হকীমপুরী, শাহজাদী, রতন জর্দাসহ দেশের ২২টি প্রতিষ্ঠানের জর্দা, গুল ও খয়েরে বিষাক্ত হেভি কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম পেয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ), যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নিয়মিত সেবনে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার বিএফএসএ’র পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান, সদস্য মাহাবুব কবীর, মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিএফএসএ’র চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, আমরা ২২টি প্রতিষ্ঠানের জর্দা ও গুল পরীক্ষা করেছি। জর্দা, গুল ও খয়েরে নমুনা নিয়ে আমরা ল্যাব টেস্ট করেছি। যার প্রত্যেকটিতে বিষাক্ত হেভি কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম পাওয়া গেছে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থায় যাচ্ছি। প্রাথমিক পর্যায়ে এসব কোম্পানির অনুসন্ধান করব। প্রথমে আমরা তাদের ডেকে সমস্যার কথা জানিয়ে সংশোধন করতে বলা হবে। এরপর যদি তারা সংশোধন না হন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, বাজারে যেসব জর্দা, গুল ও খয়ের বিক্রি হচ্ছে, এর সবই ক্ষতিকর। এগুলো খেলে মানুষ বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। কারণ এসব পণ্য মানুষ সরাসরি খায়। ফলে পাকস্থলী আক্রান্ত হয়। ফলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। এজন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। একই সঙ্গে এসব ক্ষতিকর পণ্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কারণ এসব পণ্যের চাহিদা না কমালে বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, খাদ্যে হেভি কেমিক্যাল লেড নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও জর্দা, খয়ের ও গুলে এসব পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খয়েরে বেশি পরিমাণ হেভি কেমিক্যাল লেড পাওয়া গেছে। গাছের ছাল দিয়ে খয়ের তৈরি করা হলেও ভয়ংকর খবর হল, তা তৈরি হচ্ছে সম্পূর্ণ কেমিক্যাল দিয়ে। কারণ বিভিন্ন জেলায় আমাদের কর্মকর্তারা যেসব অভিযান চালিয়েছেন, সব খয়েরের কারখানায় কাঠের ফার্নিচারে বার্নিশে ব্যবহৃত পদার্থ পাওয়া যায়। অর্থাৎ বার্নিশের উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে খয়ের।
তথ্য পাওয়ার প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বলা হয়, দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ২২টি প্রতিষ্ঠানের জর্দা, খয়ের ও গুল সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৩ প্রতিষ্ঠানের জর্দা, ৬ প্রতিষ্ঠানের খয়ের ও তিন প্রতিষ্ঠানের গুলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যার সবকটিতে হেভি কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়ামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
নমুনা পরীক্ষা করা পণ্যের মধ্যে রয়েছে গিলা খয়ের, তীর মার্কা খয়ের, মালাই খয়ের, অন্তরা খয়ের, কালো পাথর বাল্ক খয়ের, সাদা বাল্ক খয়ের, ইগল গুল, মোস্তফা গুল, শাহজাদা গুল, রতন জর্দা, হকীমপুরী জর্দা, গুরুদেব জর্দা, শাহজাদী জর্দা (নির্মলের), মহিউদ্দিন জর্দা, ঢাকা জর্দা, মকিমপুর জর্দা, শাহী হীরা জর্দা, জাফরানী জর্দা শাহজাদী জর্দা (আলম), বউ শাহজাদী জর্দা এবং চাঁদপুরী জর্দা।