অসম্পাদিত

জীবনের জন্য জীবিকা; জীবিকার নিমিত্তে কার্যক্রম -প্রেক্ষিত টিএমএসএস

বিশেষ প্রতিনিধিঃ দ্বিজাতিতত্ত্ব ইমোশন চেতনায় ১৯৪৭ সালে জন্ম নেওয়া পাকিস্থানের তৎকালীন বঞ্চিত পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬৪ সালে ঠেঙ্গামারা সবুজ সংঘ (টিএসএস), এর পরিবর্তিতরূপ গঠন হয় ১৯৮০ সালে, যার নাম ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস)। ১৯৮০ সালের টিএমএসএস গঠনের পুরোধাই ছিলেন বগুড়া সরকারী মুজিবর রহমান মহিলা কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম। বিজ্ঞান বিভাগে বৃত্তি  নিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা একজন গ্রামীন নারী বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে উন্নয়ন করার আগ্রহের পিছনে অনুসন্ধানে জানা যায়, তার পুরুষ জীবন থেকে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সেবা কার্য করার আগ্রহ বিশেষ করে জীবন রূপান্তরকালে জটিল অস্ত্রোপচার পূর্ব মুহুর্তে তিনি বেঁচে থাকলে মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করবেন, এই শক্ত প্রতিশ্রুতি তিনি বর্ণে বর্ণে প্রতিপালন করতে চান। সরকারী কলেজের লেকচারার হিসেবে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদায় চাকুরীরত থেকে বেসরকারীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে ভূমিকা রাখায় তাকে কয়েকবার আইন আদালতের সম্মুখীন হতে হয়েছে। জেনেছি বিশেষ করে Ex-Bangladesh Leave না নিয়ে ১৯৯৫ সালে গণচীনের রাজধানী বেইজিং ও হোয়াইরোতে বিশ্ব নারী সম্মেলনে যোগদান করায় হোসনে আরা বেগম এর সরকারী চাকুরী নড়বড়ে হয়ে যায়। তৎকালীন জেলা প্রশাসনসহ পদস্থ অনেক কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগমের টিএমএসএস সম্পৃক্ততা মেনে নিতে পারেন নি। সেইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টিকে থেকে এনজিও টিএমএসএস এ তার ভিত্ আরো মজবুত হয়।

কঠোর পরিশ্রমী, সংবেদনশীল, আত্মকেন্দ্রীক ও সংকীর্ণতাবাদী বগুড়াবাসীর মধ্যে কাজ করতে গিয়ে টিএমএসএস কে এ পর্যায়ে আনার ক্ষেত্রে প্রফেসর ড. হোসনে আরা বেগমকে কিরূপ পরিশ্রম করতে হয়েছে, কিভাবে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে, তার একজন হিতাকাঙ্খী হিসেবে আমি নিকট থেকেই তা দেখেছি।

উদ্ভিদ বিদ্যায় উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি গবেষণা, আন্তর্জাতিক অশোকা ফাউন্ডেশনের তত্ত্ববধানে সমাজ উন্নয়নমূলক গবেষণা ইত্যাদি সব গবেষণা ও কাজের মূল গতি মানুষকে নিয়ে। টিএমএসএস বিশ্বাস করে মানুষের জন্য পরিবেশ। অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম পরিচালিত টিএমএসএস পরিবেশ উন্নয়নের জন্য ৪ বার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ১ম পরিবেশ পদক অর্জন করেছে। সমগ্র বাংলাদেশে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে কোটি কোটি বৃক্ষ রোপন করেছে এই টিএমএসএস। নব্বইদশকের প্রথমার্ধে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত স্যার উইলিয়াম বি মাইলাম তদানিন্তন টিএমএসএস ভিজিটে এসে এর উন্নয়ন বিশেষ করে পরিবেশে এর অবদান দেখে অভিভূত হন এবং লিখিত উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকার জীবন এবং জীবিকাকে একীভূত ভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। আমরা লক্ষ্য করেছি, টিএমএসএসও পরিবেশ উন্নয়ন এর মাধ্যমে জীবন রক্ষা এবং জীবিকা এর জন্য পরিবেশকে গ্রহণযোগ্য করতে গিয়ে এক শ্রেণির একচোখা পরিবেশবাদীদের রোষানলে পড়েছে বহুবার। অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম এবং টিএমএসএস এর বিরুদ্ধে নদী দখল, পরিবেশ নষ্টকারী হিসেবে অনেক লেখালেখি, আলোচনা, সমালোচনার অন্ত নেই।

বগুড়ায় দৈনিক পত্রিকাগুলিতে নিম্নোক্ত বিজ্ঞপ্তি দেখলাম।

করতোয়া নদীর পশ্চিম পার্শ্বেই ফুলবাড়ী গ্রামে প্রতিবেদকের নিজ বাসভবনে অবৈধ বালু বিক্রেতাদের রাত দিন ট্রাক চলাচল এর শব্দে ঘুম হারাম অথচ তাদের বিরুদ্ধে কেহ তেমন সোচ্চার নন, এর রহস্য কি? হোসনে আরা বেগমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সমালোচকদের উদ্দেশ্য, চাহিদা পূরণ করতে না পারলেই তারা পরিবেশবাদী ন্যায়পরায়ন, মানবতাবাদী হয়ে যান। আমি নিজেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেছি কাউকে পরিবেশ বা মানব কল্যাণে কাজ করতে দেখিনি। আমি নিজে টিএমএসএস এর প্রতিষ্ঠা কার্যালয়ের পূর্ব পার্শ্বের প্রায় ৮ কিলোমিটার নদী পরিদর্শন করলাম। দেখলাম, করতোয়া নদী প্রমত্তা বাঙালী নদীর মতো প্রায় ৩০০ ফুট প্রশস্ত, নদীতে প্রচুর মাছ। হুইলসহ নানা প্রকার মাছ ধরার জাল, যন্ত্র নিয়ে দৈনিক শত শত মানুষ মাছ ধরছেন। তারা বলছেন, বৃটিশ আমলের মাছ ধরার স্মৃতি এবং কাহিনী বর্তমানে টিএমএসএস এর জন্য সৃষ্টি হয়েছে। নদীতে বহু প্রজাতির মাছের কারণ, টিএমএসএস এর পক্ষ থেকে সরকারী মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসককে আবেদন দিয়েই টিএমএসএস নিজ খরচে মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছে ও পার্শ্ববর্তী ৯টি গ্রামে নিম্নোক্ত লিফলেট বিলি করেছে।

টিএমএসএস এর ভূমি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, করতোয়া নদীর উভয় পার্শ্বে টিএমএসএস এর প্রায় ৪০ একর জমি অবৈধ বালু বিক্রেতাদের আগ্রাসনে চাষের অনুপযুক্ত হলে ২০০৭ সালে জেলা প্রশাসন থেকে বালু/মাটি উত্তোলন করে টিএমএসএস এর নিজস্ব নির্মাণ কাজ এবং ভূমি ভরাট করে ভূমি ব্যবহার করার অনুমোদন আছে। তার ফলশ্রুতিতে ২০১০ সালে টিএমএসএস এর বার্ষিক সাধারণ সভায় ভূমি ভরাট প্রকল্প (খঋচ) অনুমোদন হয়। এ প্রকল্পের দ্বারা যে কাজ হচ্ছে, তাহা যেন পানি উন্নয়ন বোর্ডেরই কাজ,  টিএমএসএস করছে।

টিএমএসএস কে কেহ কেহ ভূমি দস্যু বলে গালি দেয়। পোড় খাওয়া টিএমএসএস এর জনবলগণের অনেকেই বললেন, পত্রিকায় ঘোষণা দেওয়া আছে, টিএমএসএস যদি অন্যায়ভাবে কাহারো ১ শতক জমি দখল বা নষ্ট করে, প্রমান করতে পারলে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়া হবে। টিএমএসএস যদি অবৈধ বালু বিক্রি করে, প্রমান দিতে পারলে প্রতি গাড়ীর জন্য ১ লক্ষ টাকা করে জরিমানা দেওয়া হবে। দৈনিক শতশত ট্রাকে অবৈধ বালু বিক্রি হচ্ছে, এদেরকে কেহ থামানোর উদ্যোগ নেই। তাদের কোন সমালোচনাও নেই। আমার নিজের ক্ষেত্রেই দেখেছি, বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ দিতে গিয়ে বগুড়া  ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। বগুড়াতে ভাল কাজ করা কত কঠিন, বগুড়ায় যথার্থ চেতনা নিয়ে চলা কত বিপদ সংকুল, এসব প্রতিবন্ধকতা, কুপমুন্ডকতা, ধর্মান্ধতা, আত্মকেন্দ্রীকতা কে জয় করে টিএমএসএস এগোচ্ছে। করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্ব নাকাল, টিএমএসএস জনবল প্রায় বেতনহীন অবস্থাতেও কাজ করছে। মানবতা স্টোরের মাধ্যমে দৈনিক ৫০০ এর অধিক রেশন প্যাকেজ বিতরণ করে যাচ্ছে। দূর্লভ ও চ্যালেঞ্জিং করোনা রোগী সনাক্ত করণ নিমিত্তে বায়োসেফটি RT PCR ল্যাব স্থাপন করে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক কোভিড রোগীর সনাক্তকরণ ও কোভিড, নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা করছে। টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভেন্টিলেটরযুক্ত ১০টি আইসিইউ বেড, ১৪ বেডের ডায়ালাইজার ওয়ার্ড, ব্লাড ট্রান্সমিশন বিভাগে প্লাজমা থেরাপী ইত্যাদি বিভিন্ন আধুনিক উপায়ে করোনা ভাইরাস ট্রিটমেন্ট চলছে। ফ্রন্ট ফাইটার ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানগণদের জন্য পিপিই সহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা, জীবন বীমা, চিকিৎসা বীমা, টিএমএসএস এর পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে।

ফ্রন্ট লাইনারস এর জন্য পৃথক পৃথক কোয়ারেন্টাইন সুরম্য ভবনে ও তারকামানের হোস্টেলে বিদ্যমান আছে। জীবনকে রক্ষা করে জীবিকাকে বহুমুখী ও শক্তিশালী করার জন্য টিএমএসএস সব কিছুই করছে। তাই আসুন, অযথা একটি উন্নয়নমুখী প্রতিষ্ঠানের বিরূপ সমালোচনা না করে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে আমরা সবাই তার শরিক হই-এই অপভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে তাকে নির্মূল করি।

সহযোগী সম্পাদক, দৈনিক সংবাদ কনিকা 

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button