বিয়ের ৩৬ দিনের মাথায় স্ত্রীর হাত-পায়ের রগ কর্তন
যৌতুকের দাবিতে রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় বিয়ের ৩৬ দিনের মাথায় নববধূ শিউলি বেগমকে নির্যাতন করে তার হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়ার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছিল। এ সংবাদ প্রকাশের এক দিন পর স্ত্রীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনকারী স্বামী শাহাজাদা মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।গ্রেফতারকৃত শাহজাদা মিয়া পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের মনছুর আলীর ছেলে।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকালে গ্রেফতারকৃত শাহাজাদা মিয়াকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পীরগাছা থানা পুলিশের একটি দল।
গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এসআই রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে পীরগাছা থানা পুলিশের একটি দল উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের নেকমামুদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ অভিযানে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনকারী স্বামী শাহজাদা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের মনছুর আলীর ছেলে শাহজাদা মিয়ার সঙ্গে গত ২০ সেপ্টেম্বর বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ঘগোয়া সরদারপাড়া গ্রামের ফজলুল হকের মেয়ে শিউলি বেগমের। এ সময় ফজলুল হক নগদ ৮৫ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার মেয়ের জামাইকে যৌতুক দেন। এ দিকে, মেয়ের বিয়ের মেহেদীর রং মুছে যেতে না যেতেই জামাতা শাহজাদা মিয়া আরও দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। পরবর্তীতে তার শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে দাবিকৃত টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় নববধূ শিউলি বেগমের ওপর নেমে আসে নির্যাতন।
এক পর্যায়ে গত ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিয়ে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হলে স্বামী শাহজাদা মিয়া শিউলি বেগমকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। এ সময় হত্যার উদ্দেশ্যে তার স্বজনেরা মিলে মধ্যযুগীয় কায়দায় তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেন। এ ঘটনায় প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তারা অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেন। এক পর্যায়ে রাতে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসককে দিয়ে নববধূর পায়ে পাঁচটি ও হাতে ১৫টি সেলাই দিয়ে তাকে বাড়িতে আটক রাখেন।
এ দিকে, সংবাদ পেয়ে মেয়ের মা রহিমা বেগম ও মামী পেয়ারা বেগম ঘটনাস্থলে গেলে শ্বশুর বাড়ির স্বজনেরা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে বাধা দেন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে গত রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকালে নববধূর বাবা ফজলুল হক পীরগাছা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে এসআই রিয়াজুল ইসলাম ও সঙ্গীয় ফোর্সসহ স্বামীর বাড়ি থেকে নববধূকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পীরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে থানা পুলিশকে মেয়ের বাবা ফজলুল হক জানান, মেয়ের বিয়ের ৩৬ দিনের মাথায় যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে।