অর্থনীতি

পুঁজিবাজারে আসছে ৪ বিমা কোম্পানি, বাকিদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ঘোষিত সময়ের মধ্যেই পুঁজিবাজারের আসতে চায় চার বিমা কোম্পানি। সেগুলোর একটি হলো জীবন বিমা কোম্পানি। আর বাকি তিনটি সাধারণ বিমা কোম্পানি।

জীবন বিমা কোম্পানি হচ্ছে- সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, সাধারণ বিমা কোম্পানি হল- দেশ জেনারেল, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স এবং ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।

কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের(আইডিআরএ) কাছ থেকে অনুমতিপত্র নিয়েছে।

শিগগিরই কোম্পানিগুলো প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে আবেদনও করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন আইডিআরএ’র সদস্য ড. এম মোশাররফ হোসেন।

তিনি  বলেন, ‘প্রতিটি বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে যারা আসছে না, তারা জরিমানা দিচ্ছে। কিন্তু তারপরও পুঁজিবাজারে আসছে না।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসলে তাদের তারল্য সংকট দূর হবে। কোম্পানিগুলোতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে। বিমা খাতের ইমেজ সংকট দূর হবে। তাই আমরা অর্থমন্ত্রীর দেওয়া ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছি। তাদের উদ্বুদ্ধ করছি।’

আজ ২৭টি বিমা কোম্পানির এমডি-চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান সদস্য এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের(বিএসইসি) প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে আইডিআরএ’র সদস্য গকুল চাঁদ দাস  বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী ঘোষিত সময়ে যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহ দেখাবে না তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।’

২৭টি বিমা কোম্পানিকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। গত ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক এ সংস্থাটি। তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য মাত্র ৪৭ কার্যদিবস সময় রয়েছে। যদিও এ সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্তির আবেদন করতে পারবে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিশোধিত মূলধন, অ্যাকচ্যুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন, করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের শর্ত পরিপালন, ব্যবসায়িকভাবে সন্তোষজনক অবস্থানে থাকা ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে বিতর্কের মুখে থাকার কারণে কোনো কোম্পানিই নির্ধারিত সময়ে পুঁজিবাজারে আসতে পারবে না।

এ অবস্থায় তালিকাভুক্তি ইস্যুতে করণীয় ঠিক করতে আজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। ওই বৈঠকে সময় বাড়ানো, পরিশোধিত মূলধনের শর্ত শিথিলসহ বড় বাধাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আইডিআরএ সূত্র মতে, আইন মেনে পুঁজিবাজারে আসতে না পেরে জরিমানার মুখে থাকা ২৬টি বিমা কোম্পানির মধ্যে ৯টি সাধারণ বিমা কোম্পানি এবং বাকি ১৭টি কোম্পানি জীবন বিমা খাতের। পুঁজিবাজারে আসার পথে কোম্পানিগুলোকে অন্তত পাঁচটি বড় বাধা কাটিয়ে আসতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বাধা পরিশোধিত মূলধনের শর্ত।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তির জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করতে হলে কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা থাকতে হবে। দু-একটি ছাড়া আর কোনো কোম্পানির বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আবেদনে সক্ষমতা নেই।

বাকি কোম্পানিগুলোকে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আবেদন করতে হলেও সেক্ষেত্রে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে। সেই শর্ত পূরণেও হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিগুলো। ওই ২৭ কোম্পানির মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন এখনও ২০ কোটির নিচে রয়েছে। এত কম সময়ে কোম্পানিগুলো কীভাবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের শর্ত পূরণ করতে পারবে, সেটা দায়িত্বশীল সবার চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্যবসা শুরুর তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে আসার শর্ত থাকলেও সাধারণ বিমা কোম্পানি মেঘনা, সাউথ এশিয়া, ইসলামী কমার্শিয়াল, ইউনিয়ন, সেনাকল্যাণ ও শিকদার ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজারে আসতে পারেনি।

অন্যদিকে বায়রা, হোমল্যান্ড, গোল্ডেন, সানফ্লাওয়ার, বেস্ট, চার্টার্ড, এনআরবি গ্লোবাল, প্রোক্টেটিভ ইসলামী, সোনালী, জেনীথ ইসলামী, আলফা ইসলামী, ডায়মন্ড, গার্ডিয়ান, যমুনা, মার্কেন্টাইল, স্বদেশ, ট্রাস্ট ইসলামী ও ভারতীয় কোম্পানি এলআইসি বাংলাদেশও তালিকাভুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button