লাইফ-স্টাইলস্বাস্থ্য

ঢাকার বায়ুদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে, পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে অনেক আগেই। বেশ কিছু দিন ধরে বায়ুদূষণে বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা বারবার এক নম্বর অবস্থানে থাকছে। এই দূষণ দিন দিন প্রকট হয়ে উঠেছে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

পরিস্থিতিকে অত্যন্ত সংকটাপন্ন উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইটভাটা, নির্মাণকাজ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও আবর্জনা পোড়ানো দূষণের অন্যতম কারণ। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে অসংখ্য মানুষ।

বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শনিবার বিকালে প্রথম অবস্থানে ছিল ঢাকা। সন্ধ্যা ৬টা ৩৪ মিনিটে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) ঢাকার স্কোর ছিল ২১৮। আর তার এক মিনিট আগে ঢাকার স্কোর ছিল ১৮৫। যার অর্থ ঢাকার বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর।

বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংক গত বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের উৎস নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করে। ওই গবেষণায় দেখা যায়, দেশে বায়ু দূষণের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণ কাজ। গত আট বছর ধরে এই তিন উৎস ক্রমেই বাড়ছে।

২০১৩ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে দেশের ইটভাটাগুলোর ওপর একটি জরিপ করা হয়। যেখানে দেশে ইটভাটার সংখ্যা ৪ হাজার ৯৯৫টি বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর ২০১৮ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালিত আরেক জরিপে দেখা যায় ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার ৯০২টি হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৪৮৭ ইটভাটাই ঢাকা বিভাগের মধ্যে গড়ে উঠেছে।

ওই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে মোট যানবাহন ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৭টি। ২০১৮ সালে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৪টি।

চিকিৎসকরা বলছেন, দূষিত বাতাসের কারণে জন্ম নিচ্ছে নতুন নতুন রোগ। বিশেষ করে অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়েছে নগরবাসীর মধ্যে। এতে সবেচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।

এমন পরিস্থিতিতে মুক্তির উপায় নিয়ে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, “রাস্তা-ঘাট খোঁড়াখুড়ি, বিভিন্ন নির্মাণ কাজ শেষের পর বর্জ্যগুলো নিয়ম মাফিক নেয়া হয় না। এর ফলে এগুলো বাতাসে মিশে দূষণ হয়। এসব উৎস আামাদের আগে বন্ধ করতে হবে। যদি নিয়ম মাফিক এসব কাজ করা হয়, তবে বায়ু দূষণ অনেকাংশেই কমে যাবে।”

“এছাড়াও গাড়ি থেকে যে দূষণ হয় সেটাও রোধ করতে হবে। খারাপ ইঞ্জিনের গাড়ি যেন রাস্তায় চলাচল করতে না পারে; সেটা নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালনির বিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।” যোগ করেন তিনি।

আবু নাসের খান আরো বলেন, “ঢাকা থেকে ইটের ভাটা কমাতে হবে এবং ইটভাটায় উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া সেখানে যে নিম্নমানের কয়লা, রাবার, কাঠ ইত্যাদি পোড়ানো হয়, সেটা বন্ধ করতে হবে। এছাড়াও অন্যান্য কলকারখানার বর্জ্য যেন বায়ুদূষণ করতে না পারে সেটার ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’

শতকরা ৫৫ শতাংশ ইটভাটা বায়ুদূষণের পেছনে দায়ী উল্লেখ করে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, “ইটভাটার সনাতন পদ্ধতি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ইটভাটাগুলো আধুনিককরণ করা হলে এবং সনাতন পদ্ধতি বন্ধ করা গেলে ঢাকার বায়ুদূষণ অনেকাংশেই কমে আসবে।”

‘‘পাশাপাশি যানবাহনের কালো ধোঁয়া বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার রাস্তায় এখনো আমরা বিশ বছরের বেশি পুরানো যাত্রীবাহী যানবাহন, ট্রাক দেখতে পাই। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব।’’

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button