ে থাকছে ১০ হাজার টাকা ডিসকাউন্ট।

ওয়ালটন জানিয়েছে, আগামী এপ্রিল মাসেই স্মার্ট রেফ্রিজারেটরটি বাজারে আসবে। তখন প্রি-বুক দেওয়া ক্রেতারা যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা থেকে ফ্রিজটি ডেলিভারি নিতে পারবেন।

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক এবং ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর বিভাগের সিইও প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বলেন, গ্রাহকদের হাতে নিত্যনতুন প্রযুক্তির পণ্য তুলে দিতে গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজে দেশের অন্যতম বৃহৎ গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে দেশি-বিদেশি মেধাবী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে নিয়মিত গবেষণা করছেন। গৃহস্থালী পণ্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নিয়মিত গবেষণার ধারাবাহিকতায় ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরে আইওটি সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আশা করেন দেশের বাজারের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে ওয়ালটনের স্মার্ট রেফ্রিজারেটর ব্যাপক জনপ্রিয় হবে। এর ফলে এ খাতে রপ্তানি আয় যেমন বাড়বে, তেমনি শিল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হবে। ব্র্যান্ডিং হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের।

ওয়ালটনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর আব্দুল মালেক শিকদার জানান, তাদের স্মার্ট ফ্রিজের কন্ট্রোল বোর্ডে আইওটি ডিভাইস হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে ওয়াই-ফাই মডিউল। এর মাধ্যমে গ্রাহকের বাসায় ব্যবহৃত ওয়াইফাই ইন্টারনেট কানেকশনের আওতায় আসবে এই ফ্রিজ। গ্রাহককে তার মোবাইল ফোনে ‘ওয়ালটন স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সেস’ অ্যাপস ইনস্টল করে নিতে হবে। এই অ্যাপস-এর ফ্রিজ অপশন সিলেক্ট করে গ্রাহক তার রেফ্রিজারেটরটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে।

ওয়ালটন স্মার্ট রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হয়েছে এলইডি ডিসপ্লে। ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে এতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা অবস্থায় ইউটিউব থেকে গ্রাহক তার পছন্দের খাবারের রেসিপিসহ যেকোনো ভিডিও দেখতে পারবেন। ফ্রিজের গায়ে ক্যামেরা যুক্ত থাকায় ডিসপ্লে কিংবা মোবাইলের মাধ্যমে গ্রাহক এর অভ্যন্তরে সংরক্ষিত খাবার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সব তথ্য দেখতে পারবেন।

ওয়ালটন ফ্রিজের গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) বিভাগের প্রধান তাপস কুমার মজুমদার জানান, মোবাইল ফোনে এই স্মার্ট রেফ্রিজারেটর নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি পণ্যটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে। বিশেষ করে গ্রাহক যেকোনো স্থান থেকেই তার বাসায় থাকা রেফ্রিজারেটরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। ফ্রিজটি চালু না বন্ধ রয়েছে; কম্প্রেসর ঠিকমতো কাজ করছে কিনা? ফ্রিজের ভোল্টেজ সাপ্লাই লো কিংবা হাই? কি পরিমাণ বিদুৎ খরচ হচ্ছে? ফ্রিজে খাবার কতটুকু বা কি পরিমাণে সংরক্ষিত আছে? ফ্রিজের অভ্যন্তরে সংরক্ষিত খাবার কতটা তাজা? ইত্যাদি।

এমনকি গ্রাহকরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবার ডিফ্রস্ট করা যাবে। অর্থাৎ মুঠোফোনের মাধ্যমে কমান্ড দিয়ে ফ্রিজের ডিপ অংশে সংরক্ষিত খাবারের বরফ গলিয়ে খাবার রান্না করা বা খাওয়ার উপযুক্ত করে রাখা যাবে। স্মার্ট রেফ্রিজারেটরের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি সংরক্ষিত খাদ্যের পরিমাণ কমে এলে গ্রাহকের মোবাইলে নোটিফিকেশন পাঠাবে। প্রয়োজনে গ্রাহকের পছন্দকৃত সুপার শপ কিংবা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিষয়টি অবহিত করবে। এর ফলে সুপার শপ কিংবা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি যতটুকু খাবার প্রয়োজন, তা রেফ্রিজারেটরে পুনরায় সংরক্ষণ করে দিতে পারবেন।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) কর্তৃক নির্ধারিত মানদণ্ড ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস ১৮৫০:২০১২’ অনুসরণ করে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ওয়ালটন স্মার্ট রেফ্রিজারেটর। এই রেফ্রিজারেটরে থাকছে ব্যাপক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার প্রযুক্তির কম্প্রেসর। ফলে এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে খুবই কম। কম্প্রেসরে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বস্বীকৃত পরিবেশবান্ধব আর৬০০এ রেফ্রিজারেন্ট। নন-ফ্রস্ট হওয়ায় এই ফ্রিজের অভ্যন্তরে অনাকাঙ্ক্ষিত বরফ জমবে না। ফলে ফ্রিজ রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে বাড়তি ঝঞ্জাট পোহাতে হবে না।

আইওটি-বেজড ওই স্মার্ট ফ্রিজে আরো রয়েছে অ্যাডভান্স টেম্পারেচার কন্ট্রোল, টুইন কুলিং, ডোর ওপেনিং অ্যালার্ম, আয়োনাইজার, হিউম্যান ডিটেক্টর, স্পেশাল আইস মেকিং জোন, ময়েশ্চার কন্ট্রোল জোন, ন্যানো হেলথ কেয়ার, এন্টিফাংগাল ডোর গ্যাসকেট ইত্যাদি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধা।

ওয়ালটন ফ্রিজ বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড স্বীকৃত এবং আইএসও সনদপ্রাপ্ত নাসদাত-ইউটিএস (NUSDAT-UTS) ল্যাব থেকে মান যাচাই করে বাজারজাত করা হচ্ছে। মান নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি। যার প্রেক্ষিতে, সর্বোচ্চ গুণগতমানের নিশ্চয়তায় গ্রাহকদের ওয়ালটন ফ্রিজে এক বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি দেয়া হচ্ছে। কম্প্রেসরে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button