খেলালিড নিউজ

জিম্বাবুয়েতে শুরু, জিম্বাবুয়েতেই শেষ?

অবসর নিয়ে অনেকটাই দুই মেরুতে অবস্থান করছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবি চেয়েছিল মাশরাফিকে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে বিদায় দিতে। তবে বিসিবির সে চাওয়া আপাতত পূরণ করছেন না মাশরাফি। জাঁকজমকপূর্ণ অবসর তো নয়ই, অবসর নিয়েই এখনো ভাবছেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তার সর্বশেষ বক্তব্যে জানিয়ে দিয়েছেন, জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর জাতীয় দলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অধিনায়ক খুঁজবে তারা। ফলে অনেকটাই নিশ্চিত যে, এ সিরিজেই শেষ হচ্ছে মাশরাফির অধিনায়কত্বের অধ্যায়। এছাড়া অনেকেরই ধারণা অধিনায়কত্ব হারানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণাও দিতে পারেন মাশরাফি। আর যদি তাই হয়, তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই এ ক্রিকেটার খেলছেন ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলে মাশরাফি ক্যারিয়ারের ইতি টানলে তার ক্যারিয়ারের শুরু আর শেষটা মিলবে এক বিন্দুতে। এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল তরুণ মাশরাফির। শুধু টেস্টই নয়, ক্যারিয়ারের অভিষেক ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টিও তিনি খেলেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই।

অভিষেক টেস্টেই ৪ উইকেট শিকার করে নিজেকে চিনিয়েছিলেন মাশরাফি। এরপর একই সফরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বরাবরই বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করা এ পেসার ১৯ বছর ধরে বাংলাদেশের পেস বিভাগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ব্যাট হাতেও দলের প্রয়োজনে ঝড় তুলেছেন তিনি। বারবার ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন, বারবার শঙ্কায় পড়েছে তার ক্যারিয়ার, তবুও মাশরাফি দমে যাননি, ফিরে এসেছেন আরও ভয়ংকরভাবে।

১৯ বছরের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের জার্সিতে মাশরাফি ৩৬টি টেস্ট, ২১৭টি ওয়ানডে ও ৫৪টি টি-টুয়েন্টি খেলেছেন। টেস্টে ৭৮টি, ওয়ানডেতে ২৬৬টি ও টি-টুয়েন্টিতে ৪২টি উইকেট শিকার করেছেন এ বোলার। ব্যাট হাতেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি। টেস্ট ৭৯৭, ওয়ানডেতে ১৭৮৬ ও টি-টুয়েন্টিতে ৩৭৭ রান করার কৃতিত্ব আছে তার।

ক্রিকেটার মাশরাফিকে ইতিহাস যতটা মনে রাখবে, তার চেয়েও বেশি মনে রাখবে অধিনায়ক মাশরাফিকে। এ দেশের ইতিহাসের সেরা অধিনায়কের তকমটা নিজের করে নিয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বেই উত্থান ঘটেছে দেশের ক্রিকেটের। মাশরাফির অধিনায়কত্বে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট দুটিতে যা বাংলাদেশের সেরা অর্জন।এছাড়া তার নেতৃত্বেই তিনটি এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব রয়েছে টাইগারদের। আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতে প্রথমবার বাংলাদেশকে বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের স্বাদ দিয়েছেন মাশরাফি। তার নেতৃত্বে ৮৫টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ; যার মধ্যে ৪৭টি ম্যাচেই জিতেছে টাইগাররা আর হেরেছে মাত্র ৩৬টিতে। আর কোনো অধিনায়কই দেশকে ৫০ ভাগের বেশি ম্যাচ জেতাতে পারেনি।

ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে মুদ্রার বিপরীত পিঠটাও দেখা হয়েছে মাশরাফির। টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন আগেই। খেলছেন শুধুই ওয়ানডে। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিলেও বল হাতে সফলতার মুখ দেখেননি তিনি। এছাড়া বাংলাদেশও বিশ্বকাপে আশানুরূপ ফল পায়নি। এরপরই গুঞ্জন ওঠে, অবসরে যাচ্ছেন মাশরাফি। বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলঙ্কা সিরিজ না খেলায় সে গুঞ্জন আরও তীব্র হয়। এরপর দীর্ঘদিন ছিলেন ক্রিকেটের বাইরে। আবারও ক্রিকেটে ফিরেছেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে। আর সে সময়ই জানিয়েছেন, অবসরের চিন্তা নেই আপাতত, খেলবেন যতদিন সুযোগ পান।

নতুন বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেছেন মাশরাফি। বোর্ড সভাপতি জানিয়েছেন, তারা নতুন অধিনায়ক খুঁজছে। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে এখনই পরিকল্পনা সাজানো শুরু করছেন বলেও জানিয়েছেন পাপন। আর তাই ক্রিকেট পাড়ায় আবারও গুঞ্জন উঠেছে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেই মাশরাফি ইতি টানছেন ১৯ বছরের ক্যারিয়ারের। আর সে গুঞ্জন যদি সত্যি হয়, তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরু হওয়া মাশরাফির ক্যারিয়ার থামবে সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button