সম্পাদকীয়

প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ চিকিৎসায় টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতাল

লেখক: অধ্যাপক ডা. মওদুদ আলমগীর পাভেল:

বিশ্বজুড়ে মহামারীর রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং বিস্তার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও এক অভূতপূর্ব সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। ভাইরাসটির করাল থাবায় দেশে একদিকে যেমন প্রতিনিয়তই করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক তেমনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিলও ক্রমাগত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। যা দেশের বিদ্যমান চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থাকে এক অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। করোনায় আক্রান্ত রোগী বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন হাসপাতালগুলোতে মারাত্মক সেবা সংকট তৈরী হয়েছে ঠিক বিপরীত দিকে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা প্রদান ব্যবস্থাও ব্যাপকহারে সংকুচিত হয়েছে। টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ এন্ড রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালের মাধ্যমে করোনা রোগীদের চিকিৎসা, করোনা প্রতিরোধ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানাবিধ পদক্ষেপ ও কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে বিরাজমান সংকট মোকাবেলায় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে। টিএমএসএস’র নির্বাহি পরিচালক অধ্যাপিকা হোসনে আরা বেগমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে  করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) চিকিৎসার ক্ষেত্রে টিএমএসএস হেলথ সেক্টর উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। মূলত কোভিড-১৯ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে টিএমএসএস গৃহীত কার্যপদ্ধতি, লব্ধ জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা সকলের সামনে তুলে ধরাই আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য।
টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত ১ হাজার শয্যা বিশিষ্ট (অনুমোদিত ৭৫০ শয্যা) টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ্ কমিউনিটি হাসপাতাল বগুড়া ও পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের কোভিড রোগী এবং নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হিসেবে আস্থা অর্জনে সচেষ্ট রয়েছে। কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য অত্র হাসপাতালে মোট ৮টি (৪টি পুরুষ এবং ৪টি মহিলা) ওয়ার্ডের অধীনে স্বতন্ত্র ৪৩টি কেবিনসহ সর্বমোট ১৬০টি শয্যা রয়েছেএ অন্যদিকে উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য কোভিড সাসপেক্ট ওয়ার্ড এবং কোভিড পরবর্তী রোগীদের জন্য কোভিড রিকোভারী ওয়ার্ড রয়েছে। একই সাথে হাসপাতালটির ১৭তলায় ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ ১০ বেডের একটি আইসিইউ ইউনিটও কর্যকর করা হয়েছে।
৭ জুলাই ২০২০ ইং সাল পর্যন্ত হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে মোট ৩৩৬জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। যাদের মধ্যে ২০৯জন রোগী ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং বর্তমানে ৮৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মোট ভর্তিকৃত রোগীর তুলনায় এখন পর্যন্ত সুস্থ্য হবার হার প্রায় ৯৩.৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪জন (৬.৩%) রোগী মারা গিয়েছেন। অপরদিকে, এখন পর্যন্ত মোট ৮জন রোগীকে (২.৬%) ভেন্টিলেটর সাপোর্টের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের শতভাগই ভেন্টিলেটর সাপোর্টের বাইরে এসেছেন এবং একজন ছাড়া বাকী সবাই এখন সুস্থ এবং বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করতে চাই যে, কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুবরণের ৪ঘন্টা পর (কেননা আক্রান্ত ব্যক্তি মারা যাবার ৩ ঘন্টা পরে তার শরীরে আর কোনো ভাইরাস জীবিত থাকেনা) সরকারী প্রশাসন অনুমোদিত কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রটোকল অনুসরণ করে ধর্মীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী মৃতদেহ প্রস্তুত করে (উবধফ ইড়ফু চৎবঢ়ধৎধঃড়ৎু) মৃতদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় বা দাফনের জন্য মৃতদেহ আমাদের এ্যাম্বুলেন্স যোগে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় অক্সিজেন সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা এখানে মোট ১০০জন রোগীর জন্য নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন পয়েন্ট বা সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও রি-ব্রিথিং মাস্ক এবং ভেনচুরি মাস্ক এগুলো ব্যবহার করেও আমরা রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছি। রোগীদের বাড়তি অক্সিজেন প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য ৫টি হাই- ফ্লো অক্সিজেন হিউমিডিফায়ার জেনারেটর ডিভাইস স্থাপন করেছি যেটাকে আজকাল হাই-ফ্লো অক্সিজেন ক্যানুলা বলে সাবই জানে।
একথা সত্য যে, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত প্রমাণিত কোনো ব্যবস্থাপনা নির্র্ধারিত হয়নি। তবু আমরা কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে মূলত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আমাদের নিজস্ব গাইডলাইন অনুসরনণ করে থাকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সকল ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে আমরা শুধুমাত্র সেগুলো ব্যবহার করে আমাদের এখানে ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করছি। এছাড়াও গুরুতর আক্রান্তদের জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ওষুধ যেমন- রেমিডিসিভির, ফেবিপিরাভির ইত্যাদি আমাদের সংগ্রহে রয়েছে। অপরদিকে ৪০ উর্ধ্ব ব্যক্তি অথবা কো-মর্বিডিটি সম্পন্ন ব্যক্তি যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়েবেটিস রয়েছে তাদের রক্ত জমাট প্রতিরোধেও ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়াও ভর্তিকৃত রোগীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য একটি স্বীকৃত প্রটোকল অনুসরণ করা হয় এবং ঈইঈ, উ. উরসবৎ, ঈচক, ঝ. ঋবৎৎবঃরহ প্রভৃতি পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর রোগের ক্যাটাগরী নির্ণয় করার চেষ্টা করা হয় এবং সেই মোতাবেক চিকিৎসা প্রদান করা হয় এবং নিয়মিত মনিটরিং এ রাখা হয়। যেসকল ব্যক্তির করোনা পজিটিভ কিন্তু তারা বাসায় অবস্থান করেই চিকিৎসা নিতে ইচ্ছুক তাদেরকে আমরা টহফবৎ ঝঁৎাবরষষধহপব ঞৎবধঃসবহঃ করি।
এছাড়াও কোভিড চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার উপর আমাদের বেশ কিছু চলমান গবেষণা প্রকল্প রয়েছে যেমন: ইনফেকশন রেট, রোগী ভর্তি ও হাসপাতালে অবস্থান কাল, রোগীর মৃত্যুহার, চিকিৎসা সফলতা, আরোগ্য হার, আইসিইউ স্থানান্তরের হার, বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারীতা প্রভৃতি। অত্র হাসপাতালে প্রায় ৬০জন চিকিৎসক, দেড় শতাধিক নার্স, জঞ-চঈজ খধন-এ ৩২জন স্টাফ এবং দেড় শতাধিক লজিস্টিক সেবা প্রদানকারী জনবল কোভিড আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। যে সকল জনবল অত্র হাসপাতালে সরাসরি কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত একজনও কোভিডে আক্রান্ত হননি। কেননা করোনার চিকিৎসায় নিয়োজিত জনবলসহ সকল পর্যায়ের জনবলকে কতগুলো নিয়ম-কানুন আবশ্যিকভাবে মেনে চলতে হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো- কোনো অবস্থাতেই জোন কনটামিনেট না করা; মানসম্পন্ন প্রোটেক্টিভ গাউন, এন ৯৫ বা সমমানের মাস্ক, আইশিল্ড, ফেস প্রটেক্টর, হেড কভার, সু কভার, গ্লাভস প্রভৃতি সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান করা; সকল স্বাস্থ্যকর্মী তথা চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্ট স্টাফ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক প্রবেশমুখ এবং বহিঃগমনপথ নিশ্চিত করা, পৃথক লিফটের ব্যবস্থা করা, প্রবেশমুখে হাত ধোয়া এবং হাত শুকানোর ব্যবস্থা, জীবাণুনাশক বুথের মাধ্যমে শরীর জীবাণুমুক্ত করা প্রভৃতি ব্যবস্থা উল্লেখযোগও; সর্বোপরী একেবারে শুরু থেকে ঞৎরধমব ঝুংঃবস ফলো করা হচ্ছে যার মাধ্যমে (ফিজিক্যাল, ম্যানপাওয়ার, লজিসটিকস প্রভৃতি তিন স্তরে বিভক্ত) আউটডোর, ইনডোর ও অন্যান্য সার্ভিস প্রদান করা হচ্ছে। ফলে কোভিড ও নন-কোভিড সেবা কার্যক্রমে স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়োজিত করেও সফলতার সাথে পরিচালনা করা হচ্ছে।
আমাদের এই হাসপাতালে আগত রোগী ও দর্শনার্থীদের যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। হাসপাতালে প্রবেশ এবং বহিঃগমনের জন্য স্বতন্ত্র রাস্তা, সম্পূর্ণ হাসপাতালকে কোভিড ও নন-কোভিড জোনে বিভক্ত করা এবং লাল, হলুদ এবং সবুজ রং দ্বারা জোনসমূহ দৃশ্যমান করা, প্রতিটি প্রবেশমুখে জীবাণুমুক্তকরণ বুথ, হাত ধোঁয়া ও শুকানোর ব্যবস্থা করা, শরীরে তাপমাত্রা পরিমাপ করা, কোভিড এবং নন-কোভিড রোগী ও জনসাধারণের জন্য লিফট্সমূহকে পৃথক করা, হাসপাতালের ভিতরে ও বাইরে খোলা জায়গাসমূহে নিয়মিতভাবে জীবাণুনাশক স্প্রে করাসহ জীবাণুমুক্তকরণে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
করোনা রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা, সেবায় নিয়োজিতদের সুরক্ষা প্রভৃতি বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য ৬টি গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। চিকিৎসা প্রদানের প্রতিটি স্তরে গাইডলাইনসমূহ অনুসরণ করা হয়ে থাকে।  উপরে উল্লিখিত প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি টিএমএসএস স্বাস্থ্য সেক্টরের পক্ষ থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষত ভাইরাসটি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে টিএমএসএস হাসপাতালে কর্মরত প্রায় নয় শতাধিক চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট এবং সাপোর্ট ষ্টাফসহ অন্যান্য কর্মীদের এবং মাঠ পর্যায়ের সাব-ক্লিনিকসমূহে কর্মরত তিন শতাধিক কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ‘নভেল করোনাভাইরাস ২০১৯ ডিজিজ কোভিড-১৯ আপডেট’ শীর্ষক তিনটি পৃথক সাইন্টিফিক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। মাঠ পর্যায়েও জন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেক্টরের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় টিএমএসএস’র ৯৬ টি সাব-ক্লিনিক (টিএইচসিসি) ও ৪টি ফিল্ড হাসপাতালের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সংস্থাটির ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার গ্রুপ সদস্যদের মাঝে করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, প্রায় দশ লাখ লিফলেট মুদ্রণ ও বিতরণ করা হয়েছে এবং জন সচেতনতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে এবং আমাদের ফিল্ড টিম অব্যাহতভাবে বাসায় গিয়ে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বাইরে প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হিসেবে আমরা সর্বপ্রথম আরটি-পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে কোভিড-১৯ ভাইরাস পরীক্ষা করার অনুমোদন পাই এবং গত ৩১ মে থেকে আমরা এখানে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শুরু করি। দেশের মধ্যে আমরাই সম্ভবত সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে (মাত্র ৪ ঘন্টার মধ্যে) কোভিড পরীক্ষার ফলাফল প্রদান করতে পারি যেটা বাংলাদেশের আর কোনো পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রদান করা হয় কিনা আমাদের জানা নেই। আমাদের এখানে স্যাম্পল কালেকশন করার জন্য প্রায় ত্রিশজন দক্ষ এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত জনশক্তি রয়েছে। যারা আমাদের নিজস্ব বুথ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ প্রক্রিয়ায় স্যাম্পল কালেকশন করার পাশাপাশি বাসা থেকেও স্যাম্পল কালেকশন করে থাকে। এছাড়াও প্রয়োজন অনুয়ায়ী সরকারি স্যাম্পল কালেকশন প্রক্রিয়াতেও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। গত ৭ জুলাই পর্যন্ত আমরা মোট ৪ হজার ৫ শত ৭৮ জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করেছি। যার মধ্যে ৩৫% (১৫৮৭জন) পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে এবং ৬৬% (২৯৯১জন) নেগেটিভ রোগী পাওয়া গেছে। পজিটিভ রোগীদের মধ্যে পুরুষ ৭৫% আর নারী ২৫% রয়েছেন।
নন-কোভিড অর্থাৎ কোভিড আক্রান্ত নন এমন সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালের বহিঃবিভাগ এবং অন্তঃবিভাগ চালু রয়েছে এবং সকল রোগীকেই বিশেষ করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, পক্ষাঘাত, হাঁপানি-শ্বাসকষ্ট, লিভার ও কিডনির রোগ, গর্ভবতী নারী ও প্রসূতি সেবা ইত্যাদি নিয়মিতভাবে প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন, কিডনী ডায়ালাইসিস, সিসিইউ, ডে-কেয়ার চালু রেখে বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। নন-কোভিড রোগীদের জন্যেও একটি গাইডলাইন প্রস্তুত করা হয়েছে, সেই মোতাবেক তাদের চিকিৎসা প্রদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আপনাদের ব্যবস্থাপনা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে- পূর্ব প্রস্তুতিÑ আকস্মিকতায় বিশৃঙ্খলা না হওয়া; সমন্বয় ও শৃঙ্খলা; আস্থা অর্জন, পারস্পারিক কমিটমেন্ট বা প্রত্যয় সৃষ্টিতে সক্ষমতা; উর্ধ্বতন প্রদত্ত দ্রুত ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা; প্রাতিষ্ঠানিক স্বয়ং সম্পূর্ণতা; তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা; প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্তর ভিত্তিক প্রস্তুতি; বিকল্প ব্যবস্থাপনা; নিশ্চিদ্র সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, স্তর ভিত্তিক দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ; এবং ভিন্নধর্মী প্রণোদনা। আমাদের সেবা পর্যায়ের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে- সুরক্ষা- সুরক্ষা- সুরক্ষা; সুরক্ষা প্রণোদনা; ট্রায়াজ (অগ্রাধিকার ও সুনির্দিষ্টকরণ); সবুজ-হলুদ- লাল, বাস্তবিক ও দৃশ্যমান আক্ষরিক নয়; লাগসই প্রযুক্তি- সেন্ট্রাল লাইন বিকল্প; অক্সিজেন চিকিৎসায় স্তর ভিত্তিক গাইড লাইন ৫-১০লি, ১০-১৫লি,১৫লি তদুর্ধ্ব; আইসিইউ নির্ভরতা হ্রাস; ঝুঁকিপূর্ণ রোগী চিহ্নিতকরণ- বয়স্ক, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট; রোগী মনিটরিং এ বিজ্ঞান ভিত্তিক এপ্রোচ (অক্সিজেন স্যাচুরেশন, ল্যাব পরীক্ষা, সিটি স্ক্যান প্রয়োজন ক্ষেত্রে); এবং মানসিক সেবা। আমাদের কমিউনিকেশন বৈশিষ্টের মধ্যে রয়েছে- ডযধঃং অঢ়ঢ়, তড়ড়স গববঃরহম, ঠরফবড় ঝঁৎাবরষষধহপব, ধহফ ঞৎরধমব ঋষড়পিযধৎঃ.
আপনাদের মাধ্যমে আমাদের এযাবৎ গৃহীত কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতা যদি দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত হাসপাতাল ব্যবস্থাপক, চিকিৎসক, সেবা প্রত্যাশী বা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে এবং তা থেকে যদি কেউ সামান্যতম উপকৃত হয়, তাহলে আমরা আমাদের এই আয়োজনকে সার্থক মনে করবো।
সাধারনের পাশে করোনা যুদ্ধের শেষ দিন পর্যন্ত সামনে থাকার অঙ্গীকার প্রকাশ করে মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ প্রার্থনা করে শেষ করছি।

লেখক : ডা. মোঃ মতিউর রহমান
উপ-নির্বাহী পরিচালক-২,
টিএমএসএস,
বগুড়া।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button