মৃত্যুঞ্জয়ী চারটি নক্ষত্র -হাশিম কিয়াম
তোমার শ্যামল কোমল দিলে আর কতো নির্দয় আঘাত তুমি সইবে
ওগো জননী আমার
হাজার হাজার বছর ধরে তোমাকে রিক্ত ক’রে সমৃদ্ধ
করেছে তাদের লাগামহীন লালসাভরা যত সব জনপদ,
নানা রঙের, নানা জাতের, ভিনদেশী ভিখারিরা
লুণ্ঠন করেছে তোমার অমূল্য সব মণিমাণিক্য
সাজিয়েছে তাদের ভিখারিনী রানীর সারা শরীর আচ্ছা করে
তবুও তো—তুমি হওনি অবনত টিকে আছো তোমার
শির উঁচু ক’রে রেখেছো আগলে সব সন্তানকে অতি আদরে;
অথচ ;
তোমার বুকের মিষ্টি জলের বিষবাষ্পের কালো মেঘ
কেমন ক’রে বারবার তোমার অম্বর ভয়াল গাঢ় অন্ধকারে
নির্দয়ভাবে আবৃত করে নজিরবিহীন নির্মম নির্যাতনে নীহারিকার জ্বলজ্বলে
সব আলো চিরতরে নিভিয়ে দেয়!
একটি ধ্রুব তারার খ’সে পড়ার বেদনাবিধুর নয়নের নোনা পানি শুকাতে না—শুকাতেই
আবারো তোমার অন্তরিক্ষের ধ্রুব তারার চতুর্দিক ফুটে থাকা দীপ্তিমান
চারটি সেরা নক্ষত্রের খসে পড়ার এ—শোক তুমি কেমনে সইবে ওগো জন্মভূমি আমার!
অতন্দ্র চার মহান প্রহরী এ—জাতিকে চওড়া বুক চিতিয়ে
রক্ষা করেছে সব ঝড়—ঝঞ্জা থেকে……
হৃদয়ভরা নির্ভেজাল দেশপ্রেম, অদম্য সাহস আর আগাধ প্রজ্ঞা জাতিকে
জোর কদমে প্রগতির পথে হাঁটতে দিয়েছিলো একগাদা প্রেরণা,
তোমরা ছিলে জাতির স্বপ্নগোলার চারটি মজবুত পাকা বাঁশের খুঁটি
সোনার ধানভরা গোলাটি যে এখন মুখ থুবড়ে প’ড়ে আছে…..
এখন যে জাতির সব সোনার ধান ধুলোভরা উঠোনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো;
নিস্তব্ধ মধরাতে যখন সারা দেশ গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত তখন
নিরাপদ প্রকোষ্ঠে যে নারকীয় তাণ্ডব চলেছিলো
তা—তো পৃথিবীতে অদৃষ্টপূর্ব নির্মম এক হত্যাকাণ্ড
লজ্জিত এ— জাতি, লজ্জিত এ —পৃথিবী
এ—যেন পরাজিত অপশক্তির পরাজয়ের জ্বালা মিটানোর জঘন্য এক খেলা
অপশাসন নিরাপদ আর পাকাপোক্ত করতে
ম্যাকবেথের মতো অবিরত অসংখ্য জঘন্য খুনখারাবিতে
রক্তলাল করেছিলো কুলাঙ্গারের কালো হাত;
ঘুমিয়ে থাকো হে জাতির সেরা সব সন্তান
যে মাটিকে তোমারা বড্ড ভালো বাসতে
সে মাটির বুকে শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকো,
তোমরা আছো আমাদের রক্তঝরা হৃদয়ের একদম গভীরে
তোমাদের অক্ষয় কীর্তি যতো দিন পৃথিবী টিকে
থাকবে ততো দিন অম্লান হয়ে র’য়ে যাবে
অগণিত অনাগত প্রজন্মের তরতাজা স্মৃতিতে-
একগাদ প্রেরণা হয়ে যোগাবে নিরন্তর সাহস আর শক্তি-
কখনো পথ হারাবে না তারা।
( হাশিম কিয়াম, সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ।)